জনতার হাত থেকে পুলিশের সহায়তায় জানে বেঁচে গিয়ে আহত শরীর নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছে কুখ্যাত এক ব্যাক্তি দা মজিবর (৫০)।
যাকে এলাকার মানুষ চেনেই নামের আগে ‘দা ‘ বৈশিষ্ট্য শুনে। যার ভয়ে তটস্থ এলাকার সাধারণ মানুষ। তারই এক হাতে স্যালাইন অপর হাতে হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পাশেই বসে স্ত্রী-সন্তান।
তাদেরকে আবার পাহারা দিচ্ছে দুইজন পুলিশ সদস্য। কপালে তিনটি সেলাই। আঘাত রয়েছে শরীরের বাকি অংশেও।
তিনি মূলত উউত্তেজিত জনতার গণধোলাই খেয়েই এখন জায়গা হয়েছে হসাপাতেলের বিছানায়।
গত বুধবার রাতে দুর্গাপুর উপজেলা পৌরশহরের শিবগঞ্জ এলাকায় উত্তেজিত জনতা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে ধরে গণধোলাই দেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে থানায় নিয়ে আসে। এদিকে থানায় আনার পর আবারো অসুস্থতা অনুভব করলে রাতেই তাকে পুনরায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পৌরসভার দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামের মৃত মরুজ আলীর পুত্র এই মজিবুর মিয়া।
পুরো নাম মজিবর মিয়া হলেও সবাই তাকে চিনে দা মজিবর নামেই। কারণ এই নামের পিছনেও রয়েছে ইতিহাস। তরুণ বয়স থেকেই এলাকায় বেশিরভাগ সময়ই দা নিয়ে ঘুরতেন তিনি। মানুষ তার হাতে দা দেখে দেখেই তার নামের সাথে যোগ করেছেন দা শব্দটি । মজিবুর নিজেকে অন্যায়ের প্রতিবাদকারী বলে মানুষকে রামদায়ের ভয় দেখিয়ে নিজেই অন্যায়-অত্যাচার সহ অপরাধমূলক নানা কাজ করে বেড়াতেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তার অত্যাচারে এখন অনেকটাই অতিষ্ঠ দক্ষিণ ভবানীপুর, শিবগঞ্জ সহ আশপাশের এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা। সর্বদাই মানুষকে রামদায়ের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি সহ জমি দখল করে আসছিলো মজিবুর। তার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত সাধারণ পথচারীরাও। শিবগঞ্জ বাজারে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশার স্ট্যান্ডে চালকের কাছ থেকেও নিয়মিত করে আসছিল চাঁদাবাজি।
চাঁদা দিতে না চাইলে ঝগড়া-বিবাদ থেকে শুরু করে মারধরের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। স্থানীয়দের আতঙ্কে রাখাই ছিলো যেনো তার প্রধান উদ্দেশ্য । অনেকেই তার কথাবার্তা সইতে না পেরে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়তেন।
অনেকেই আবার মুখ বুজে সহ্য করে নেন। বুধবার রাতে এমনি ঘটনায় স্থানীয় উউত্তেজিত জনতা তার উপর হামলে পড়ে। একজনের দেখাদেখি আরেকজন মারতে আসেন তাকে। তবে উউত্তেজিত জনতার ভিড়েও স্থানীয় কয়েকজন তাকে মার খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন।
পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন । তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তিনি সোমেশ্বরী নদীতে বালু উত্তোলনের ড্রেজার বসিয়েছেন। রাজধানী শহর ঢাকা সহ ময়মনসিংহ ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা ধোবাউড়ায় ট্রাক ও লড়িতে বালু সাপ্লাই দেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশেই খোলা একটি জায়গায় অটো রাখার রাখার জন্য জায়গা ভাড়া দেন তিনি ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা কয়েকজন জানান, কথায় কথায় মানুষের সাথে ঝগড়া বিবাদ শুরু করে দেন মজিবর। কিছু হলেও না হলেও মানুষকে দায়ের ভয় দেখায়। বিশেষ করে সহজ-সরল অটোচালক ও মানুষদের ঘাড়ে বেশি চেপে বসেন মজিবর। এলাকার প্রতিটি মানুষ তার প্রতি এখন ক্ষিপ্ত। ছোট বড় সবার সাথেই তার সব সময় লেগে থাকে। এই নিয়ে অনেকেই থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন বিভিন্ন সময়ে।
মুজিবরের স্ত্রী হাসিনা বেগম জানান, আমার স্বামী পুরোপুরি নির্দোষ। বাড়ির সামনে অটো রাখার জন্য একটি জায়গা তৈরি করছি। অনেকেই এখানে যাত্রী নামিয়ে অটো রাখেন। এজন্য সবাই ২০ টাকা করে দেয়।
কিন্তু এর মাঝে কয়েকজন টাকা দিতে চায়না। তখন আমার স্বামী তাদের কাছে টাকা চাইতে গেলেই ঝগড়া বিবাদ করে। এই জন্যই হয়তো আজকে একা পেয়ে কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে মারছে।
অভিযুক্ত মুজিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে জানান। তিনি বলেন, আমি সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। যেখানেই অন্যায় সেখানেই আমি প্রতিরোধ গড়ে তুলি। দেন-দরবার থেকে শুরু করে সব জায়গায় সত্য কথা বলি ও প্রতিবাদ করি বলেই মানুষ আমাকে সহ্য করতে পারে না।
অটোর স্ট্যান্ডে অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছে, বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এসে অটোচালকদের কাছে জিম্মি ও অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়। এই নিয়ে সব সময় প্রতিবাদ করি বলে তারা আমার প্রতি ক্ষিপ্ত। ক্ষিপ্তরাই বুধবার সন্ধ্যার পর বাজারে বসে চা খাচ্ছিলাম যখন তখন পিছন থেকে এসে কয়েকজন মিলে আমাকে মারধর করেছে।
এদিকে তার নামের সাথে কেনো দা শব্দটি যুক্ত এমন এক প্রশ্নের জবাবে মজিবুর মিয়া জানান, অনেক আগে থেকেই মানুষ আমাকে দা মজিবর নামেই ডাকে।
আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে তৎকালীন এমপি মরহুম জালাল উদ্দিন তালুকদারের একজন কর্মী ছিলাম তখন তিনি আমার এই নাম দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই মানুষের কাছে এই নামে বেশি পরিচিত। তবে মানুষকে আমি কোন ভয়-ভীতি কিংবা অত্যাচার করি না। সবাই আমার নামে মিথ্যা কথা বলে ।
দুর্গাপুর থানার ওসি শাহ্ নুর এ আলম জানান, প্রতিনিয়তই মানুষ তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় আসে। তার অত্যাচারে এখন মানুষ অনেক অতিষ্ঠ। এলাকায় চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন ধরনের অন্যায় কাজের সাথে জড়িত রয়েছে। বুধবার রাতেও চাঁদাবাজি করতে গিয়েই জনতার কাছে গণধোলাই খেয়েছে। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আগেরও মামলা রয়েছে ।