ধানে উদ্বৃত্ত হাওর অধ্যুষিত জেলা নেত্রকোনা। এ জেলার হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল বুরো ধান। প্রতিবছর হাওরাঞ্চলে বুরোর বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু প্রতি বছরই ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্তই কৃষকরা থাকেন উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলেই সব স্বপ্ন যেনো চোখের সামনেই শেষ হয়ে যায়। এবছরও ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি শিলা বৃষ্টির পরে আবার এক রাতের গরম (হিটশক) হাওয়ায় জেলার ১৪ হাজার হেক্টরের অধিক জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে কেউ কেউ একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন। কিন্তু এর পরেও ফলন ভালো হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আশায় ছিলেন কৃষকরা। সেটিও দ্রুত কাটতে গিয়ে কাঁচাপাকা ধান কাটতে হচ্ছে। যে কারণে দাম ভালো পাচ্ছেন না। বাম্পার ফলনেও লাভের মুখ দেখবেন না তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলায় এবার জেলার মদন মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরী হাওরাঞ্চলে প্রতি বছর বাধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে যাওয়ার ভয় থাকে। গত বছর হাওর থেকে পানি সরতেও অনেক দেরী হয়েছে। যে কারনে ধান রোপনে বেশিরভাগ জমিতে বিলম্ব হয়েছে। এরপর দফায় দফায় বন্যায় চারাগাছ নষ্ট হয়েছে। সব শেষে আবাদ করলেও কিছুটা কাচা রয়েছে ব্রি ২৯ ধান। কিন্তু পাহাড়ে অতি বৃষ্টি ও আগাম বন্যার পূর্বাভাস পেয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে ডুবে যাওয়ার আশংকায় জেলা প্রশাসন এবং কৃষি বিভাগ দ্রুত ধান কাটতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে লক ডাউনে শ্রমিক সংকট দেখা দিলেও কৃষি বিভাগের ভর্তুকিতে দেয়া কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন গুলো নামিয়ে দেয়া হয়েছে হাওরে। পুরোদমে চলছে ধানকাটা মাড়াই।
জেলার মোহনগঞ্জের সবেচেয়ে বড় হাওর ডিঙ্গাপোতা হাওরেই ৪০ টি মেশিন ধান কাটছে। ফলে শ্রমিকের সংখ্যা একেবারেই কম। দিনাজপুর থেকে হাওরে আসা শ্রমিকরা বলছেন মেশিন আসায় তাদের এখন দাম কমে গেছে অনেক। যেখানের ধান নুয়ে পড়েছে মেশিনে কাটা যায় না সেগুলোই কাটানো হচ্ছে। ৫০০ টাকা কাঠা প্রতি। কিন্তু মেশিনে কাটায় সময় বাচাতে পারছেন কৃষকরা।
সেইসাথে একজন শ্রমিকের টাকা দিয়েই কাটার সাথে সাথে মাড়াইয়ের কাজটিও হয়ে যাচ্ছে।জমি থেকেই ধান বিক্রি করে দিতে পারছেন। কিন্তু কাঁচা থাকায় ফরিযারা ওজনে বেশি নিচ্ছে বলে জানালেন অজয় তালুকদার। তিনি বলেন ৮০০ (আটশ) টাকা মণ বিক্রি করছি। পানি আসার ভয় থাকায় এবং কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় দ্রুত কাটতে হচ্ছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমি। হাওরাঞ্চলে ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৪ শত ৯৩ মেট্রিক টন। মেশিন নামনো হয়েছে তিন উপজেলায় ১৩০ টি। শ্রমিক রয়েছে ৮৫০০ জন।
মোহনগঞ্জ কৃষি সম্প্রাসরণ কর্মকর্তা মো. আব্দুশ শাকুর সাদী বলেন, পানি আসার আগেই হাওরের ধান কেটে শেষ করতে পারবে কৃষক। আমরা অন্যান্য উপজেলা থেকেও এসকল মেশিন এনে কাজে লাগিয়েছি। আগামী সপ্তাহেই সকল ধান কাটা সম্পন্ন হয়ে যাবে।