নেত্রকোনার দক্ষিণ বিশিউড়া বরুণা গ্রামে চলছে শোকের মাতম। গ্রামের আব্দুল মজিদের বাড়িতে কান্নার আহাজারিতে যোগ দিতে দলে দলে আসছেন গ্রামের মানুষ। সমবেদনা জানাচ্ছেন শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি। কান্নায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নাদিরার মা জোসনা খাতুন। ছোট বোনের হাতে ছবি নিয়ে কখনো চিৎকার করছেন কখনো গুংড়াচ্ছেন। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের বরুনা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। মা বোন আত্মীয় স্বজনের আর্তনাদে ভারি হয়ে গেছে বাতাস।
নাদিরার মা জানায়, মেয়ের বেড়াতে আসাই কাল হয়েছে। দুই নাতি সহ গত ৩ ডিসেম্বর বাড়ি আসছিলো। সোমবার রাতে ট্রেনকে নিরাপদ মনে করে ঢাকার বাসায় যাচ্ছিল। ৫ মেয়ে এক ছেলে জোসনা খাতুন ও ফজল হকের। ঢাকায় থাকেন দ্বিতীয় মেয়ে নাদিরা। বেড়াতে বাড়ি আসার পর সোমবার রাতের ট্রেনে ঢাকায় বোনকে এগিয়ে দিতে একমাত্র ভাই হাবিবুর গিয়েছিলো। তার কাছেই ছিলো বড় ভাগ্নে ফাহিম। পরে আগুন দেখে ফাহিমকে নিয়ে ঝাপ দেয়ে হাবিবুর। কিন্তু বোনকে আর ছোট ভাগ্নেকে না পেয়ে সেও মরতে চেয়েছিলো। পরে অন্যরা তাকে ফেরায় যে কারনে জানে বেচে যায়।
আব্দুল কাদির মিলন বলেন, তারা তিন ভাই। মেঝো ভাই ১৮ বছর ধরে ঢাকায় কারওয়ান বাজার থাকে। হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করে। গত ২০১১ সনে পূর্বধলা উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের ফজল হকের মেয়ের সাথে তার ভাই মিজানুরের বিয়ে হয়। তাদের বড় ছেলে ফাহিম। ছোট ছেলে ইয়াসিন। তারা ঢাকাতেই থাকে। বাড়ি এসে যাওয়ার পথে আমি নিজেই রাতে ট্রেনে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে শেষ বিদায় দেবো বুঝতে পারিনি বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এদিকে ছোট বোন কামরুন্নাহার রুনা মোবাইলে বোনের ছবি দেখেন আর মুর্ছা যান। গ্রামবাসীসহ সকলেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন জঘন্যতম হত্যাকান্ডের বিচার দাবী করেন।
তারা জানান, ট্রেনকে নিরাপদ ভেবে চলাচল করেও অনিরাপদ ভাবে মরতে হলো। এই দায় থেকে বাচতে হলে সরকারকে এমন হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার করতে হবে। মিজানুরের চাচা অবসর প্রাপ্ত বিবিজি সদস্য এরশাদ আলী বলেন এমন বর্বর হত্যাকান্ড যেন আর কারো বাড়িতে না ঘটে।