রিফাত আহমেদ রাসেল, দুর্গাপুর:
আমরা প্রতিবন্ধী ও উভয় লিঙ্গের অধিকারী। আমাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। আমাদের এই তৃতীয় লিঙ্গের সমাজটাকে কেউ ভালোভাবে দেখাও না এবং ভালোবাসেন না। করোনার এই অবস্থায় না খেয়ে, খানা না পেয়ে ক্ষুদ্র মানুষ ঘরে আমরা ধুঁকে ধুঁকে মরছি। চলমান লকডাউনে কর্মহীন তৃতীয় লিঙ্গের স্বপ্ন করুন আর্তনাদ এইগুলো।
স্বপ্নের মতোই কিরনেও একই অবস্থা। এই মহামারিতে গত ১২ দিন ধরে চলা লকডাউনে বন্ধ রয়েছে সমস্ত দোকানপাট। তার সাথে সাথে পুরোপুরি বন্ধ সমাজের অবহেলিত এই মানুষ আয়ের পথ। এখন কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের জীবন।
রানী, মাহি, বৃষ্টি, শাপলা,পাহাড়ী, সুইটি, দিপালী এরা সবাই তৃতীয় লিঙ্গের সমাজের মানুষ। এই সমাজের মানুষ হওয়াই যেন এদের জন্য অপরাধ। এখনো সমাজে এরা বঞ্চিত, নিপীড়িত ও অসহায় ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে জীবন যুদ্ধ। এদের দেখলেই মানুষ দূরে চলে যায়। তারপরও এরা বেঁচে আছে। কখনো মানুষকে খুশি করে কখনো বা তাদের কাছে হাত পেতে সামান্য অর্থেই কোন রকমই চলছে জীবন। কিন্তু করোনার এই সময়ে পুরোপুরি বন্ধ সবপথ। এখন এরা সবাই গৃহবন্দি।
অবহেলিত সমাজের এই মানুষগুলো নেত্রকোনার দুর্গাপুরের। করোনা চলমান সংকটে থমকে গেছে এদের জীবন। এরা করোনা বোঝে না এরা বোঝে সামান্য কিছু আয়ের অর্থে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা। তারপরও এদের রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে মৃত্যুর ভয়।
এই মানুষগুলোর বর্তমান অবস্থান থেকে কিছুটা পরিত্রাণে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন। তাদের প্রত্যেককে প্রধানমন্ত্রীর মানবতার উপহার তুলে দিয়েছেন ইউএনও।
সামনে কোরবানির ঈদের মাঝেই চাল, ডাল, তেল, মুড়ি সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর এই উপহারে হাসি ফুটেছে সমাজের ঐই মানুষগুলোর মুখে। যেখানে জীবন চলা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সেখানে সামান্য এই সহায়তা বয়ে এনেছে পাহাড় সমান খুশির বার্তা।
সোমবার উপজেলা পরিষদ চত্বরে তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলোর হাতে বিশেষ সহায়তা ও করোনা থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাস্ক বিতরণ করা হয়।
একই দিন করোনা সংকটে কর্মহীন অসহায় মানুষের মাঝেও খাদ্যসহায়তা বিতরণ করা হয়। বর্তমান সরকারের জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩ নাম্বারে কল দিয়ে খাদ্য সহায়তা চাওয়া মানুষগুলোর বাড়ি বাড়ি বিশেষ এই সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন।
মহামারী করোনা প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত গেল দুই মাসে ৪৫০ টি পরিবার ও দুই ধাপে ২৫ প্যাকেট বিশেষ সহায়তা তৃতীয় লিঙ্গের মাঝে প্রদান করা হয়েছে ।
এছাড়াও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত ও বন্যাদুর্গত এক হাজারেরও বেশি পরিবারের মাঝে প্যাকেটজাত শুকনা খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে ।
তৃতীয় লিঙ্গের স্বপ্ন জানান, আমরা যারা তৃতীয় লিঙ্গের সমাজে বাস করি সবাই আমাদের ভিন্ন চোখে দেখে। সব সময় আমাদের থেকে দূরে থাকে। আমাদের একেবারেই পছন্দ করেনা। কিন্তু আমারও তো মানুষ আমরাতো এই সমাজের বাসিন্দা। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এভাবে বানিয়েছেন। এখন করোনা মহামারী চলছে। কিন্তু আমাদেরও তো চলতে হবে। না খেতে পেয়ে আমরা ধুঁকে ধুঁকে মরছি। আমাদের এই কষ্ট দেখে ইউএনও স্যার আমাদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। আমরা এর জন্য খুবই কৃতজ্ঞ। আমাদের এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব উল আহসান জানান, করোনার এই কঠিন সময়ে যারা পেশা হারিয়েছেন আমরা তাদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবতার উপহার পৌঁছে দিচ্ছে। আজ আমরা তৃতীয় লিঙ্গের সমাজের মানুষগুলোর মাঝে এই উপহার তুলে দিয়েছি। এছাড়াও যারা ৩৩৩ কল করে খাদ্যসহায়তা চাচ্ছেন আমরা তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা পৌছে দিচ্ছি। যে যেভাবে সাহায্য চাচ্ছেন আমরা সবার মাঝে সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করছি। যেহেতু এখন বর্ষাকাল চলছে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত ও বন্যাদুর্গত মানুষগুলোর কাছেও ছুটে যাচ্ছি।
তিনি আরো জানান, করোনা মহামারী শুরু থেকেই আমরা খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছি যারা কর্ম হারিয়েছেন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রয়েছেন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে আমাদের এই খাদ্য সহায়তা, নগদ অর্থ ও চাউল বিতরণ চলছে। আমরা ঈদকে সামনে রেখে বরাদ্দ পেয়েছি ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই বরাদ্দ চলে গেছে। অচিরেই আমরা এই গুলো দেয়া শুরু করবো ।