“আমরা এমন একটি পৃথিবী চাই যেখানে নারী, শিশু ও মেয়েরা কোনরকম ভয় ছাড়া থাকতে পারবে” (ইউনিসেফ)
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষা জন্যে আত্মরক্ষার কৌশল প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলছে নেত্রকোনা জেলায়।
ইউনিসেফের সার্বিক সহযোগিতায এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১২ টি সিটি কর্পোরেশন এবং ২৫ টি জেলায় চলছে আত্ম সুরক্ষার কৌশল প্রশিক্ষণ।
আত্ম সুরক্ষা কর্মসূচির প্রশিক্ষণ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে সুবর্ণরেখা। পহেলা আগস্ট থেকে খুলনা বিভাগে শুরু হওয়া আমাদের আত্ম সুরক্ষার কৌশল প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিভাগে কাজ করছে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের এক লক্ষ শিশুকে আত্ম সুরক্ষা কৌশল প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসবে।
আজ নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে আত্ম সুরক্ষা কৌশলের কর্মসূচি ট্রেনিং সেশান চলছে। ইতিমধ্যে নেত্রকোনার প্রায় শিশু এবং কিশোর-কিশোরী কে আত্ম সুরক্ষার কৌশল শিখিয়েছে ইউনিসেফের আত্ম সুরক্ষা কৌশল কর্মসূচি (সেল্ফ ডিফেন্স প্রজেক্ট)। একজন নারী এবং একজন পুরুষ অভিজ্ঞ ট্রেনের দ্বারা এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে নেত্রকোনা জেলায়।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এবং ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা সুবর্ণরেখা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৫০ হাজারের উপরে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের আত্ম সুরক্ষার কৌশল শিখিয়েছে। আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি একেকটি জায়গায় চার দিন করে হয়ে থাকে। যেখানে ১০০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন।
আত্ম সুরক্ষা কৌশল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য এবং নারী ও শিশুদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। আত্ম সুরক্ষা কৌশল প্রশিক্ষণে ছয় থেকে আটারো বছর বয়স্ক ৮০ শতাংশ মেয়ে শিশু, ১৫ শতাংশ ছেলে শিশু এবং ৫ শতাংশ চিল্ড্রেন উইথ ডিজেবিলিটি ( CwD) অংশগ্রহণ করেন । আজ পটুয়াখালী কাঠপট্টি মাঠে আমাদের এই আত্ম সুরক্ষা কৌশলের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যেখানে একজন অভিজ্ঞ ট্রেইনার আত্ম সুরক্ষার কৌশল শেখাচ্ছে এবং ইউনিসেফ চাইল্ড প্রটেকশন কমিউনিটি মবিলাইজার, নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস সচেতনতামূলক কাজে শিশু থেকে শুরু করে চাইল্ড প্রটেকশন কমিউনিটি মোবিলাইজার পিতা-মাতাদের সচেতন করছেন।
ইতিমধ্যে আত্মসুরক্ষা কৌশল কর্মসূচি অনুষ্ঠিত প্রত্যেকটি জায়গায় সারা ফেলেছে। কমিউনিটি পিতা মাতা এবং নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিগণ আত্মসুরক্ষা কৌশল কর্মসূচিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আত্ম সুরক্ষা কৌশল কর্মসূচি বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও নারীদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিভাগের বিভিন্ন জায়গার প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চল থেকে শুরু করে মহানগরীর বস্তি এবং ইউনিসেফ নির্ধারিত স্পেশাল হাবে কাজ করছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং কিছু বিয়ে বন্ধ করতে কাজ করছি। আত্মসুরক্ষা কৌশল কর্মসূচি ইতিমধ্যেই সারা বাংলাদেশে ৪৫ হাজার শিশুকে আত্ম সুরক্ষা কৌশল প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আমরা আশা করছি আমাদের এই আত্ম সুরক্ষা কৌশল কর্মসূচি বাংলাদেশ একটি মাইলফলক তৈরি করবে।
প্রত্যেকটি মানুষের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, প্রত্যেকটি মানুষ ভিন্ন রকম হতে পারে। সুতরাং ছেলে মেয়ে ও প্রতিবন্ধী শিশু এই ভিন্নতারি অংশ। আমরা চাই প্রত্যেকটি শিশু ও নারীর জন্য তাদের উপযোগী পৃথিবী গড়ে তোলা। প্রতিটি শিশুর একটি নিরাপদ ও ভয়হীন পরিবেশে বেঁড়ে উঠার অধিকার রয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে একজন নারী তার জীবদ্দশায় সহিংসতার শিকার হন।
সুতরাং শিশুদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেয়া শিশু অধিকারের পরিপন্থী এবং মানবাধিকার লংঘন। এইসব নেতিবাচক দিকগুলোকে আমাদের অবশ্যই প্রগতিশীল উপলব্ধি নিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
সেলফ ডিফেন্স প্রজেক্টের কমিউনিকেশন অফিসার মিটুন শর্মা বলেন ”সহিংসতা, শোষণ, নির্যাতন ও অবহেলা থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখা আমাদের প্রত্যেকটি নাগরিকের দায়িত্ব। প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে 9 জন শিশুই তাদের মা-বাবা এবং শিক্ষক সহ সেবা দানকারীদের দ্বারা শারীরিক বা মানসিক আগ্রাসনের শিকার হন । ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৭ শতাংশ শিশু কোন না কোন ধরনের শিশুশ্রমের সাথে যুক্ত। আমরা এইসব নেতিবাচক দিকগুলোকে পৃথিবীতে কেউ মুছে ফেলতে চাই। সবাইকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে চাই। সকল নারী এবং শিশুর স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করা এবং নারী ও শিশুর জন্য নিরাপদ পৃথিবী তৈরি করা আত্ম সুরক্ষা কৌশল কর্মসূচির উদ্দেশ্য।
মিটুন শর্মা আরও বলেন, “পৃথিবী অনেক এগিয়ে গিয়েছে। নারীদের জন্য পৃথিবী এখনো সহিংস ও বৈষম্যমূলক। বাংলাদেশের ৩৮ মিলিয়ন মেয়ে শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ১৩ মিলিয়ন মেয়ে শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ১৫ বছর বয়সের আগেই। এমনকি এর মধ্যে প্রায় ৫ জন মেয়ে ১৮ বছরের আগেই সন্তানের জন্ম দেন এবং ১০ জনের মধ্যে চারজন ২০ বছরের আগেই সন্তানের জন্ম দেন। আমাদের দেশে বাল্যবিবাহের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি গ্রামীণ এলাকায় এবং দরিদ্র পরিবার গুলোকে সবচেয়ে বেশি। ইউনিসেফ বাংলাদেশের পরিসংখ্যান। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আইন থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে বাল্যবিবাহের হার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। ২৪ বছর বয়সী বাংলাদেশী নারীর অর্ধেকেরও বেশি তাদের ১৮ তম ওকে জন্মদিনের আগেই বিয়ে হয়ে যায়।
নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, “সকল নেতিবাচক দিকগুলো আমাদের এই পৃথিবী থেকে নির্মূল করার লক্ষ্যে ইউনিসেফ কাজ করে যাচ্ছে। আর তারই এই ধারাবাহিকতায় S4D এর আওতায় অন্তর্ভুক্ত আত্ম সুরক্ষার কৌশল কর্মসূচি। সুবর্ণরেখা বাংলাদেশের ২৪টি জেলা এবং ১২ টি সিটি কর্পোরেশনের মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষা করা। সকল প্রকার সহিংসতা ও শোষণ বন্ধ করা শিশুর সুরক্ষা ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য।
আজকের এই ট্রেনিংয়ে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিকেশন অফিসার মিটুন শর্মা, চাইল্ড প্রোডাকশন কমিউনিটি মবিলাইজার নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস, বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর পার্থপ্রতিম