এলাকাবাসীর উন্নয়নে করা সেতু এখন গলার কাঁটা। নির্মাণের ৯ বছরেই অকার্যকর হয়ে পড়েছে ধনাইখালি নদীর উপর প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত নেত্রকোনা বারহাট্টা দুই উপজেলার সংযোগ সেতুটি।
ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে নিচু করে নির্মাণের ফলে নৌকার ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পিলার। সর্বনিন্ম ৫০ বছর মেয়াদ কাল থাকার কথা থাকলেও ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়ায় গত দেড় বছর পূর্বে সেতুর ভেতরে ইটের প্রাচীর দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যান চলাচল। বাস্তবাসয়নকারী প্রতিষ্ঠান এলজিইডির অভিযোগ ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে অনিয়মের ফলাফল এটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার নেত্রকোনা ২ সংসদীয় আসনের দুই উপজেলা সদর ও বারহাট্টা। এই দুটি উপজেলাকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে এবং সহজে কম সময়ে দুই উপজেলা ছাড়াও মোহনগঞ্জ উপজেলায় যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে খরস্রোতা ধনাইখালি নদীতে নির্মিত হয় সেতুটি। সাহতা-গোপালপুর গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর ওপর ৯০ মিটার দৈঘ্য ৭.৩ মিটার প্রস্থের সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
২০১১ সনে এনটিটিএমএআর (জেবি) নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করলেও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে ২০১৪ সনে শেষ করে। এরপর যানবাহন চালাচল শুরু হলেও গত ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বালু বাহী ভলগেটের ধাক্কায় সেতুটি চারটি পিলার সহ গার্ডার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে এলজিইডি সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষনা করে সেতুর ওপর দিয়ে যাতে ভারী যান চলাচল করতে না পারে সেজন্য সেতুর কয়েকটি জায়গায় ইটের গাঁথুনি দিয়ে প্রাচির দেয়।
তবে সিএনজিসহ ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল ঠিকই করছে।
ভুক্তভোগী স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিত সেতুটির উচ্চতা কম থাকায় নৌকার ধাক্কায় সেতুর গার্ডারসহ চারটি পিলার ক্ষতি গ্রস্থ হয়। নির্মাণের সময় উচ্চতা ও অনিয়ম নিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন কর্মসূচী পলন করলেও গুরুত্ব দেয়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ও ঠিকাদার।
উল্টো তৎকালীন এমপির মদদ পুষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা ঠিকাদার গাজী মোজাম্মেল হোসেন টুকু এবং অমিত সাহা পুলিশ দিয়ে স্থানীয়দের হয়রানী করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ষাটোর্ধ বয়সী গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তি মো. সাইফুল ইসলাম। তিনিসহ সাব্বির আহমেদ, মামুন মিয়া, অলক সরকার, আলামিন হোসেনসহ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জরো হয়ে বলেন, আমরা গ্রামবাসী বারবার বলেছি করার সময়।
শুধু অপরিল্পিতই নয়, অনিয়ম করে সেতুটি করেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন এখানকার লোকজন। এই সেতু এখানকার মানুষের কোন কাজেই আসেনি। উল্টো নৌ চলাচল বিঘ্নিত হয়ে উপরের নীচের সবাই ঝুঁকিতে। কখন জানি ভেঙ্গে পড়ে। এতে নষ্ট হয়েছে রাষ্ট্রীয় টাকা। বারহাট্রা থেকে মালামাল আনতে আরও ১০ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হয় বলে জানায় মুস্তিাফিজ।
এদিকে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, তৎকালীন এমপি মন্ত্রীর যোগশাজশে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলজিইডি’র কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে হুমকি ধমকি ও লাঞ্চিত করে নির্মাণ করেছে এই সেতু। ফলে এমনটি হয়েছে জানালেন নির্বাহী প্রকৌশলী। আমি আসার পর গিয়ে দেখি এর করুণ অবস্থা। যা শুনলাম তাতে ক্ষমতার অপব্যাবহারের পরিস্থিতিই শুনেছি। এখানে সবাই চাকরি করতে আসে। মার খেতে নয়। এমন অবস্থায় কারো সাধ্য নেই তাদের বিরুদ্ধে যেতে।
মিনিমাম ৫০ বছর স্থায়ীত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে এই দুর্ভোগ। কিছু করার নাাই। চাকরি করতে আসা ব্যাক্তিরা ভয় না পেয়ে কি করবে। তবে এটিকে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে নতুন করে কারার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলেও আশ্বাস দিয়ে বলেন এটির নথিপত্রও নেই।
নেত্রকোনা-২ সংসদীয় আসনে (সদর-বারহাট্টা) মোট জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫৩ হাজার ২৩৪ জন। তারমধ্যে সদর ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৮৫ ও বারহাট্টায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৪৯ জন। সদরে ১২ টি ও বারহাট্টায় ৭ টি ইউনিয়ন।