নেত্রকোনার এল এ শাখার সার্ভেয়ার কেশব লাল দেব কক্সবাজার দুদকের কাছে আটকের ঘটনায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছে। তিনি গত ২২ জানুয়ারী (শুক্রবার) সাপ্তাহিক ছুটিতে নেত্রকোনা ত্যাগ করেছিলেন। এরপর থেকে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত ২০ কার্যদিবস নেত্রকোনা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে জেলা ভূমি কর্মকর্তা (এলএ শাখা) মাহমুদা আক্তার জানান, কোন ছুটি নেননি তিনি। এমনকি তার ফোনেও তাকে যোগাযোগ করে পাওয়া যাচ্ছে না। পরবের্তীতে কক্সবাজার স্থানীয় একটি পত্রিকা মারফত তিনি জানতে পারেন শনিবার (২৩ জানুয়ারী) দুদকের কাছে আটক হয়েছেন সার্ভেয়ার কেশব লাল দেব। এছাড়া আর কোন খবর তিনি পাননি।
এ ব্যাপারে কথা বললে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান আটকের কারণে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কক্সবাজার আটকের পর থেকেই তাকে বরখাস্ত রাখা হয়েছে। তিনি শুধু একটি ভাতা তুলতে পারবেন।
এদিকে কক্সবাজার ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কেশব লাল দাস সাবেক কক্সবাজার এলএ শাখার সার্ভেয়ার ছিলেন। পরে নেত্রকোনা জেলা সদরে গত বছরের ৪ অক্টোবর যোগ দেন জেলার মদন উপজেলা থেকে। তার বর্তমান ঠিকানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের টিনেসেট বিল্ডিং উত্তর বাড়ী। পৈত্রিক ও স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা জেলার দ্বেবিদার থানার কোরপাই জাফরপুর গ্রাম। পিতার নাম কাশী নাথ দেব। গোপন সূত্রের মাধ্যমে গত ২৩ জানুয়ারী অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা র্কাযালয়-২-এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে।
দুদকের একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন কৌশলে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি নজরে আসার পর দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধানে মোহাম্মদ ওয়াসিম নামের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এক সার্ভেয়ারকে নগদ টাকাসহ আটক করে। তার তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই মো. সেলিম উল্লাহ, ৩ আগস্ট মোহাম্মদ কামরুদ্দিন ও সালাহ উদ্দিন নামের তিন দালালকে আটক করে দুদক। আটককৃতদের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে প্রায় দেড়’শ দালালের নাম ওঠে আসে।
যারা প্রত্যেকেই ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের দালাল হিসেবে চিহ্নিত ও প্রতিষ্ঠিত। এদের প্ররোচনায় এবং সার্বিক সহযোগিতায় এবং অবৈধ ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে সার্ভেয়ার কেশব লাল দেব, কানুনগো ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মিলে কয়েক কোটি টাকা অবৈধ ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে একজনের টাকা অন্যজনকে দিয়ে দেয়।
ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমদের অধীনে যে সকল ক্ষতিপূরণের মামলা ছিল সব কয়টি ক্ষতিপূরণ নিয়ন্ত্রন করতেন সার্ভেয়ার কেশব লাল দেব।
দালাল মুহিব উল্লাহ ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ নিজেই এখানে অন্য কোন দালাল বা সার্ভেয়ার বা কানুনগোকে তারা হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দিতেন না। আসামী মুহিব উল্লাহ এর নামীয় ওয়ান ব্যাংক কক্সবাজার শাখা হতে গত ১২/০২/২০১৯ ইং তারিখ Midland Bank Ghulsan শাখায় ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার আসামী কেশব লাল দেব নিজের ও তার স্ত্রী মুক্তা রানী দাশের একাউন্ট এ শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক মতিঝিল শাখায় এই মুহিব উল্লাহ এর একাউন্ট হতে গত ০৯/০৫/২০১৯ ইং তারিখ ১,০০,০০০/-+ ১,০০,০০০/-টাকা = ২,০০,০০০.০০ (দুই লক্ষ টাকা) ঘুষ বাবদ জমা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, কেশব লাল দেবের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন।