আলপনা বেগম
হেলাল হাফিজকে নেত্রকোনার মনে হয় না আমার কাছে। মনে হয় হেলাল হাফিজের এই নেত্রকোনা। হেলাল হাফিজের মগড়া। এমন নানা কথা। আমি গভীর ভাবে কবির কবিতাকে আলিঙ্গণ করেছি। কবিতার ভেতরে দ্রোহ আর ভালোবাসা একসাথে একভাবে গেঁেথ দিয়েছেন। জন্মভূমিকে ভালোবাসা, শুধু মুখে নয়, প্রকাশ পেয়েছে কবির কাব্যের অনেক বাক্যে। কবির যাপিত জীবনের অভিমানে। ভালোবাসার বহি:প্রকাশ সবার এক রকম হয় না। হয়তো সবটা বুঝতে পারিনি আবার হয়তো পেরেছিও।
সব মিলিয়ে হেলাল হাফিজ একজন নেত্রকোনার সম্পদ তথা সারা বাংলাদেশের সম্পদ। কবির কবিতাকে ভুলে গেলেও মানুষ ভুলবে না নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়তে উচ্চারিত সে দুটো লাইন।
‘এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার, এখন যৌনব যার মিছিলে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার’ এমন কথা যে কথা মানুষের যৌবনে আষ্টেপৃষ্টে গাঁথা। এর থেকে প্রতিটি মানুষ আলাদা হতে পারবে না চাইলেও। যতদিন পৃথিবী থাকবে। যতদিন মানুষ থাকবে। কারণ প্রতিটি মানুষের জীবনেই যৌবন আসবে, যৌবন যাবে।
আর এই যৌবনের জন্ম দিয়েছেন কবি হেলাল হাফিজ। শুধু কি যৌবন ? জন্ম দিয়েছেন কি করে কষ্ট পেতে হয়। কি করে কষ্ট ফেরি করতে হয়। যেগুলো নিত্য নৈমিত্য মানুষের জীবনে। সুতরাং বলাই যায় হেলাল হাফিজ কোনদিনই হারাবার নয়। আর তাই অন্য যে কোন কবির চেয়ে হেলাল হাফিজ আলাদা। অনেক অনেক খ্যাতিমান কবির চেয়েও গুণে অনেক বড়।
আর এ জন্যই হেলাল হাফিজের এই অ¤øানকে এই জেলার মানুষ আষ্টেপিষ্টে বেঁধে রাখতে পারে চাইলেই। তবে সবার চাইতে হবে।
যদিও আমাদের নেত্রকোনাবাসীর মাঝে তেমন একটা আগ্রহ হেলাল হাফিজকে নিয়ে লক্ষ্য করা যায়নি বলে আমার মনে হয়েছে। এর জন্য দুটি কারণ মনে হযেছে। একটি হচ্ছে হয়তো বুঝতেই পারেনি মানুষ হেলাল হাফিজকে। আরেকটি হচ্ছে বুঝে যাওযার কারেণ হিংসে করে। এমন আরও বেশ কটি কারণ লক্ষ্য হয়েছে আমার কাছে এই দীর্ঘ কয়েক বছরে। হেলাল হাফিজের ব্যক্তিত্ব অনেকের কাছে হিংসার আরও একটি বড় কারণ।
এমন প্রেমিক পুরুষ আর ক’জনাই বা হতে পারে। এমন করে প্রেম নিয়ে ক’জনাই বা কষ্ট পেতে পারে। এমন করে ক’জনাই বা নষ্ট হতে পারে। এমন করে ক’জনাই বা মানুষের মনের, মুখের, হৃদয়ের ভাষা অবলীলায় বলে দিতে পারে?
তবে নতুন প্রজন্মের কাছে হেলাল হাফিজ নবরূপে উদ্ভাসিত। তারা ভাবে হেলাল হাফিজের যৌবন নিজেদের মাঝে। তাদের ভেতরে স্পর্শ করে দ্রোহ, প্রেম, দুঃখ, বেদনা এমনকি ফেরিওলার কষ্টগুলো।
তাই কবিকে নিজেদের মধ্যে জিইয়ে রাখতে নেত্রকোনায় কবির বিচরণের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কবির একটি ভাস্কর্য থাকা জরুরি বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। কেননা কবির কৈশোর যৌবন এখানেই কেটেছে। দত্ত স্কুলে কবির নামে একটি চত্বর প্রস্তাব করেছিলাম। যে মাঠে খেলে খেলে পাঠের ভেতর ডুবে যেতেন কবি। হতে পারতো স্কুলে একটি হেলাল হাফিজ লাইব্রেরি। কবি হেলাল হাফিজ চত্বর মানেই একেবারে নতুনের মাঝে এক উদ্দীপনার গান বেজে উঠবে। শিশুকাল থেকেই চিনতে শুরু করবে কবির যুদ্ধে পাঠানোর গল্প নায়ককে।
নেত্রকোনা সরকারি কলেজেও একটি চত্বর হতে পারে অনায়াসে। হতে পারে একটি ভাস্কর্য্য। হতে পারে কবির নামেই একটি আধুনিক লাইব্রেরি। যেখানে কবিতা পাঠের আসর হবে। হবে কবিদের মিলন মেলা। এমন একজন কবিকে ঘিরে গড়ে উঠবে পাঠচক্র। হবে কবিতার কর্মশালা। দেশ থেকে দেশান্তরে কবিতারা উড়ে বেড়াবে। নতুনদের ভেতরে জাগ্রত হবে কবিতার মধ্য দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের ধারা। পাঠমুখী হবে আবারো মানুষ।
কারণ আমি দেখেছি কবিতা পছন্দ না করলেও হেলাল হাফিজের অনেক অকবি ভক্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে কবিতা বুঝেওনা এমন মানব মানবি আছেন। কিন্তু তারা কবি হেলাল হাফিজের যুদ্ধে যাওয়ার স্টাইলটাকে ভালোবাসেন।
আর এ কারণেই কবি হেলাল হাফিজের একটি লাইব্রেরি হতে পারে একটি পাঠশালা। হতে পারে একটি আগ্নেয়গিরি।
লেখক
প্রতিষ্ঠাতা, হিমু পাঠক আড্ডা, নেত্রকোনা।
উল্লেখ্য, কবিকে নিয়ে ভাবনা একটি কাগজে গত ২০২২ সনে লিখা।