সোহান আহমেদ:
প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই নেত্রকোনার কলমাকান্দা সীমান্তবর্তী মহাদেও নদ থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকিতে তীরবর্তী কয়েক শতাধিক আদিবাসি পরিবার। ড্রেজার মেশিন ও অসংখ্য ট্রাক-লড়ি চলাচলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। অতিষ্ঠ আদিবাসীসহ সকল শ্রেণীর মানুষ। তবে পাথর উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে প্রয়োজনে ইজারা বাতিল করা হবে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দার সবকটি ইউনিয়ন। এরমাঝে রংছাতি অন্যতম। সীমান্তে ঘেষা সন্ন্যাসী পাড়া, পাতলা বন, বড়ুয়াকোনা, এলাকায় বয়ে যাওয়া মহাদেও নদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। দীর্ঘদিন ধরেই নদটীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করছেন অসংখ্য আদিবাসী পরিবার। কিন্তু নদের একটি অংশে শুধুমাত্র বালু উত্তোলনে ইজারা দেয়া হলেও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ড্রেজার মেশিনে অবাধে তুলা হচ্ছে পাথর। পরিবহনে ব্যবহার করছে অসংখ্য ট্রাক ও লড়ি। ফলে দুর্ঘটনার পাশাপাশি শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ এখানকার জনজীবন। নষ্ট হয়েছে গ্রামীণ সড়ক। এমতাবস্থায় প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও শব্দ দূষণের প্রতিবাদ করলেও উল্টো প্রভাবশালীদের হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন আদিবাসীসহ স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী রংছাতি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওমীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক তাহেরা খাতুন জানান, তিনি গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে আদালতে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতি পুরনের মামলা করে ছিলেন। এরইমধ্যে পাথর উত্তোলনে হাইকোর্টে নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়েছে। তবও রাতদিন ড্রেজার মেশিনের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এর প্রতিবাদ করছে স্থানীয় অদিবাসীরা।এতে একমত পোষন করায় গত সপ্তাহে ডায়ারকান্দা বাজারে আমাদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে বালু পাথর ব্যবসায়ীরা। এ সময় দোকান ঘরের মালামাল লুট করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী ছবিসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল আগুনে পুরিয়ে দিয়েছে। আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো ঘটনাস্থলে পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেনী কর্মকর্তারা উপস্থিত থকলেও কেউ বাধা দেয়নি। পরবর্তীতে মামলা করতে চাইলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।
এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে আমার সন্তানসহ স্বজনরা। প্রভাবশালীদের হুমকি ধুমকি থেকে বাঁচতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আর্কষন করছি। এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নাম ভাঙিয়ে যুবলীগ নেতা সুজন বিশ^াসের নেতৃত্বে ইজারাকৃত জায়গার তিন কিলোমিটার দূরত্বে পাতলাবন ও সন্ন্যাসী পাড়ায় পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে বেশকজনের কর্মসংস্থান হয়েছে দাবি করেন তিনি। যদিও এতে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র ভাঙ্গন। ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন আদিবাসীরা।
এদিকে অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে প্রয়োজনে ইজারা বাতিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি জানান, চলতি বছর ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় মহাদেও নদের ওমরগাঁও, হাসানোয়াগাও ও বিশিউতা মৌজায় চাঁন মিয়া নামে এক ব্যাক্তিকে ৩৫ দশমিক ১৫ একর জায়গায় বালুমহাল ইজারা দিয়েছে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন। কিন্তু ইজারাকৃত জায়গা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বালু পাথর উত্তোন বন্ধে এ পর্যন্ত বেশ কিছু ড্রেজার মেসিন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। শুধুমাত্র নির্ধারিত স্থানেই বালু উত্তোলন করবেন সংস্লিষ্টরা। নজরদারি বাড়াবে প্রশাসন। এমনটাই প্রত্যাশা আদিবাসীসহ স্থানীয়দের।