নেত্রকোনা সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মনাং গ্রামে আশ্রয়নের বাইরেও ঘর পেয়ে খুশি অসহায় নাসরীনের তিন ছেলে। সেইসাথে পেয়েছে ঈদ উপহার। নতুন জামাসহ ঈদের খাদ্য সামগ্রী। আজ বুধবার বিকালে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউএনওকে নিয়ে নির্মাণ ঘরে তুলে দিয়ে আসেন পরিবারটিকে। এসময় তদের জন্য ঈদের উপহারও নিয়ে যান তিনি।
মানসিক ভারসাম্যহীন লিটন মিয়া নিজের স্ত্রীকে মারধরসহ ঘর-দোর ভাংচুর করে এবং পুড়িয়ে দিতো। বারবার এমন করার পরে গত বছরের অক্টোবর মাসে পায়ের শিকল খুলে গিয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম করে লিটন। পরে প্রতিবেশি ও স্বজনদের সহায়তায় নাসরীনকে মংমনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হয় এবং পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয় তার স্বামীকে।
এদিকে ঘরহীন নিঃস্ব নাসরীন আক্তার ও তার তিন ছেলে ইয়াসিন, তাসিন ও তামিমকে নিয়ে পড়েন বিপদে। সাময়িক চিকিৎসা শেষে জেলা প্রশাসকের গনশুনানিতে গিয়ে পেয়েছেন অর্থসহ ছেলেদের ৬ মাসের খাবার সহায়তাসহ ঘর।
জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতোয় টিন এবং নগদ ৮৫ হাজার টাকা খরচে ঘর তৈরী করে দেয়া হয়। ঘর পেয়ে খুশি অসহায় পরিবারটি। ঘরকে মসজিদের সাথে তুলনা করে ভুক্তভোগী নাসরীন খুশিতে আত্মহারা। এদিকে স্বজন ও প্রতিবেশিরাও আনন্দিত।
অন্য এক প্রতিবেশি রেনু আক্তার তিনি নাসরীনের পরিবারে খুশি দেখে নিজের ঘরের কথা স্বীকার করে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দুহাত ভরে দোয়া করেন। তিনি যেনো সুস্থ সুন্দর থাকেন এবং তাদের এই সহযোগিতা যেন আরও অসহায় মানুষ পেতে থাকেন এই দোয়া করেন। এদিকে নাসরীন আক্তারের বড় ছেলে ইয়াসিন খুশিতে আত্মহারা হয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। সে ঈদে তার ভাইদের নিয়ে নতুন জামা পড়বে। খাবে সেমাই।
নাসরীন জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমাকে যখন দেখেন ডিসি ম্যাডাম। দেখেই আতকে উঠেন। নাকে মুখে সেলাই। ঘা ঘা হয়ে গিয়েছিলো। তিনি তাৎক্ষণিক আমাকে নগদ ১০ হাজার এবং চেকের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দেন। দিয়ে বলেন চিকিৎসা যেন করাই ঠিকঠাক। সেইসাথে আমার বাচ্চাদেরকে খাবার ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন। আমাকে সুস্থ করে নতুন জীবন দিয়েছেন তিনি। এরপর যখন শুনলেন ঘর নেই। তখন ঘরের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। দিয়েছেন সেলাই করে চলার জন্য একটি সেলাই মেশিন। আমি এই ঋণ মাথায় নিয়ে আজীবন উনার জন্য দোয়া করবো। এমন ডিসি বা সরকারের মানুষ আমার জীবনে আমি আর দেখিনি। সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার জানান, জেলা প্রশাসক নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি বাস্তবায়ন করেছেন।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমি তাকে দেখি গণ শুনানিতে। ওখানে দেখে আমি অবাক। তার পাগল স্বামীর অত্যাচার সয়েছে। তার তিন ছেলে। ছোট ছোট। এমন অসহায় মানুষদের পাশে সরকার সব সময়। তাই ঘরের সাথে ঈদের আনন্দটাও যেন সুন্দর ভাবে করতে পারে সেজন্য নগদ টাকা সহ তাকে সহায়তা করা হয়েছে। আমাদের কাছেও আনন্দ লাগছে সহায়তা করতে পেরে। বুধবার বিকেলে এসব উপহার দেয়ার সময় সদরের এসিল্যান্ড ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গম্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।