নেত্রকোনার পাহাড়ি সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলা স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা শেষ স্বাক্ষী কুমোদিনি হাজ্ং মারা গেছেন। পাহাড়ের বুকে নিয়েছেন শেষ নিঃশ^াস। শনিবার দুপুরে উপজেলা সীমান্ত গ্রাম বহেরাতলীতে স্বামীর ভিটায় তিনি শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেছেন। দুর্গাপুর কালচারাল একাডেমির পরিচালক সুজন হাজং এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বাধ্যক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন লড়ছেন মত্যুর সাথে পাঞ্জা।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তলদেশে বিজয়পুর সীমান্তের দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলি গ্রাম। যে গ্রাম থেকে খাজনা প্রথা বিলুপ্তিতে আন্দোলনের গণজাগরণ হয়েছিলো যার মৃত্যুতে সেই রাশি মণি হাজংয়ের স্মৃতি ধরে রেখেছিলেন কুমোদিনি হাজং। রাশিমণির সমাপ্তিতে খাজনা বিদ্রোহে প্রজা আন্দোলনের ইতিহাস ঐহিত্যর বীরত্বগাঁথা মনিষীদেরও চারণভূমিও বলা চলে। এ এলাকায় কুমোদিনি হাজংয়ের কাছে মানুষ শুনতে আসতেন টংক প্রথা বিলুপ্তির ইতিকথা। কিন্তু তিনি মৃত্যুর কয়েক বছর আগে থেকে কথা বলতে পারেন না। তবে যাদের চেনেন। তাদের সন্মান করতেন। বসিয়ে রাখতে চাইতেন পাশে। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শয্যাশায়ী থাকাকালীন মেঝো ছেলে ও ছেলে বউ দেখভাল করেছেন। রাশিমণি স্মৃতিসৌধ দেখতে গিয়েই সকলে কুমোদিনি হাজংয়ের খোঁজ নেন সবাই। তাঁর তিন ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে কয়েক বছর আগেই মারা যান। কুমুদিনি হাজংয়ের মেঝো ছেলে অর্জুন হাজং জানায় রবিবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
১৯৪৬ সনের কথা। কমরেড মণিসিংহ ভারত থেকে দুর্গাপুর মামা বাড়িতে চলে আসেন। শুরু করেন টংক প্রথা বা ধান কড়াড়ি খাজনা বাতিল আন্দোলন। আন্দেলনে যোগ দেন সীমন্তের কুল্লাগড়া ইউনিয়নের লঙ্কেশ^র হাজং, রাশিমণি হাজংসহ আদিবাসীরা। এরই জেরে সে বছরের ৩১ জানুয়ারী লঙ্কেশ^র হাজংসহ বেশ ক’জন হাজং বিদ্রোহী নেতাকে ধরে নিতে ব্রিটিশ ফন্ট্রিয়ার পুলিশ আসে বহেরাতলী গ্রামে। তাদের না পেয়ে লঙ্কেশ^র হাজংয়ের সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী কুমোদিনি হাজংকে তুলে নিয়ে যায়।
এ খবর এক কৃষক বিদ্রোহ সভায় রাশিমণি হাজংয়ের কাছে পৌঁছে। ছুটে যান তিনি। নারীকে নিয়ে যাওয়া মানে মান নিয়ে যাওয়া উল্লেখ করে তিনি ঝাপিয়ে পড়েন। হাতে থাকা দা দিয়েই পুলিশর উপর হামলা চালান। পরে পুলিশের বন্দুকের গুলিতে তিনিসহ দুজন হাজং নেতার প্রয়াণ ঘটে। তবে রক্ষা হয় গৃহবধু কুমোদিনি হাজং।