চালক না থাকায় গত দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নেত্রকোনার পাহাড়ি জনপদে সরকারী এম্বুলেন্স সেবা। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে এ অঞ্চলের বাঙ্গালিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা।
এদিকে মাঝে মধ্যে জিপের চালক দিয়ে সেবা দিলেও গেল দুই মাস ধরে সেটিও বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে বেসরকারী এম্বুলেন্সের চালকরা করছেন রমরমা ব্যবসা। অন্যদিকে জেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদের উপজেলা দুর্গাপুরের সেবাপ্রার্থিরা বাড়তি টাকা গুণে রেফার্ড করা রোগীদের নিয়ে ময়মনসিংহ ঢাকায় যান। অনেক সময় দরিদ্র মানুষদের টাকা জোগার করতে করতে সময় ক্ষেপন হয়ে সড়কেই মারা যায় রোগী। অন্যদিকে তালাবদ্ধ থেকে থেকে এম্বুলেন্সগুলো একেবারে নষ্টের পথে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেত্রকোনার পাহাড়ি সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর। বাঙালিসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাহাড়ি এই অঞ্চলে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। দুর্গাপুর ছাড়াও এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন আশপাশের আরও কয়েক উপজেলার মানুষ।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচটি এ্যাম্বুলেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে দুইটি আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়েছে। আর বাকি তিনটির মধ্যে দুটি পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে গ্যারেজে। বিকল দুইটি এ্যাম্বুলেন্স বিক্রির কথা থাকলেও বিআরটিএ ছাড়পত্র না দেওয়ায় গেল কয়েক বছর ধরে ঝুলে আছে নিলাম প্রক্রিয়া।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ বিশিষ্ট এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫শ রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। ফলে অনেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয় নেত্রকোনার অথবা ময়মনসিংহ কিংবা ঢাকায়। কিন্তু চালকের অভাবে হাসপাতালের গ্যারেজে তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এ্যাম্বুলেন্স। ফলে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে রোগীদের সেবা নিতে হচ্ছে বেসরকারি এ্যম্বুলেন্সের।
চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগী মো. মহরম জানায়. তার ভাগ্নিকে নিয়ে আসলে ময়মনসিংহে রেফার্ড করলে চার হাজার টাকায় ফুরিয়ে একাটি এম্বুলেন্স নিয়ে যেতে হয়েছে। যেখানে সরকারী ভাড়া দুর্গাপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ১২৩০ টাকা। অনেক সময় রাত বিরাত হলে গুনতে হয় আরও বেশি। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ন কিন্তু মনে হয় সিন্ডিকেট থাকায় তারা চালক দেয় না।
মো. আবুল হোসেন জানান, আমরা আহামরি টাকা নিয়ে আসি না। কিন্তু রেফার্ড করলে ময়মনসিংহ পর্যন্ত নিয়ে যেতে যেতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। এরপর অঅর চিকিৎসা করানো বা ঔষধ কেনা যায় না। দূর-দূরান্ত থেকে রোগী আসে। এই এলাকায় আমাদের মতোই বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষ। বড়লোকরা তো চেম্বারেই যায়। আর আমরা রোগী নিতে নিতে রাস্তায়ই মারা যায়।
তবে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ডাঃ তানজিরুল ইসলাম রায়হান বলেন, একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়ী চলক নিয়োগের কথা রয়েছে। আশা করি চালক পেয়ে গেলে আবার এ্যাম্বুলেন্স সেবা সচল হবে।