নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় চুরির অপবাদে কিশোর নির্যাতনের অভিযোগে স্থানীয় ইউপি সদস্য সবুজ মিয়া ও স্থানীয় মাতাব্বর আবু তাহেরকে আটক করে কোর্টে প্রেরণ করেছে কেন্দুয়া থানার পুলিশ। শনিবার তাদেরকে কোর্টে চালান করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কেন্দুয়া থানার ওসি আলী হোসেন।
এর আগে চুরির অপবাদে গ্রাম্য সালিশে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া ও জরিমানা আদায়ের অভিযোগ তুলে শুক্রবার রাতে কিশোরের মা বাদী হয়ে ইউপি সদস্য ও গ্রাম্য মাতব্বর সহ ৬জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত কয়েক জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরাপাড়া গ্রামের দিনমজুর বাক প্রতিবন্ধী আব্দুস সালাম ও নুরেজা আক্তারের ছেলে আবু লায়েছের বিরুদ্ধে মোবাইলের মিনিট কার্ড চুরির অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় গ্রাম্য সালিশে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া ও জরিমানা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গ্রাম্য মাতব্বরের বিরুদ্ধে। পরে শুক্রবার এমন একটি খবর ফেইসবুকে ভাইরাল হলে স্থানীয় প্রশাসন কিশোরকে দেখতে তার বাড়ি যায় এবং চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এদিকে কিশোরের মা নুরেজা জানায়, গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে এক আত্মীয়ের অসুস্থতার খবর নিতে মোবাইলে রিচার্জ করতে মিনিট কার্ড কেনার জন্য সরাপাড়া বাজারে ছেলেকে পাঠান। ছেলে কার্ড কেনার জন্য শাহীন মিয়ার দোকানে গিয়ে ডাকাডাকির সময় পেছন থেকে চা দোকানি মতিউর তাকে ঝাপটে ধরেন। পরে মতিউর বাজারের লোকজনকে ডেকে আনেন। পরবতীর্তে রাতেই বর্তমান ইউপি সদস্য সবুজ মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য হাদিস মিয়া, আবু তাহেরসহ আরও কয়েকজন রাতভর ছেলেকে নির্যাতন করেন। আমার ছেলেকে খুন করে বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে সে চুরির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। পরদিন বুধবার সকালে সবুজের সভাপতিত্বে ব্যবসায়ী ও গ্রামের মাতব্বররা বাজারে সালিশ বৈঠকে বসে বিচারে তারা আমার ছেলের মাথা ন্যাড়া করে ১০টি বেত্রাঘাত ও দুই হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। তিনি আরও বলেন গরীব মানুষ আমরা। বেত্রাঘাতে আহত হলে ছেলে চিকিৎসা করাতে টাকা নেই।
এদিকে এই ঘটনাটি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কেন্দুয়া থানার ওসি এবং ইউএনও কিশোরের বাড়িতে যান। কিশোরকে চিকিৎসা করাতে কেন্দুয়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান জানান, অঅমি চিকিৎসা করাতে ময়মনসিংহ ছিলাম। খবর নিয়েছি ছেলেটি চুরি করে। এখন এ ঘটনায় দুজকে আটক করেছে পুলিশ।
কেন্দুয়া থানার ওসি আলী হোসন জানান, শুক্রবার রাতেই কিশোরের মা বাদী হয়ে মামলা করলে আমরা দুজনকে আটক করি। শনিবার তাদেরকে কোর্টে চালান দিয়েছি। কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল বলেন, বিষয়টি শোনার পর ওসিকে সঙ্গে নিয়ে আমি ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করি। স্থানীয়রা কয়েকজন জানায় চুরির বিষয়টি। কিন্তু কিশোরকে মারধরের বিষয়টি ঠিক হয়নি। তাই এ ব্যাপারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।