খালিয়াজুরী হচ্ছে খালিয়াজুরী, বাংলাদেশ। যদিও এটি নেত্রকোণা জেলার একটি উপজেলা। তবে খালিয়াজুরী, বাংলাদেশ লিখতেই ভালো লাগে। খালিয়াজুরী উপজেলা বটে, তবে আপনি আর আর উপজেলার সাথে এটাকে মেলাতে পারবেন না। মোট এক বর্গ কিলোমিটারের ভেতর এই উপজেলা শহর শেষ হয়ে যাবে। ছোট্ট একটা বাজার আর উপজেলা প্রশাসন দলাবেঁধে আছে।
এইখানে মানে উপজেলায় একটা হাসপাতাল, একটা ডাকঘর, একটা সোনালী ব্যাংক, একটা কৃষি ব্যাংক, একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটা উচ্চ বিদ্যালয়, একটা কলেজ ও লাল মিয়া তালুকদার কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। লাল মিয়া তালুকদার কিন্ডার গার্টেনে মৌমি পড়তো। মৌমি হচ্ছে মৌমি। যাইহোক, খালিয়াজুরী হচ্ছে প্রত্যন্ত হাওড় অঞ্চল। এইখানে ছয় থেকে আট মাস মানুষ জন পানিবন্দী থাকে। এপ্রিল মে মাসে ভারতের পাহাড়ী ঢল থেকে পানি আসে। তারপর দ্বীপের মতো জেগে ওঠে হাটিগুলো। ছোট্ট ছোট্ট হাটি। যেমন ধরেন উদয়পুর নয়া হাটিতে ৩০ টা পরিবার। ঘরের সাথে ঘর। জড়াজড়ি করে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে এরা। উদয়পুর নয়াহাটি থেকে পুরাণহাটি কিংবা মধ্যহাটিতে যেতে এখন নৌকা লাগবে। নৌকা ছাড়া যোগাযোগের আর কোন বাহন এইখানে নেই।
খালিয়াজুরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আপনাকে সেখানে যেতে হবে পাঁচবার। একবার যাবেন শীতকালে জানুয়ারির শেষ দিক থেকে ফেব্রুয়ারি যে কোন সময়। তখন আপনি দেখবেন মাঠের পর মাঠ সবুজ হয়ে আছে ধান ক্ষেতে। তারপর যাবেন মার্চের শেষ দিকে তখন দেখবেন মাঠের পর মাঠ সোনা রঙ। পাকা ধান। মে-জুনের দিকে গিয়ে দেখবেন চারদিকে থৈ থৈ পানি। আপনার দেখে বিশ্বাস হবে না এইখানে কোনদিন ধানক্ষেত ছিলো। ঘোর বর্ষায় আপনাকে একবার যেতে হবে খালিয়াজুরী। আফাল দেখতে। ভয়াবহ ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। সব ধরণের নৌ যোগাযোগা বন্ধ থাকে আফালের সময়। তারপরও আপনি যদি নৌকায় বসে সে ঢেউ উপভোগ না করেন তবে জীবনের বিশাল এক অভিজ্ঞতা বাকি থেকে যাবে। আর নৌকা থেকে দেখতে হবে হাওড়ের বৃষ্টি। ঢেউহীন থির হাওড়ের জলে যখন বৃষ্টি পড়ে মনে হবে অসংখ্য বকুল ফুটে উঠছে পানিতে
চতুর্থবার আপনি খালিয়াজুরী যাবেন শেষ শরতের পূর্ণিমায়। জোছনা দেখতে। পূর্ণিমায় মাঝরাতে একটা নৌকা নিয়ে হাওড়ের মাঝখানে গিয়ে চুপচাপ সুন্দর উপভোগ করতে হয়। এই সুন্দর দেখে আপনার মরে যেতে ইচ্ছে হবে। এতো সুন্দরের ভেতর খুব অসহায় বোধ হবে আপনার।
পঞ্চমবার আপনি যাবেন বল্লভপুর বা আদমপুরের কীর্তন মেলায়। পানি নেমে গেছে। কৃষি শুরু হবে। তার আগে মঙ্গলের কামনা।
খালিয়াজুরী যাওয়ার সবচেয়ে সুবিধাজনক পথ হচ্ছে ঢাকা থেকে হাওড় এক্সপ্রেসে করে মোহনগঞ্জ চলে যাওয়া। মোহনগঞ্জ থেকে সিএনজি অটোরিকশা করে বোয়ালি। আর বোয়ালি থেকে শুকনা মৌসুমে ভাড়ার মোটরসাইকেল আর বর্ষা মৌসুমে কলের নৌকা করে খালিয়াজুরী, বাংলাদেশ। হাওড় এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে ছাড়ে রাত এগারোটা পঞ্চাশে। বুধবার ছাড়া। মোহনগঞ্জে পৌঁছে সকাল ছয়টায়। মোহনগঞ্জ থেকে বোয়ালি যাওয়ার পথটায় যেতে যেতে গ্রাম-বাংলার সকাল বেলার অপার সৌন্দর্য আপনি উপভোগ করবেন।
খালিয়াজুরীতে থাকার জন্য ডাকবাংলো রয়েছে। দেখাশোনা করেন কাশেম ভাই । খাওয়া-দাওয়ার জন্য হোটেল রয়েছে। খাবারের মান খুবি বাজে। তাই কাশেম ভাইকে টাকা দিলে তিনিই ব্যবস্থা করবেন। তবে খালিয়াজুরীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। সকালে বা বিকালে মাছের আড়ৎ থেকে মাছ কিনতে পারবেন। মাছ কিনে যদি আলীনূর চাচাকে দেন তবে তিনিই আপনার খাবারের ব্যবস্থা করে দিবেন। খালিয়াজুরীতে আলীনূর দুইজন। চাচা একজনই। খুবি স্মার্ট এবং নরম মনের মানুষ। তার ছেলের নাম লাভলু। লাভলুর দোকানের দারুচিনি চা খেয়ে আসতে ভুলবেন না।