নেত্রকোনায় সড়কে দাপিয়ে বেড়ানো সিএনজি অটো রিকশায় বছরে অর্ধশতাধিক প্রাণহানি ঘটে \ আহত ৬ থেকে ৭ শতাধিক
নেত্রকোনায় বেপরোয়া সিএনজি অটোরিকশা। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহাসড়ক ও জেলার আভ্যন্তরীণ সড়কসহ অলিগলি। ঘটছে ছোট বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা। নিরুপায় যাত্রী ও পথচারী। ট্রাক বাস মোটরসাইকেল ইজিবাইকের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে ঘটছে সিএনজি দুর্ঘটনাও। কখনো মামলা হয় আবার বেশিরভাগ থাকে প্রশাসনের নজরের বাইরে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। চালকসহ যাত্রী মারা গেলেও চালকরা বেপরোয়া। তবে এ নিয়ে কাজ করছে বলে জানায় বিআরটিএ এবং পুলিশ প্রশাসন।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলার ১০ উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ইজিবাইকের পাশাপাশি এখন সিএজির দাপট। কে কার আগে যাবে চলে এমন প্রতিযোগিতা। আর এসব প্রতিযোগিতায় প্রাণ যায় সাধারণ মানুষের। কখনো কখনো চালকেরও মৃত্যু ঘটে। সারা জেলায় কত হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলে কেউ জানে না। তবে সিএনজি স্টেশন মাস্টারের দাবী পুরো জেলায় সাত হাজারের মতো চলে। তারমধ্যে তিন হাজারের মতো সিএনজির রয়েছে লাইসেন্স। এদিকে সড়কে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং নানা বাহানায় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ছাড়িয়ে নিচ্ছে লাইসেন্স বিহীন এসকল সিএনজি অটোরিকশা।
বেপরোয়া গতিতে চলাচলে প্রায় সময় কলমাকান্দা-নেত্রকোনা সড়কে অথবা দুর্গাপুর-পূবর্ধলা বা শ্যামগঞ্জ সড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্রাকের সাথে সিএনজির সংঘর্ষ হলে নির্ঘিাত মৃত্যু ঘটে। তারপরও এদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে দ্রæত সময়ে যাত্রী নামিয়ে দেয়ার মিশন থাকে। অল্প সময়ে লাভ বেশি এই নীতিতে জীবনের তোয়াক্কা করে না।
বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো মারা যাওয়ার খবর থাকলেও পরিপুর্ন তথ্য নেই কোন বিভাগেই। গত ২০২৩ সনের জানুয়ারী থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। মামলা হয়েছে ২৬ টি। আহত ২৩ জন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১১ মাসে নিহত হয়েছে ৮ জন। আহত হয়েছে ৬১৫ জন। এদিকে বিআরটিএ সূত্র মতে আগস্ট থেকে নভেম্বর গত চারমাসে নিহত ২১ জন। তারমধ্যে সেপ্টেম্বর মাসেই মারা যান ১২ জন। এসকল মুত্যুর বেশিরভাগ সিএনজি অটোরিকশার জন্য বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
জেলা সুজনের সভাপতি সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল জানান, ওভারটেকসহ প্রতি বছর প্রায় অর্ধশত মানুষ বিভিন্ন সড়কে প্রাণ হারায়। ট্রাক, বাস, মোটরসইকেল, ইজিবাইকের পাশাপাশি সিএনজি অটোরিকশা এখন এগিয়ে। এসব দুর্ঘটনায় খুব কম মামলা হয়। বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই পুলিশ হয়রানীসহ পোষ্টমর্টেম জটিলতায় মামলা করেনা।
বিআরটিএ সার্কেল অফিসের জেলা কর্মকর্তা কেশব কুমার দাস সত্যতা নিশ্চিত করে গেল বছরের চার মাসের তথ্য মাসওয়ারি দিয়ে জানান, তারা প্রতিনিয়ত বিআরটিএ মামলা দেয়া এবং সচেতনা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
তিনি জানান, গত আগস্টে ২ টি দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত। পুলিশ মামলা ১ টি। দূর্ঘটনায় জড়িত যানের সংখ্যা ৩টি। নিহতদের মধ্যে পথচারী একজন যাত্রী একজন। সেটেম্বর মাসে দূর্ঘটনার সংখ্যা ১২টি। পুলিশ মামলা ৪ টি। ৮ টির মামলা হয়নি। যানের সংখ্যা ১৫ টি। চালক ৪ জন, ৬ জন পথচারী, যাত্রী ২ জন মোট নিহত ১২ জন। আহত ২ জন।
অক্টোম্বর মাসে, দূর্ঘনার সংখ্যা ২ টি। পুলিশ মামলা নাই। যানের সংখ্যা ২ টি। নিহতদের মধ্যে ১ জন চালক, ১ জন পথচারী। নভেম্বর মাসে সড়ক দূর্ঘনার সংখ্যা ৪ টি, পুলিশে মামলা ১ টি, যানের সংখ্যা ৮ টি, পথচারী ২ জন, যাত্রী ৩ জন মোট ৫ জন নিহত, আহত ২ জন। তারমধ্যে সিএনজি অটো রিক্সায় ৩ জন মারা যায়। তিনি জানান, সিএনজি অটোরিকশার লাইসেন্স এ পর্যন্ত ৮৮৪ টির।
এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. লুৎফর রহমান গত ১১ মাসে ২৮ জন নিহত ও ২৩ জন আহতের ঘটনায় মোট মামলা হয়েছে ২৬টি। তিনি জানান, মার্চ মাসের কোনো তথ্য নেই। আক্টোবরে মামলা নেই। পুলিশ এ ব্যাপারে সোচ্চার বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন অনেকে মামলা করতে চান না। হাসপাতালের তথ্যগুলো পুলিশ বিভাগে অসে না।
পুলিশ রিপোর্ট জানুয়ারী মাসে মামলা ৩ টি, নিহত ২, আহত ১। ফেব্রুয়ারী মাসে মামলা ২, নিহত ২। মার্চ মাসে কোনো তথ্য নেই। এপ্রিল মাসে মামলা ৫, নিহত ৭, আহত ১১। মে মাসে মামলা ৩, নিহত ১, আহত ১। জুন মাসে মামলা ৪, নিহত ৫, আহত। জুলাই মাসে মামলা ৩, নিহত ৫, আহত ৪। আগস্ট মাসে মামলা ১, নিহত ১। সেপ্টেম্বর মাসেমামলা ৪, নিহত ৩। আক্টোম্বর মামলা নেই। নভেম্বর মাসে মামলা ১, নিহত ২, আহত ৩। মোট মামলা ২৬, নিহত ২৮, আহত ২৩।
এদিকে হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জনুয়ারাী মাসে ৮০ জন, ফেব্রæয়ারীতে ৫৮ জন আহত। মার্চ মাসে ২ জন নিহতসহ ৫৪ জন আহত। এপ্রিল মাসে ৩ জন নিহসহ ৭০ জন আহত। মে মাসে ৪১ জন, জুন মাসে ৪৪ জন আহত। জুলাই মাসে ২ জন নিহত সহ ৫৪ জন আহত। আগস্ট মাসে ১ জন নিহতসহ ৩১ জন আহত। সেপ্টেম্বর মাসে ৩৭ জন, আক্টোম্বর মাসে ৭৭ জন নভেম্বর মাসে ৬৯ জন আহত। এক বছরে ৬১৫ জন আহত, নিহত ৮ জন।