সোহান আহমেদ:
একসময় ভিক্ষাবৃত্তি করে ভাঙা ঘরে বসবাস করলেও এখন থেকে নতুন ঘরে ঠাই হয়েছে নেত্রকোনার পূর্বধলার পাঁচ পরিবারের। গৃহীন থাকবে না কেউ, প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করছে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত জেলায় ভুমিহীন আড়াই হাজারেরও বেশি পরিবার পেয়েছে স্থায়ী ঠিকানা প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর।
কিন্তু এক টুকরো জমি থাকায় এ প্রকল্পে বাদ পড়েন হতদরিদ্র অনেক পরিবার। এমনি কিছু অসহায় পরিবারের ছবি তুলে পূর্বধলার তরুণ সমাজ সেবক রাজিবুল ইসলাম রাজিবের ফেইসবুক থেকে পোস্ট করায় নজরে আসে জেলা প্রশাসকের। দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন তিনি। যেখানে ঘর থাকলেও বসবাসের অনুপযুগী হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছিলো পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের ভাগবের গ্রামের আব্দুর রাশিদসহ সবগুলো পরিবারের। পুরনো কাপড় কিংবা কলাপাতা টানিয়ে কোন বসবাস করতে বাধ্য ছিলো তারা।
দীর্ঘদিনের অসুস্থতায় “চাল আনতে পান্তা ফুরায়” অবস্থায় নতুন করে ঘর করা যেন স্বপ্নের মতোই।সামাজিক মাধ্যমে এমন সংবাদ পেয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। যিনি এরইমধ্যে মানবিক জেলা প্রশাসক হিসেবে নেত্রকোনার তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
জনসেবামূলক সকল দপ্তরেই রাখছেন সুদৃষ্টি। প্রায় প্রতিদিনই বিরামহীন ছুটছেন জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। খোঁজ নিচ্ছেন হতদরিদ্র মানুষের। নিজ হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন সরকারের দেয়া বিভিন্ন সহায়তা। এমন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন উপজেলাতেই জায়গা থাকলেও ঘর করতে না পারা মানুষগুলোকে গৃহনির্মাণ করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে দিচ্ছেন সার্বিক সহায়তা।
ঘরগুলো পেয়ে আনন্দে আত্মহারা উপকার ভোগীরা। দেখছেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন। শুধুমাত্র ঘরই নয় জীবিকা নির্বাহে স্থায়ী ব্যবস্থায় নিচ্ছেন হাঁস মুরগি গরু-ছাগল বিতরণের ব্যবস্থাও। চলতি মাসেই পূর্বধলায় এমন ঘর পেয়েছেন পাঁচটি পরিবার।
বৃহস্পতিবার পূর্বধলায় জনপ্রতিনিধ, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময়সহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক। পরিদর্শন করেছেন উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ন প্রকল্প ও উন্নয়ন কাজ।
দুপুরে নতুন টিনশেড ঘরগুলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করেন কৃষি উপকরণ, কম্বলসহ নতুন কাপড়। দেয়া হয় এক মাসের খাদ্য সামগ্রীও। এমন সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছাঃ জিনিয়া জামান,পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন সুলতানা সুমি আকন্দ, তরুণ সমাজসেবক রাজিবুল ইসলাম রাজীবসহ আরও অনেকেই। নেত্রকোনায় প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে দক্ষতা ও দায়িত্ব পালনে প্রশংসায় ভাসছেন অঞ্জনা খান মজলিশ। যদিও এর আগের কর্মস্থল চাঁদপুর থাকাকালীন সময়েও জনসেবায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন তিনি।