নেত্রকোনার দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রেফার্ড করা নবজাতককে ময়মনসিংহ নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা গেল সদ্য ভূমিষ্ট নবজাতক। দিনমজুর পিতার অভিযোগ সরকারী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে চালকের সাথে দর কষাকষি করে সময় ক্ষেপনের পর দেখেন তার নবজাতক আর বেঁচে নেই। এমন ঘটনায় বিচার দাবী করেন পরিবারটির সবাই।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেন সুমাইয়া আক্তার। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রসব হওয়ায় নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে প্রি ম্যাচিউর লিখে উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকের রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা। পরে রাত দশটায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক শাহাদাত হোসেনকে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করেন রোগীর স্বজনরা। সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১২৫০ টাকা থাকলেও চালক ২৫০০ টাকা দাবী করায় রাত বারোটা পর্যন্ত চলে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি। পরে ১৭০০ টাকায় নবজাতক নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি হলেও ততক্ষণে নবজাতকটি আর বেঁচে নেই।
ভুক্তভোগী কলমাকান্দার নাজিরপুর ইউনিয়নের দিলোরা গ্রামের দিনমজুর মনির মিয়া জানান, মঙ্গলবার বিকেলে প্রসব ব্যথা হলে স্ত্রী সুমাইয়াকে দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা ৬ টায় নরমাল ডেলিভারি হয়। কিন্তু নবজাতকের শ^াসকষ্টসহ নানা সমস্যা দেখা দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে রেফার্ড করেন।
পরে দিনমজুর মনির মিয়া ধার-দেনা করে টাকা জোগাড় করে রাত দশটায় অ্যাম্বুলেন্স চালককে ফোন দিয়ে সাক্ষাত পান চালকের। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে দরকষাকষিতে দুই ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে পড়ে। এদিকে নবজাতকও মারা যায় এরইমধ্যে।
স্থানীয় সূত্র জানায় অ্যাম্বুলেন্স চালক শাহাদাত হোসেন হাসপাতালের ব্যক্তিগত জিপ গাড়ীর চালক হয়েও গত প্রায় দুবছর ধরে একাধারে জিপ ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে মানুষেরর অসহায়ত্বের সুযোগে প্রতিনিয়ত তার ইচ্ছামত ভাড়া আদায় নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন জনের।
এদিকে দর কষাকষির কথা স্বীকার করে অ্যাম্বুলেন্স চালক শাহাদাত হোসেন জানান তিনি জিপ গাড়ির চালক। তারপুরও অ্যম্বুলেন্স চালান। তাকে জোর করে রাজি করিয়েছে বলেও উল্টো অভিযোগ করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নবজাতক মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন ময়মনসিংহে রেফাড করার পরও তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে নিয়ে যায়নি। তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মোছাম্মৎ জেবুন্নেসা। তিনি জানান, চালকের দাবী জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে দুর্গাপুর থানার ওসি উত্তম চন্দ্র দেবের মোবাইলে কল দিলে দুবার না ধরে তিনবারের সময় কলটি কেটে দেন। এদিকে দুর্গাপুর সার্কেল অফিসারের নাম্বারে কল দিলে তিনিও কলটি কেটে দেন।