নেত্রকোনার পূর্বধলায় স্থানীয় এমপিকে অপহরণের অভিযোগে থানায় করা মামলার ঘটনায় ধুম্লজালের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীসহ প্রশাসনেও। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেত্রকোনা ৫ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের (বীর প্রতিক) সাথে থাকা নেতাকর্মীসহ ৯ জনকে আসামী করে গত ২৩ আগস্ট বুধবার পূর্বধলা থানায় মামলাটি দায়ের করেন স্ত্রী রওশন হোসেন। কিন্তু এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পদক সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এরশাদ হোসেন মালু কিছুই জানেনা বলে জানান। অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান প্রিন্স তিনিও কিছু না জানায় বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাবেন বলে জানান।
এদিকে এ ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিতে মামলার বাদী রওশন হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অপর প্রান্ত থেকে তার সেক্রটারি পরিচেয়ে কথা বলেন একজন নারী। তিনি জানান, এটি মিডিয়ার কাজ নয়। এটি পুলিশের কাজ দেখেই থানায় মামলা করা হয়েছে। আপনার কাজ না। এটা উনার পার্সোনাল ব্যাপার। এটা নিয়ে হৈচৈ করবেন না। মামলা আপনাদের কাছে করেনি। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের প্রয়োজন নেই। যারা প্রকাশ করছেন তাদের বিরুদ্ধে তিনি আইনী ব্যবস্থা নিবে বলেও জানান। তিনি বলেন আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এসকল সংবাদ ভাবমূর্তি খুন্ন ছাড়া কিছুই না। পারিবারিক হেয় করার জন্য সাংবাদিকরা লিখছে। তাই এর থেকে বিরত থাকতে সাংবাদিকদের প্রতি আহŸান জানান তিনি। মিডিয়াতে জানানো দরকার মনে করলে আগেই জানাতাম। মিডিয়া কি শাস্থি দিতে পারবে ? দিলে আপনার কাছে বলতে বলি।
পূর্বধলা থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দÐবিধির ৩৪৪, ৩৬৪, ৪০৬, ৪২০, ৪৬৭, ৪৭১, ৫০০/৩৪ ধারায় মামলাটি হয়েছে। এতে অপহরণ ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল কাবিননামা ও জাল তালাকনামা তৈরির কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও ডাকে প্রশাসন সহ আমরা তালাক নামার চিঠি পেয়েছি অনেকদিন আগেই।
মামলায় অভিযুক্ত আসামীরা হলেন, কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী নাদিয়া আক্তার (২৬) এক তরুণী, নাদিয়ার ছোট ভাই পূর্বধলা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাইফ (২০), পূর্বধলা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোলায়মান হোসেন, সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ (পিএস) হিসেবে পরিচিত ফেরদৌস আলম (৪২), কামরুজজামান উজ্জ্বল (৪২), দুই কলেজশিক্ষক নাদেরুজ্জামান স্বপন (৪২), রতন পাল (৩২), ছাত্রলীগ কর্মী শাহ আলীম (৩২) ও সংসদ সদস্যের গাড়িচালক শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
এদিকে মামলার ৪ নং আসামী সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ সহাকারী হিসেবে পরিচিত ফেরদৌস আলম এ বিষয়ে জানান, একজন বড় মাপের নেতা ও তিনবারের সংসদ সদস্যকে অপহরণ করলে গোপন থাকতো না। গত ৭ এপ্রিল অপহরণের তারিখ দেখিয়েছে। আবার ২৭ মার্চ উদ্ধার বলেছে। তাহলে এতদিন পরে কেন মামলা করতে হয়। এছাড়াও এ মামলায় যাদেরকে স্বাক্ষী করা হয়েছে তারা সকলেই আমার উপর হামলাকারী। সুতরাং এটিযে সাজানো সহজেই বুঝা যায়। তবে নাদিয়ার সাথে সাংসতের বিয়ে হয়েছিলো কিনা তা তিনি জানেন না বলে জানান।
অন্যদিকে মামলার এজাহার বিবরণে প্রকাশ ও পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলার অভিযুক্ত আসামিরা বিভিন্ন সময় ওয়ারেসাত হোসেনের কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন এবং তাঁর আস্থাভাজন হয়ে নানাভাবে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিতে থাকেন। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ফেরদৌস আলম ও কামরুজ্জামান উজ্জ্বলকে সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে তাঁর কাজ দেখভালের মৌখিক দায়িত্ব দেওয়ার পর তাঁরা সংসদ সদস্যের নাম ভাঙিয়ে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেন।
অন্য আসামিরা গত ৭ ফেব্রæয়ারি ওয়ারেসাত হোসেনকে ভুল বুঝিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়ি কাজলা থেকে একটি গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে সংসদ সদস্যের নিজের বাসা উত্তরায় না নিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় একটি বাসায় তাঁকে আটকে রাখা হয়। পরে গাড়িচালক সংসদ সদস্যের পরিবারকে জানান, ওয়ারেসাত হোসেন বিদেশে চলে গেছেন।
মামলায় বাদী আরও উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামীকে (ওয়ারেসাত হোসেন) জিম্মি করে স্বাক্ষর জাল করে নাদিয়া আক্তারের সঙ্গে বিয়ের একটি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করা হয়। এরপর স্বাক্ষর জাল করে তাঁকে (রওশন হোসেন) তালাকের একটি কাগজ ফটোকপি করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে গত ২৭ মার্চ বিকেলে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে ঢাকার একটি বাসা থেকে সংসদ সদস্যকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন।
পরদিন চিকিৎসার জন্য ওয়ারেসাত হোসেনকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেয়ের বাসায় রেখে চিকিৎসা শেষে ১১ আগস্ট দেশে আনা হয়। এরপর এ ঘটনায় ২৩ আগস্ট বুধবার রাতে মামলা করেন সংসদ সদস্য ওয়ারেসাতের স্ত্রী রওশন। মামলায় ওয়ারেসাত হোসেনকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও আটজনকে সাক্ষী করা হয়। তবে এ বিষয়ে কথা বরতে ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের সাথে কোনভাবেই কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মামলার প্রধান আসামি নাদিয়া আক্তারের ছোটভাই মামলার ২নং আসামি তাইফ বলেন, এতোবড় একটি ঘটনা। এমপিকে অপহরণ কারার বিষয়ে উনারা এতাদিন কোথায় ছিলেন। কেন এতো পরে মামলা করলেন। আমার বোনের সাথে বিয়ে হয়ে থাকলে তারা প্রমাণ দিক। তাছাড়া একজন সাংসদ অপহৃত হবে প্রশাসন বসে থাকবে। দলীয় নেতারা বসে থাকবে?