দেশ জুড়ে দুর্গোৎসবের আয়োজনে মেতেছে সম্প্রীতির জেলা নেত্রকোনাও। চলছে মন্ডপ তৈরীর তোরজোড়। ব্যাক্তি কিংবা সার্বজনীন প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমা তৈরী শেষে চলছে রঙতুলির কাজ। কারিগড়দের সংখ্যা কম থাকায় প্রতি দল ধাপে ধাপে কয়েকটি করে মন্ডপের কাজ নিয়েছেন।
একটি শেষ করেই আরেকটি ধরছেন। এদিকে সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোউৎসবকে নির্বিঘœ করতে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ প্রস্তুত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও গত বছরের তুলনায় এবার নেত্রকোনায় পূজা কমেছে ৯৫ টি। এবার দেবী আসবে দেলায় করে ফিরবে ঘোড়ায় চড়ে। আর এই আনন্দে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রতিবছর সারা দেশের ন্যায় উৎসবমুখর পরিবেশে নেত্রকোনা জেলার ১০ উপজেলাতে অনুষ্ঠিত হয় শারদীয় উৎসব। তবে বেশি জাঁকজমক হয় নেত্রকোনা শহরে।
এ উপলক্ষে প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বস্তরে আনন্দের আজেম লক্ষ্যনীয় হয়। তবে এবছর গত বছরের চেয়ে কমেছে ৯৫ টি পূজামন্ডপ। গত ৫ আগস্টের পর ভারতের একটি চ্যানেলে রামকৃষ্ণ, ইসকনসহ বেশ কটি মন্দিরের নাম ওঠে আসে। কিন্তু প্রশাসন বা মন্দিরের কেউই জানেনা কখন ভাংচুর করা হয়। এমন গুজবে জেলাজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে খবর নিয়ে জানা যায় মানুষের মাঝে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতেই এভাবে তথ্য দেয়া হয়েছিলো। তবে কারা এই তথ্য দিয়েছে তা কেউ স্বীকার করেনি। যদিও পরবর্তীতে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে মন্দিরগুলোর পক্ষ থেকে। যে কারণে মানুষের মাঝে ভীতি রয়ে গেছে। আসলে কি এমনটা হয় কিনা এই ধরনের।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১০ উপজেলায় মোট ৪৬৬ টি ব্যাক্তি ও সার্বজনীন পূজা মন্ডপ তৈরী হয়েছে। তারমধ্যে জেলা সদরে ১০৫ টি, র্পূধলায় ৪১ টি, বারহাট্টায় ৪৮ টি, মোহনগঞ্জে ৩৪ টি, দুর্গাপুরে ৬২ টি, কলমাকান্দায় ৩৬ টি, মদনে ১২ টি ও খালিয়াজুরীতে ৩৩ টি। ইতিমেধ্যে বিভিন্ন মন্ডপের প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ। বেশিরভাগ চলছে রঙের কাজ। তৈরী হচ্ছে প্যান্ডেল।
এদিকে পৈত্রিক পেশা হওয়ায় কারিগড় কম। যারা রয়েছেন তারা বাপ দাদার পেশা হিসেবে অন্য কিছু করতে না পারার কারণে প্রতিমা তৈরির কাজই করেন। কয়েকটি কাজ নিয়ে ধাপে ধাপে করছেন প্রতিমা সম্পন্নের কাজ জানলেন কারিগর কলম পাল। এটি ছাড়া তারা অন্য কোন কাজ পারেনও না। এবার ৭ টি মন্ডপের কাজ পেয়েছেন তিনি। তাই ধাপে ধাপে কাজ শেষ করেন।
নেত্রকোনা সাতপাই এলাকার লাবন্য মাস্টারের বাড়ির মন্দিরে প্রতিমা তৈরির সময় এসব কথা বলেন। এক এক টি প্রতিমা এক এক মুল্যের। ২৫ হাজার থেকে শুরু করে অনেক বেশি টাকারও আছে।
পৌর শহরে ব্যক্তিগত ভাবে অনেকে পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে ১৩০ বছর ধরেও করছেন পুজা। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটবে না বলে আশাবাদ দোলন সরকারের। তবে সমস্যা যে হবে না এটাও বলতে পারছেন না বলে প্রশ্ন রাখেন। তিনি বলেন পারিবারিক এই পূজা দীর্ঘ ১২০ থেকে ১৩০ বছর ধরে তারা চালিয়েছেন কোন দিন কোন সমস্যা হয়নি।
পূজা উদযাপন পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন পন্ডিত জানান, বর্ধিত সভা করা হয়েছে। প্রতিমা সুরক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবক তৈরী হচ্ছে। দিনে রাতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সারা জেলার দুই থেকে আড়াইশ পুজারি উপস্থিত ছিলো সভায়। পূজারিদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে সার্বিক। অনেক পুজারি বলেন তারা কিছুটা আশংকায় রয়েছেন। তবে তিনি এটিও বলেন বিগত সময়ে কয়েকটি মিথ্যা ঘটনার জন্য আমরা প্রতিবাদ দিয়েছি। রামকৃষ্ণ আশ্রম, ইসকন ও কালীবাড়ির মন্দিরের নামে একটা তথ্য দিয়েছিল। যার জন্য আমরাও বিভ্রান্ত হয়েছি। তবে ভারতের মিডিয়ায় একদম এলাকা ভিত্তিক মিথ্যা এই তথ্য কে বা কারা দিয়েছিলেন তা বলতে পারেননি। তিনি বলেন এসকল মিথ্যাচারের জন্য কোথাও কোন ঘটনা ঘটলেও পরে গুরুত্ব পায় না। তাই এই বিষয়টিও মাথায় রয়েছে।
জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ পিপিএম জানান, পূজা কমিটিসহ সকলের সাথে দফায় দফায় সভা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে প্রতি মন্ডপে। পাশাপাশি সম্প্রীতি ধরে রাখতে ডিএিসবি সহ পোশাকের পুলিশসহ তিন স্থরে নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রত্যেকেই কাজ করছে। প্রতিদিন পাঁচটি করে মন্দির ভিজিট করছে। আশাকরি কোন প্রকার ভীতি থাকবে না।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, আমি এসেই জেনেছি নেত্রকোনায় জাঁকজমকপূর্নভাবেই এ পূজা চলে। দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে সকল সেক্টরের মানুষকে নিয়ে সভা করে যাচ্ছি। যদি কোন ধরনের কেউ বিশৃ্খংলা করে তাদেরকে আমরা ছাড় দেব না। বিগত সময়ে বেশ কয়েকটি ঘটনা ফেইক তৈরি করে সমাজে বিরূপ প্রভাব তৈরির বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন গুজব কিছু থাকে। সেগুলো আমরা গুজব বলেই বিশ্বাস করি। কিছু মানুষ থাকেই হঠাৎ করে একটা গুজব ছড়িয়ে দিয়ে জেলার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়। এদের শাস্তি হয়। হয়তো বিশৃঙ্খলার সময়টা মানুষ মনে রাখে। পরেরটা মনে রাখে না। শাস্তি হয় না যে এমন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৫৬০ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হলেও এবছর ৯৫ টি কমে ৪৬৬ টি মন্দিরে পূজা অনুষ্টিত হচ্ছে।