ভারতের ঢলে অসময়ে আক্রান্ত হওয়া নেত্রকোনা জেলার চার উপজেলার পানিবন্দীর পরিস্থিতি অনেকটা উন্নিতির দিকে। এক শনিবার থেকে দ্বিতীয় শনিবার (১২ অক্টোবর) পর্যন্ত গত আটদিনে বন্যার উন্নতি হলেও ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। অনেক স্থানে বেশ কিছু কাঁচাপাকা সড়ক এখনো রয়েছে পানির নিচে। তলিয়ে যাওয়া ফসল ভেসে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু সেগুলোতে আর ধান হবে না। ভেসে গেছে মৎস্য পোনাও। সড়ক-বাড়িঘরের ক্ষতসহ ধানের জমির এমন চিত্র দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পুর্বধলা ও সদরেও।
জেলা প্রশাসন সূত্রে ৪৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, এবার কৃষি জমি তলিয়েছে ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর। যা টাকার অংকে ৩১৩ কোটি টাকা। জেলার ক্ষতিগ্রস্থ মোট কৃষক পরিবার ৬৯ টি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবির জানান, জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় ১৪ ৮০ টি মাছের ঘের ও পুকুর ডুবে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে। ফলে ৭২৩ দশমিক ৪৩ মেট্রিক্সটন পোনামাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার উপরে। তবে এই ক্ষতি আরও বেশি বলে দাবী স্থানীয় চাষীদের।
অন্যািদকে বন্যার কারণে জেলার ক্ষত্রিগস্থ বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ কাঁচা সড়ক এবং পাকা সড়ক এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বহু সড়ক পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান. এলজিইডির অন্তত দুইশ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। যার জন্য আড়াইশ (২৫০) কোটি টাকা লাগবে মেরামতে।
এদিকে সদর উপজেলার ঠাকুরোকোনা ইউনিয়নের কংস নদীর পাড়ের বাইশধার গ্রামের আম্বিয়া খাতুন, মোবারক হোসেন, মোফাজ্জল মিয়াসহ স্থানীয়রা বলেন, আমরা এই ধানের উপর নির্ভরশীল। সন্তানদের লেখাপড়াসহ জীবন চলে এই ফসলে। এই এলাকার কৃষকরা ধনী না। কোন রকমে ফসল কইরা জীবন চালাই। এইবার তিন দফায় জমি লাগানো হয়েছিলো। সব শেষ এই বন্যায়। এখন আর চাষের সময় নাই। সামনে ইরিবোরো মওসুম। গত ইরি মওসুমেও ধানে চোচা হয়ে ক্ষতি হইছে। এইবার কৃষকরা আমরা মরা। ঋন লইয়া জীবনডা ঋণে ঋণে পার হইবো।
তবে কৃষি বিভাগ বা সরকার থেকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেরকে বিনামূল্যে আগামী ইরি মওসমের বীজ, সারসহ কীটনাশক দিলে এই রকম নিঃস্ব হওয়া কৃষকরা বাঁচতে পারবে বলে দাবী তাদের।