নেত্রকোনায় স্থাপিত হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নামে নামকরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বদলে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা ‘নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়’ ফলক টানিয়ে দিয়েছে শহরের রাজুরবাজার অস্থায়ী (টিিিটসি) ক্যাম্পাসে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে ভার্সিটিরি রেজিস্টার ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করে তারা। নাম ফলক পরিবর্তনসহ ১১ দফা দাবী তুলে ধরে। এসময় শিক্ষার্থীদের হাত থেকে রেজিস্টার স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। পাশাপাশি বলেন, এটি একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবী খুনির নামে বিশ^বিদ্যালয় থাকলে জাতি খুনিই হবে। একজন খুনি কখনো আইডল হতে পারে না। তাই তারা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় নামের পরিবর্তে নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয় রেখেছে বলে জানান, সমন্বয়ক হাফসা ইসলাম মুহ, রিফাত রোদোয়ান জয়, সাদমান শাকির সুমন, মাহফুজ আকবরসহ অন্যরা।
এসময় রাজুর বাজার এলাকায় টিটিসি ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের আশপাশের মানুষজন খুশি প্রকাশ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
তারিখ- ০৮ আগস্ট ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ
থেকে দেয়া আল্টিমেটামগুলো হচ্ছে
১/ সহস্র ছাত্র জনতা হত্যা করে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করে, সকল জাতীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে
শেখ হাসিনা কেবল পুরো জাতির কাছে নয়, বরং মানববিশ্বের কাছে গণশত্রু ও ঘৃণ্য অপরাধীতে পরিণত
হয়েছেন।
অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে
নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয় করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
২/ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিণ্ডিকেটের সিদ্ধান্তের সাথে সংগতি রেখে ক্যাম্পাসে দলভিত্তিক ছাত্র-
শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারী রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
অনতিবিলম্বে ছাত্র-সংসদ গঠন
করার লক্ষ্যে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩/ হলের সিট বর্ধন করে, অবৈধ আবাসিকদের বিতাড়িত করে, হল পরিচালনা নীতিমালা শতভাগ অনুসরণ
করে, হল পরিচালনা করতে হবে।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলের নাম নেত্রকোনার দুজন মহান, সর্বজন গ্রহণযোগ্য মানুষের নামে নামকরণ করার জোরালো দাবি রাখছি।
ছেলেদের হল : ‘কমরেড মণি
সিংহ হল’ বা ‘বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ হল’।
মেয়েদের হল : ‘কুমুদিনী হাজং হল।’
হলের ডাইনিং ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা চব্বিশ ঘন্টা চালু রাখতে হবে।
৪/ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যেসকল কর্মী সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অপমান এবং হেনস্তামূলক কথাবার্তা বলেছে,
সন্ত্রাস কার্যক্রম করেছে, হত্যার স্বপক্ষে মিছিল করে হুমকি দিয়েছে এবং প্রকাশ্যে অস্ত্র ও লাঠি ধারণ করে
নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, অনতিবিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এদের মদদদাতা যে বা যারাই ছিলো তাদের চাকুরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
৫/সকল প্রকার বাজেট প্রস্তাবনা, প্রকল্প ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে। দূর্নীতির সাথে সম্পর্কিত প্রমাণ পাওয়া
গেলে শিক্ষক-ছাত্র-কর্মকর্তা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুততম
সময়ের মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬/ দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করতে হবে এবং ক্যান্টিন সুবিধা দিতে হবে।
এক বছরের মধ্যে দুটি হল, একাডেমিক ভবন এবং লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।
৭/ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় সহকারী প্রক্টরকে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের
অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত পালন করায় দুটি হলের সহকারী প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের পদত্যাগ করতে
হবে।
৮/ ডিপার্টমেন্টগুলো থেকে প্রেরিত চাহিদাপত্র অনুযায়ী চার মাস সময়ের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত
করে অনলাইন ক্লাসসমূহ শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।
৯/ প্রাক্তন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার মুখের কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ একর জমি মেডিকেল কলেজকে
হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইঞ্চি জমিও কোথাও দেয়া যাবে না।
বিবৃতির মাধ্যমে এই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এক সপ্তাহের মধ্যে স্পষ্ট করতে হবে।
১০/ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। অনতিবিলম্বে নিম্নোক্ত সুবিধাসমূহ ক্লাস শুরু
হওয়ার সাথে সাথেই বাস্তবায়ন করতে হবে :
* পরিবহন চলাচলের সিডিউল বৃদ্ধি করতে হবে।
*শহরের গুরুত্বপূর্ণ সকল রুটে বাস চলাচল নির্দিষ্ট সময়সূচি মতো নিশ্চিত করতে হবে।
১১/ ক্যাম্পাস হতে হবে সম্পুর্ণরুপে শিক্ষার্থীবান্ধব। শিক্ষার্থীদের নিম্নোক্ত সুযোগ সুবিধাগুলো
অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে :
★বিভিন্ন বর্ষে ভর্তি ফি সহনীয় পর্যায়ে রাখা।
* অবশ্যই এক মাসের মধ্যে অস্থায়ী হল বৃদ্ধি করে নেত্রকোনা শহরের মধ্যে আনতে হবে।
* ছাত্র কল্যাণ তহবিল হতে বৃত্তি, উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এবং মেধা বৃত্তির পরিমান বৃদ্ধি
করতে হবে।
* পরিক্ষা শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।
*ব্যক্তিগত বা অন্যকোনো কারণে শিক্ষার্থীদের ভাইবা বা কোথাও হয়রানি করা যাবে না। পর্দা বা
যেকোনো ধর্মীয় মতাদর্শের প্রতি সম্পূর্ণ সহানুভূতি রাখতে হবে।
*বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ কর্তৃক সকল ধরণের ক্লাব এক্টিভিটিস দ্রুততম সময়ে চালু এবং সক্রিয় রাখার যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
* এক মাসের মধ্যে অস্থায়ী হলগুলোতে ডাইনিং চালু করতে হবে এবং নতুন আইডি কার্ড ও রিডিং রুম চালু করতে হবে।
*শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সুবিধা দিতে হবে।
৭২ ঘণ্টার মধ্যে উপর্যুক্ত দাবিগুলো পূরণের নিশ্চয়তা দিতে না পারলে বর্তমান দলীয় লেজুরবৃত্তিক
সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে এবং ভিসির পদত্যাগ করতে হবে। কোনো প্রকার ছলচাতুরি করা হলে
শিক্ষার্থীরা জোড়দার আন্দোলন গড়ে তুলবে।