চাচার গাড়ি বিক্রির টাকা চুরি করতে গিয়ে দেখে ফেলায় বৃদ্ধ দাদীকে প্রথমে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান ও পরে শ্বাসরোধে হত্যা করে সাম্মান হোসেন সিনহা (১৬)। এ ঘটনায় পুলিশ দুই বন্ধসহ সিনহাকে আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে দাদী জোসনা বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে নিশ্চিত করেন পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান।
এর আগে সোমবার গভীর রাতে নেত্রকোনা পৌর শহরের নিউটাউন এলাকার তালাবদ্ধ ঘরের মেঝেতে পড়েছিল হাত-পা বাঁধা বৃদ্ধা জোসনা বেগমের (৭০) মরদেহ। খবর পেয়ে মডেল থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা মর্গে পাঠায়। বৃদ্ধা জোসনা ওই এলাকার মৃত আব্দুল মুন্সীর স্ত্রী। তিন ছেলে দুই মেয়ের জননী। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে নাজমুল হাসান রুজেল বাদী হয়ে রাতেই নেত্রকোনা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ, স্থানীয়, স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বৃদ্ধা জোসনা স্বামীর ভিটায় একটি ঘরে থাকতেন। পাশের আরেকটি ঘরে বড় ছেলে স্ত্রী ও তাদরে ছেলে মেয়ে থাকতো। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগে বড় ছেলে ওমর ফারুক মিল্টনের স্ত্রী সালমা আক্তার বাবার বাড়িতে যান। এদিকে বড় ছেলেও কাজের জন্য জেলার বাইরে যান। এদিকে বৃদ্ধ জোসনা একাই বাড়িতে ছিলেন। ৭ জানুয়ারী ভোট দিয়ে তিনি ভাইয়ের বাসায় খাওয়া দাওয়া করে দিনভর বসে থেকে রাতে বাড়ি ফিরেন। এরপর দিন তার ছেলে মাকে মোবাইলে না পেয়ে মামাসহ বিভিন্ন জনকে খোঁজ নিতে বলেন। পরের দিন ৮ জানুয়ারী রাতে মামা ফেরদৌস মোল্লা গিয়ে বাইরে তালাবদ্ধ দেখে ঘরের ভেতরে মোবাইল বাজার শব্দে ফাঁক ফোকর দিয়ে খুঁজেন। ঘরের ভেতরে সব অগছালো দেখে তালা ভেঙ্গে দেখেন বোনের মুখ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে।
এরপর পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধারের পরপরই নাতীকে আটক করে। স্থানীয়রা বলেন বৃদ্ধা অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। পাড়ায় সকলের বাসায় বেড়াতেন। তারা এমন নৃংশস হত্যার বিচার চান।
এদিকে নিহতের মেঝো ছেলে তৌফিকুর রহমান রুবেল জানান, তারা তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই অন্য জেলায় থাকেন। বড় ভাই বাড়িতে থাকেন। তার ছোট ভাই রুজেলের একটি গাড়ি বিক্রির প্রায় ১০ লাখের মতো টাকা ঘরে ছিলো। এগুলো নিতেই ভাতিজা তার মাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কারণ ঘরে টাকা বাইরের কেউ জানার কথা নয় সে ছাড়া। তা ছাড়া এই ছেলে মাদক সহ নানা অপকর্মে জড়িত বলেও তারা জানান।
এদিকে আটক সিনহার মা নিহতের বড় ছেলের বউ সালামা জানান, তার ছেলে তার সাথে বাবার বাড়ি গিয়েছিলো। দুদিন আগে আসে নির্বাচনের জন্য মিছিল করতে। পরে আবার ঘটনা খবরে পেয়ে রাতে তার সাথেই আসে।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. লুৎফর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামী আন্ডার এইজ। কিন্তু প্রাথমিকভাবে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। সে টাকা চুরি করতে গেলে দাদী চিনে ফেলায় মেরে ফেলে রাখে। প্রথমে ইনজেশন দিয়ে বেহুশ করে। পরে শ্বাসরোধ করে মেরে হাত পা মুখ বেঁধে ফেলে যায়। এটি তারা পরিকল্পনা নিয়ে করে।