নেত্রকোনার ১৩৫ বছরের পুরনো বিদ্যাপিঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের একমাত্র আয়ের উৎস্য মার্কেট ভাড়ার সিংহভাগ যায় মধ্যসত্ববোগীদের হাতে। বর্তমান সময়েও নামে মাত্র স্কুলে যায় দোকান প্রতি মাসিক ৮৯৫ টাকা। ফলে ব্যয়ভার মেটাতে পকেট কাটে অভিভাবকদেরই। অভিযোগ উঠেছে স্কুলের দ্বিতল এবং তিতল মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানই চুক্তিমুলের্য কয়েক গুন টাকায় অধ্যাপক, ব্যাংকার, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা দ্বিগুন মূল্যেও পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। যার দরুণ চুক্তি ভঙ্গ করেই স্কুলকে নামে মাত্র টাকা দিয়ে অন্যত্র ভাড়া খাটিয়ে আট গুনের অধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। চুক্তিতে সাব ভাড়া বা হস্তান্তর সম্পূর্ন নিষেধ থাকলেও অমান্য করেই অন্যত্র ভাড়া দিয়ে রশিদ বিহীন অর্থ আদায় করছেন তারা। এতে করে বিপাকে ব্যবসায়ীরাও। প্রতিবাদ করলেই তুলে দেয়ার হুমকি। বেশি টাকা গুনলেও মার্কেটে চালু নেই পানি ও টয়লেট ব্যবস্থা। অন্যত্র গিয়ে তাদের সারতে হয় প্রকৃতির ডাক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তারা মুখ খুললেই তাদেরকে উঠিয়ে অন্যত্র দেয়া হবে ভাড়া। এমন হুশিয়ারি সাব ভাড়ায় দেয়া মালিকদের। মালিকগণ তাদেরকে এসকল বিষয়ে কথা বলতে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। স্কুল সূত্রে জানা গেছে, ১৮৮৯ সনে প্রতিষ্ঠিত দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের শুরু থেকেই আয়ের লক্ষ্যে নিচতলা সামনের সারির ২২টিসহ প্রায় ৩০ টির মতো দোকান ভাড়া চলছিল খুব অল্প টাকায় শত বছর ধরে। কিন্তু সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে শিক্ষকদের বেতন সহ সকল আয়ের লক্ষ্যে স্কুলের তিন তলা মার্কেট ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয় গত ২০১৫ সনের ২৩ মার্চে। ২০১৭ সনে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত বরাদ্দ হয়ে ২০২১ সনে তৃতীয় তলা বরাদ্দ হয়। মার্কেটের মোট দোকান ৯৭ টি থাকলেও তৃতীয় তলার ৩২ টি বাদে সবগুলো ভাড়া দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভাড়ার হিসেবে অনুযায়ী প্রতি দোকানে মাসওয়ারি ৮৯৫ টাকা করে স্কুল পায় ৬৫ টি দোকান থেকে মাত্র ৫৮ হাজার ১৭৫ টাকা। অন্যদিকে অন্যত্র ভাড়া দিয়ে প্রতি দোকান থেকে ৭ হাজার ৫শত করে এক মাসেই মাত্র ৩২ দোকানের হিসেব অনুযায়ী টাকা হয় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা। সেখান থেকে স্কুল পায় মাত্র ২৮ হাজার ৬৪০ টাকা। এদিকে স্কুলের একাধিক শিক্ষক জানান, তারা যেদিন হাতে চুক্তি পেয়েছেন সেদিন জানতে পেরেছেন ভাড়া দেয়া হয়েছে দোকান। চাকরি হারাবার ভয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ তাদের। তবে তরুণ উদ্যোক্তো এস আর আপনের অভিযোগ, তিনি স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র হয়েও অন্যায়ের শিকার হয়েছেন।
তিনি জানান, চুক্তিমূল্য দুই লাখ টাকা করে হলেও তারা চার লাখ করে জমা দেন বেশ কয়েকজন। তারা দোকান হবে এই ভরসায় আরও ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচও করেছেন জিনিস পত্র কিনে। কিন্তু মার্কেট কমিটির সম্পাদক নান্টু সরকার তাদেরকে না করে দেন। পরে আবেদনের টাকা ফেরত দেন। তাদের থেকে আরও বেশি টাকায় দোকান দিয়ে দেন বিভিন্ন চাকুরিজীবীদেরকে। এদিকে চাকরির বয়স চলে যাওয়ার ব্যবসার কথা ভাবলেও মাঝখানে ক্ষতির মুখে পড়লাম। অথচ যাদের ব্যবসা নেই তারা স্কুল থেকে নিয়ে বেশি টাকায় অন্যত্র ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছেন। যার কোন রশিদ দেন না ভাড়াটেদেরকে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কেট সমিতির সম্পাদক নান্টু সরকার দায় চাপালেন সরাসরি স্কুল কতৃপক্ষের ওপরেই। তারা টাকা তুলেনও না কিছু জানেনও না। নিচের দোকান দার নিতাই সরকারের স্ত্রীর নামে দোকান নিয়ে সাব ভাড়া দিলেও একটির কথা স্বীকার করেন। অন্যদিকে ৪৪ নং ভাড়াটে সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহিনুল হক শাহীন জানান তিনি নিয়েছিলেন চেম্বার করতে। আরও ৯৬ দোকানের অধিক এভাবেই অনেকে নিয়েছে জানিয়ে ভাড়া দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও তালিকায় তার বাবার নামেও রয়েছে দোকান বরাদ্দ।
যেগুলোর সবকটা ভাড়া দেয়া রয়েছে জানিয়ে বিপরীত দিকের ব্যবসায়ী রতন কুমার দাস বলেন, তিনি তার ৫ টির মধ্যে সাড়ে তিনটি দোকান নিজে করেন। অপর একজন মো. তাজ উদ্দিন বলেন, তার নেয়া দুটি দোকান নিজেদের ছেলেরা করছে কোন ভাড়া নেয়া হয়না। তবে তিনি বলেন, অনেকের থেকে কর্তৃপক্ষ প্রচুর টাকা নিয়েছেন এই বরাদ্দ দেয়াকে কেন্দ্র করে। কিন্তু স্কুলের ফান্ডে ঠিকই দুই লাখ জমা দিয়েছেন। এভাবেই চলছে সব দেখার কেউ নেই। এদিকে ম্যানেজিং কমিটিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সদস্য নিয়ম অনুযায়ী সচিব থাকায় সভপতিরা সব ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও প্রধান শিক্ষক এবি এম শাহজাহান কবীর সাজুও এসকল বিষয় এড়িয়ে যান। তবে দোকান প্রতি দুই লাখ টাকা লিখা কাগজপত্র বুঝে পেয়েছেন জানিয়ে চুক্তি দেখিয় বলেন পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে কোন দোকান সাব ভাড়া বা হস্তান্তরের কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি তিনিও শুনছেন বলে জানান।
দোকান বরাদ্দকালীন সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান খান রতন বলেন ছেলে মেয়ের নামে নিতেই পারেন দোকান। টাকা দিয়ে নিয়েছেন দোষের কিছু নেই। তবে অনিয়মের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে দোষ চাপান শিক্ষক সহ পরবর্তী সভাপতিদের উপরে। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট অসিত সরকার সজল বলেন, আমি এক মাস হয় দায়িত্ব পেয়েছি। আগের বিষয়ে কিছু জানিনা। এখনের কাগজ ঘেটে দেখেছি কাগজে কোন গন্ডগোল নেই।