হুমায়ুন করির, কেন্দুয়া:
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধে লাঞ্ছিত ও হামলা ভাংচুরের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে।ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার (৩০ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউপির বালিজুড়া তরফপাড়া গ্রামে।
এ ঘটনায় উভয়পক্ষ রবিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় কেন্দুয়া থানায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ দাখিল করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বালিজুড়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন খানের ছেলে সারোয়ার জাহান রেণু দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় ব্যবসা করেন।
তার সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ দেখা দেয় একই গ্রামের বসতবাসকারী আশুজিয়া জেএনসি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মৌলভী শিক্ষক মফিজুর রহমান ভূঁঞার। এ ঘটনায় সারোয়ার জাহান রেণুর বিরুদ্ধে মফিজুর রহমান থানায় অভিযোগ করেন তার বাড়ীতে হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের।
অপর দিকে শিক্ষক মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সারোয়ার জাহান রেণু। তিনি মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগে উল্লেখ করেন সাড়ে আট কাঠা (৮৬ শতাংশ) জমি বিক্রি করে দিলেও দীর্ঘ দিনেও সারোয়ার জাহান রেণুকে রেজিষ্ট্রি করে না দেওয়া এবং তার আগুনে পোড়া স্ত্রীকে ঢাকার বার্ণ ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়া ও মেয়ের বিয়ের সময় সাড়ে ৭ লাখ টাকা হাওলাত নিয়ে এখন অস্বীকার করা ইত্যাদি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সারোয়ার জাহান রেণু জানান, শিক্ষক মফিজুর রহমান আমার চাচাত ভগ্নিপতি। তিনি আমার অভিভাবকের মত। তার গ্রামের বাড়ী ছিল একই উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের বীরমহুরী গ্রামে। তিনি আমার চাচার একমাত্র মেয়ে (আর কোন সন্তান না থাকায়) কামরুন্নাহারকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতেই থাকেন।
এক সময় আমাদের বেশ কিছু জমি ক্রয় করেন তিনি। সেই সমস্ত জমি থেকে ৭ বছর পূর্বে আমি তার কাছ থেকে ৮ কাঠা ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করি। জমির দখল দিলেও কাওলা করে দেননি। এরই মধ্যে তার ২ মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে এবং স্ত্রীর চিকিৎসার সময় আমার কাছ থেকে আরো সাড়ে ৭ লাখ টাকা ধার নেন।
কিন্তু দীর্ঘ দিনেও জমি রেজিষ্ট্রি এবং হাওলাত টাকা ফেরৎ দেননি। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর তার বাড়িতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে ভগ্নিপতি মফিজুর রহমান জমি ও টাকা দেবেনা বলে জানান এবং ছেলেদের নিয়ে আমার গায়ের পাঞ্জাবী ছিঁড়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং সঙ্গে থাকা ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
খবর পেয়ে আমাদের লোকজন তাদের বাড়ী যায় ঠিকই কিন্তু ভাংচুর বা লুটপাট করেননি।
এগুলো তার সাজানো নাটক। আমাকে জমি এবং টাকা না দেওয়ার জন্য থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেন। এমনকি ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ এসে দেখতে পান আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যে।
রেণুর বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবী করে গ্রামবাসীর পক্ষে জানু সরকার, আলম খান, কলেজ শিক্ষক ফারুক আহমেদ, তৌহিদুর রহমান, খোকন খান, বাহারুল, রতন, সুমনসহ অনেকেই মৌলভী শিক্ষক মফিজুর রহমান ভূঁঞা ওরফে হারেছ মাষ্টারকে একজন ভূমিলোভী, ধুরন্ধর লেবাসধারী কুচক্রী লোক বলে মন্তব্য করেন।
তারা আরও বলেন, তিনি গ্রামের ফারুক আহমেদ, নূরুল ইসলামের সঙ্গেও জমি নিয়ে প্রতারণা করে চলেছেন।
তারাও মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিকার চান।
বিষয়টির খোঁজ নিতে মফিজুর রহমানের বাড়ী গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ছেলে মেয়েরা জানান, সারোয়ার জাহান রেণুর নেতৃত্বে শুক্রবার দুপুরে রেণুর লোকজন বাড়ীতে হামলা ভাংচুর করে টাকা ও সোনার গহনা নিয়ে যায়। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কেন্দুয়ায় এসে কথা হয় মফিজুর রহমানের সাথে।
তিনি সাংবাদিকদের কাছে সারোয়ার জাহান রেণুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার কাছে সাড়ে ৮ কাঠা জমি বিক্রি করেছি এবং রেজিষ্ট্রি করে দিতে খারিজ করতে এসিল্যান্ড অফিসে আবেদনও করেছিলাম।
কিন্তু তাদেরই চাচাত ভাই আবুল মিয়া ও খোকন মিয়া অফিসে অভিযোগ করে খারিজ আটকে দেয়। সাড়ে ৭ লাখ টাকা হাওলাত নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, এ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোন টাকা হাওলাত আনিনি।
পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ প্রসঙ্গে কেন্দুয়া থানার ওসি কাজী শাহ নেওয়াজ জানান, পাল্টা-পাল্টি দু’টি অভিযোগ পেয়েছি। মফিজুর রহমানের অভিযোগটি আমলে নেওয়া হয়েছে এবং সারোয়ার জাহান রেণুর অভিযোগটিরও তদন্ত হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।