Thursday, December 5, 2024
মূলপাতাঅন্যান্যনেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে নদী খনন না করে বাঁধের কারণে কমছে জমির উর্বরতাসহ মাছের...

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে নদী খনন না করে বাঁধের কারণে কমছে জমির উর্বরতাসহ মাছের উৎপাদন

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে দিনে দিনে কমে যাচ্ছে কৃষি জমির উর্বরতা।আশংকাজনক হারে উৎপাদন কমছে মিঠা পানির মৎস্য সম্পদ। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। প্রভাব পড়ছে জনজীবনে।

এলাকার কৃষকসহ সংশ্লিষ্টদের মতে হাওরের কৃষি এবং মৎস্য দুটো সম্পদকেই সমানতালে রক্ষা করতে এখুনি পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।
অতিসত্ত্বর জলাশয় গুলোকে সচল করার মাধ্যমে বাঁচাতে হবে কৃষি ও মৎস্য সম্পদসহ জীববৈচিত্র্য।
এতে করে হাওরের জীবন মান যেমন উন্নত হবে তেমনি সরকারের অর্থ অপচয় কমে আসবে। ধানেরও ফলনও বাড়বে। মাছ উৎপাদন বেড়ে কর্ম ফিরবে জেলেদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাওর বাওর মৈষের শিং। তিনে মিলে মৈমনসিং। এমন একটি প্রবাদ চলমান রয়েছে এ অঞ্চলে। তার প্রধান কারান এই ময়মনসিংহের অন্যতম জেলা নেত্রকোনা। এ জেলার বিশাল অংশ জুরে হাওরাঞ্চল। ধান এবং মাছে উদ্বৃত্ত জেলা এটি।
জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে প্রায় ৬ টিতেই হাওর বিদ্যমান। এই হাওরাঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল দেশের একটি বড় অংশের চাহিদা মেটাচ্ছে। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরেই অপরিকল্পিতভাবে শুধু ধান রক্ষা করতে গিয়ে ভরাট হচ্ছে বিশাল জলাভূমি। নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বর শক্তি। ফলন কমে গেছে ধানের। সেচ সংকটে পড়েন চাষীরা। মাছ কমে যাওয়ায় মৎস্যজীবিদের পেশা বদলে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন অনেকে।
সংশ্লষ্ট দপ্তরসহ পরিবেশ গবেষণাকারী সংস্থা বারসিকের আঞ্চলিক সমস্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান জানায়, হাওরাঞ্চলে একসময় হাজারো খাল নালা থাকলেও বর্তমানে খাল রয়েছে ৫১২ টি। হাওর রয়েছে ৬৬ টি। নদী রয়েছে ১১ টির মতোন।
এছাড়ও বাওরসহ অসংখ্য নালা রয়েছে। কিন্তু সবগুলোই এখন মৃত প্রায়। ফলে কৃষিতে সেচ সংক্টট সহ মাছের উৎপাদন কমে গেছে তিনগুন। জেলায় এক লক্ষ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হলেও শুধুমাত্র হাওরাঞ্চলেই হয় অর্ধেক। কিন্তু পরিকল্পনা ছাড়া বছর বছর ধান রক্ষায় নদীর পাড় ধরে বালি এবং মাটির দিয়ে বাঁধ দেয়ায় পরবর্তীতে এসকল মাটি জলাশয় এবং ধানের জমিতে পড়ে মাছের প্রজননে বাধা সৃষ্টিসহ জমির উর্বরতা নষ্ট করছে।
এছাড়ও ডুবন্ত সড়কে নীচু এবং ছোট ছোট বক্সকালর্ভাট করায় পানির গতিপথ বিঘ্নিত হয়ে শুকনো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
যে কারনে হাওরের কৃষক এবং জেলেদের পেশা বদলে অর্থনীতিতে পড়ছে প্রভাব। একটি সুবিধা হলেও অন্যদিকে বিপর্যস্ত হচ্ছে। ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের। হাওরেই শুধু প্রকৃত জেলে ছিলো ৪৩০০। তাদের অনেকেই ভিন্ন পেশায় চলে গেছে। অন্যরা যারা প্রভাবশালীদের ফিশারি ও জলমহালে শ্রমিকের কাজ করে।
আরও জানা গেছে, জেলার হাওরাঞ্চলে ৪২ হাজর হেক্টর জমির মধ্যে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়।
অথচ শুধুমাত্র হাওরের ৪০ হাজার হেক্টর জমিতেই মাছ উৎপাদন হয়।
স্থানীয় কৃষক সুজন মিয়া, রইস উদ্দিনসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের দাবী এতো বড় জলাশয়গুলোকে পানির ধারণের উপযুক্ত করে দিলে যেমন পানি উপচে জমিতে যাবেনা। তেমনি সেচ কার্যসহ মাছের উৎপাদন আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। নদীর পাড়ে অন্য স্থান থেকে মাটি দিয়ে উঁচু করতে হবে না। নদী গভীর হলেই পানি এমনিতেই নদীতে থাকবে। জীব বৈচিত্র্য প্রাণ পাবে। দুযোর্গ থেকে রক্ষা পাবে জনপদ।
জলাশয়গুলোর মাটি দিয়েই কোন কোন স্থানে প্রয়োজনমত বাঁধ তৈরী হবে। সরকারের টাকা অপচয় কম হবে।
২০২২ থেকে ২০২৩ সনে শুকনো মওসুমে জরিপের ভিত্তিতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, হাওরে বাঁেধর কারনে মাছের মাইগ্রেশন বাঁধাগ্রস্থ হয়। অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিলে এই সমস্যটা হয়। তিনি বলেন, জলাভূমি খনন করে জলাশয়ের গতিধারা ঠিক করে দিলে ফসলও রক্ষা হবে মাছের উৎপাদনও বাড়বে। কারন মাছের প্রজনন কম হওয়ায় উৎপাদনের প্রবণতা কমে যাচ্ছে। মাছ বর্ষা এবং শুকনো উভয়কালেই পাওয়া যায়। সুতরাং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় নিয়ে খননের বিকল্প নেই। খনন করলে বারবার সেই খননের মাটি পাড়ে দেয়া যায়। বাড়তি মাটিতে জলাশয় গুলো ভরাট হয় না। এতে মাছের যে অভাসস্থল সেটিও ধ্বংস হয় না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, পরিকল্পনা নিয়ে রিজার্ভ পানির জায়গাগুলোকে প্রক্রিয়া করে দিলে পানি উপচে পড়বে না। কৃষির যে উর্ববরতা নষ্ট হচ্ছে সেটি হবে না। পাশাপাশি সেচের সমস্যা দূর হবে। নলকূপ দিয়ে বিদুৎ খরচ করে জমিতে সেচ দিতে হবে না। প্রাকৃতিভাবে এবং খরচ ছাড়াই কৃষক সেচ চালাতে পারবে। এতে ধানের মূল্য না বাড়লেও সেচের জন্য আলাদা খরচ না লাগায় লাভের পাল্লাই ভারী থাকবে। এরজন্য একটি সূদূর প্রসারি চিন্তা নিতে হবে বলেও জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহানও জানান, যেভাবে প্রতিবছর হাওরে ডুবন্ত বাঁধের জন্য মাটি দেয়া হচ্ছে তাতে অল্প সময়ের মধ্যে মাটির একটা স্কেয়ারসিটি পরিলক্ষিত হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ প্রতিবছর বিপুল যে পরিমাণ মাটি উত্তোলন করে বাঁধ দেয়া হচ্ছে এতে জীব বৈচিত্র্য থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক পরিবেশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন একটি হাওরভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান করা হলে সে অনুযায়ী প্রকল্প নিলে সরকারের অর্থও অপচয় রোধ হবে সেইসাথে জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। ইতিমধ্যে সরকার হাওর প্লান মাথায় নিয়েছে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
উল্লেখ্য, এবারো হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ দিয়েছে ২১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
হাওরের বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) করে কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ হয়।
পরবর্তীতে বর্ষার আগে আর হাওরের এসকল বাঁধ কাটা হয় না। মাটিও অপসারণ হয় না। যে কারণে প্রতিবছর নাব্যতা কমতে কমতে হাওরে এখন আর পানিই থাকে না। বর্ষার মওসুম পেরিয়ে অনেক সময় পানি আসে। পরবর্তীতে যেতেও দেরি হয়। যে কারণে ইরি বোরো আবাদে সময় ক্ষেপন হয়।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সর্বশেষ সংবাদ

Recent Comments