ফজলুল হক রোমান, নেত্রকোনা
নেত্রকোনার বিভিন্ন অঞ্চলে এখন ঢেউ খেলানো দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ সরিষার ফুলের মৌ মৌ গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জরনে প্রকৃতি সেজেছে তার নিজস্ব আলোয়। এছাড়া নানান প্রজাতির পাখির কলরব, ফসলের মাঠে কাজের ফাঁকে মনের আনন্দে কৃষকের ভাটিয়ালী গান, দূরন্ত শিশুদের ছোটাছুটি, দৌঁড়ঝাপ আর ঘোমটাটানা লজ্জাবতী কৃষাণীদের আনাগোনায় নয়নজোড়া মাতাল করা মধুময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কৃষকগন আশানুরূপ ফসল ফলাতে পারেননি। কিন্তু চলতি মওসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলল হয়েছে। অন্যান্য ফসল ফলাতে সাধারনত খরচ বেশী হয়ে থাকে। কিন্তু তুলনামূলক সরিষার উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং বাজার মূল্য ভাল হবার কারনে কৃষকগন দিন দিন সরিষা চাষের প্রতি অধিক আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
হাওরাঞ্চল মদনের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রকৃতি যেন হলুদ রঙ্গে মেতে উঠেছে। সরিষার ফুলে ঝাকে ঝাকে মৌমাছির গুঞ্জরন চলছে। চারদিকে হলুদ রঙের মাখামাখি আর দিগন্তজুরে শীতের হালকা কুয়াশায় নয়নজোড়া প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য্যে সহযেই যে কেউ বিমোহিত হতে পারেন।
মদন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে এই উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা থরা হয়েছিল ২৩০ হেক্টর। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ২৫০ হেক্টর।
এই এলাকায় সাধারনত ছয় জাতের সরিষা আবাদ হয়ে থাকে। আর তা হলো উচ্চফলনশীল (উফশী) সরিষা বারী-৯, বারী-১৪, বারী-১৫, এসএম-৭৫, টরি-৭ ও সম্পদ জাতীয় সরিষা অন্যতম। উৎপাদিত এইসব সরিষা মাঘ মাসের শেষান্তে ও ফাল্গুন মাসের শুরুতে ক্ষেত থেকে সরিষা তোলা শুরু হবে।
উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে যে সব জমিজিরাত পতিত থাকতো এহন ওইগুলানতে সইরষা লাগাইছি। লাগাইতে ট্যাহাও যেম কম লাগে আবার কষ্টও কম হয়। আমার পতিত ৮৫ শতক জায়গাতে এইবার সইরষা লাগাইছলাম। ফুল ধইরা হন হলদে হইয়া গেছে।’
অপর কৃষক আব্দুল মন্নাফ বলেন, ‘আমি আগেও সইরষা চাষ করতাম। কিন্তু এইবার ক্ষেতের দিকে তাকাইলে মনটা এক্কেরে জুড়াইয়া যায়।
মদন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: নাজমুল হাসান জানান, এই উপজেলার মাটি সরিষা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এবং আশানুরূপ আবাদের কারনে কৃষকগন দিন দিন সরিষার প্রতি ঝুকছেন। সরিষা উৎপাদনে কৃষকগন হয়তো আগামীতে আরো মনযোগী হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।