ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নেত্রকোনার পুর্বধলার হিরনপুর গ্রামের মো. সেলিম (২৪) মারা যান গত ১৮ মে। পরে লাশ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) দেশে ফেরত আসেন স্ত্রী বিলকিস আক্তার (২১) ও পিতা আবুল কালাম (৫৫)। গতকাল শুক্রবার (২১ মে) উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের হিরনপুর বৌলাম মড়ল বাড়িতে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে মৃতের দাফন শেষে সন্ধ্যায় স্ত্রী ও বাবাকে জেলা প্রশাসন নেত্রকোনা ময়মনসিংহ সড়কের রাজেন্দ্রপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাত্রাবাসে কোয়ারেন্টাইনে রাখেন। শনিবার (২২ মে) দুপুরে শ্বশুর এবং পুত্রবধুর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করালে করোনা পজিটিভ আসে। এর পর থেকে জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসা সহ আইসোলেশন নিশ্চিত করা হয়। এর আগে ১২ মার্চ সেলিমসহ তারা তিনজন ভারতে গিয়েছিলেন সেলিমের চিকিৎসা করাতে।
এদিকে পুর্বধলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের হিরনপুর বৌলাম গ্রামের বাড়িটি লক ডাউনের আওতায় নেয়া হয়েছে। সেই সাথে ওই বাড়ি এবং মৃত সেলিমকে দেখতে আসা অন্যদেরও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করানোর ব্যাবস্থা নিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় এ পর্যন্ত এক হাজার একশত চৌদ্দ (১১১৪) জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯১২ জন সুস্থ হয়েছেন। শনিবার পর্যন্ত ১২২ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ভারত ফেরত এই দুজনকে এই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট সরকারি হিসেবে ২০ জন করোনায় মারা গিয়েছে।
এদিকে জেলা সদর হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড থাকলেও কোন রোগী থাকার অবস্থা না থাকায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাত্রাবাসে এই প্রথম দুজনের থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। যদিও প্রশাসন বলছে হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড সচল করা হয়েছে। একদিকে শহরের বাইরে অন্যদিকে নামে মাত্র হাসপাতাল কিন্তু থাকার জন্য কোন ধরনের সুযোগ নেই।
ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় রেড জোন লিখা সিরিতে জন সাধারণের চলাচল নিষেধ লিখা ব্যানার টানানো। কিন্তু ওয়ার্ডের সকল কক্ষই তালাবদ্ধ। তবে আইলোশনের ভিআইপি ক্যাবিনে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসক কাজি মো আবদুর রহমান জানিয়েছেন, কোন ধরনের সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য তারা যুব উন্নয়নে রেখেছেন দুজনকে। তাদের কোভিড কোন ধরনের এটি বের করতে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াও হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ড সচল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। পিসি আর ল্যাব না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, এন্টিজেন কীট আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ। এক্সপার্ট দুটো মেশিনও স্থাপন করা হয়েছে। যাতে ৪৫ মিনিটে রেজাল্ট পাওয়া যাবে। পাশাপাশি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে আইসিইউ সহ সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ চলছে। ৯৫ ভাগ কাজই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। আগামী ৩০ মে’র মধ্যে পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
এছাড়াও মাস্ক বিতরণ সচেতনতা কার্যক্রমসহ খাদ্য সয়াহতা চালু রযেছে। তিনি আরো জানান, কোথায় কোন স্থানে ভারত ফেরত কেউ আসার খবর পেলে জেলা প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ করেন। তাদেরকে স্বাস্থ্য সহায়তা সহ সকল ধরনের সাপোর্ট দিয়ে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হবে। যাতে করে নেত্রকোনা জেলা করোনার মারাত্মক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে। তাই তথ্য দিয়ে সহায়তার অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি যাদের মধ্যে করোনার উপস্বর্গ দেখা দেবে তারা যেনো দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করান।