নেত্রকোণার ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর। পাহাড়ি ও সমতল ভূমির ঘেরা এই অঞ্চলে কৃষক কৃষিকাজে পাশাপাশি পশু পাখি পালন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
প্রতিবছরই কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বিশেষ করে গরুর প্রতি বিশেষ নজর থাকে কৃষকদের। বাড়ির পাশেই ছোট্ট গোয়াল ঘরে ১/২ করে গরু পালন করতে দেখা যায় গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতে।
তবে দেশি প্রজাতির গরু আকার-আকৃতিতে তেমন বড় না হলেও ১ থেকে দু লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়। এর মাঝে বড় আকৃতির লালন পালন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন উপজেলার চন্ডিগড় গ্রামের কৃষক আজিজুল হক।
স্বামী-স্ত্রী মিলে মাত্র ১৫ মাসের লালন-পালনে একটি ১ টন ওজনের গরু তৈরি করেছেন তারা। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরুটি এখন তাদের চেয়েও উঁচু ।
২০১৯ সালে স্থানীয় এক খামারি কাছ থেকে নেদারল্যান্ডের উন্নত পিজিএম জাতের গরুটি কিনেন তিনি । এরপর মাত্র ৮ মাসের পরিচর্যাই গত বছর কোরবানির ঈদে গরুটির দাম হয় প্রায় দুই লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু আজিজুল গরুটিকে বিক্রি না করে সিদ্ধান্ত নেন আরও পরিচর্যা ।
এরপর থেকে তার বাড়ির উঠানে ছোট্ট একটি চালাঘরে গরুটির রাখার ব্যবস্থা করে শুরু করেন পরিচর্যা। তিন বেলা খড়, ভুসি সহ প্রাকৃতিক খাবার ও নিয়মিত গোসল করেন পরিচর্যা। এছাড়া গরম থেকে বাঁচতে চালা ঘরের উপরে দুইটি ফ্যানের ব্যবস্থা করেছেন আজিজুল ।
শুধু আজিজুল নয় গরুটির নিয়মিত পরিচর্যা করেন তাঁর সহধর্মিনী সাহিদা বেগম ও চার বছরের সন্তান সোহাগও। তাদের পরম আদর যত্নে বেড়ে উঠা গরুটির নাম রেখেছেন ভাগ্যরাজ। কোন প্রকার রাসায়নিক ঔষধ কিংবা মোটাতাজাকরণের ওষুধের পরিবর্তে প্রাকৃতিক খাবারের উপরে ভরসা করেন আজিজুল ।
কালো লালচে রঙের এই গরুটির প্রায় সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার । আকার আকৃতি ও আকর্ষণীয় রঙের হওয়া ইতিমধ্যেই সবার কাছেই বেশ সাড়া ফেলেছে। আসছে কুরবানি ঈদ সামনে রেখে গরুটির পরিচর্যা ও বেড়ে গেছে দ্বিগুণ । এবারের ঈদে ভালো দামে গরুটিকে ব্যক্তির স্বপ্ন দেখছেন আজিজুল।
মূলত ঘরের ভিতরে লালন পালন করায় একেবারে শান্ত প্রকৃতির গরুটি । তবে বাহিরে বের করতে আজিজুলকে নিতে হয় বিশেষ প্রস্তুতিও। গরুটির শক্তির কাছে ধরাশায়ী ৫/৬ জন । তাই মাঝেমধ্যেই গরুটিকে বাড়ির বাহিরে বের করলে প্রায় ছয় থেকে সাত জনের অভিজ্ঞ দল নিয়েই বের করেন আজিজুল।
এদিকে উপজেলায় প্রথমবারের মতো এমন বৃহৎ আকারের গুরু লালন পালনের খবর শুনে প্রতিদিনই আজিজুরের বাড়িতে ঘরুটি কে দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। থেমে নেই ক্রেতা-বিক্রেতারাও। এখন আজিজুলের দেখাদেখি স্থানীয় কৃষকরাও উৎসাহিত হয়েছেন এমন বৃহৎ আকারের গরু পালনের ।