বালি সহনশীল ধান হিসেবে মালশিরা ধান চাষ করে সফল হয়েছেন পাহাড়ী অঞ্চলের কৃষকরা। সাতজন কৃষক প্রথমে পরীক্ষামুলক চাষ করে সফল হওয়ায় সংখ্যা বেড়ে ২৭ জন কৃষকে উন্নীত হয়েছে। এই ধানটি সীমান্তে পাহাড়ি বালু মোকাবেলা করে ফলন দিচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে পাহাড়ী ঢলে বন্যায় প্রচুর বালি এসে আদিবাসি, বাঙ্গালীদের কৃষি জমি অনুর্বর জমিতে পরিণত করেছে। এলাকার অনেক জমি ফসল চাষের বাহিরে পড়ে রয়েছে। ফলে প্রান্তিক কৃষক তার জমিতে ফলস ফলাতে পারছিলেননা।
কলমাকান্দার পর্যটনখ্যাত সীমান্ত পাঁচগাওয়ের চন্দ্রডিঙ্গা, বেতগড়া, বাঘবের, সন্যাসীপাড়া, পাতলাবন, হাতিবের, উত্তর লেংগুরাসহ ২৭ টি সীমান্ত গ্রামের কৃষকরা বালি ও সেচের পানির সংকট মোকাবেলা করতে না পেরে স্থানীয়ভাবে অনেক কৃষক উদ্বাস্তু হয়েছে। শত শত উর্বর ফসলি জমি অনাবাদিতে পরিণত হয়েছে।
বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহায়তায় কৃষক নেতৃত্বে বালি ও খরা মোকাবেলায় প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে চন্দ্রডিঙ্গা, বেতগড়া, বাঘবের, সন্যাসীপাড়া, পাতলাবন, উত্তর লেংগুরা গ্রামের কৃষকেরা বালি সহনশীল শস্যফসল চাষ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গত ২০২০ সাল থেকে।
সীমান্ত এলাকার বালিতে নষ্ট হওয়া জমিগুলোতে গত তিন বছর কৃষকদের নেতৃত্বে ধানজাত গবেষণা করে চলেছে কৃষক।
কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের ‘চন্দ্রডিঙ্গা বাঁধরক্ষা কমিটির’ সদস্যরা পানি সহনশীল বালিতে উপযোগি সে সব ধান সেগুলো নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার রামেশ^রপুর গ্রামের তুষাই পাড়ের কৃষক সংগঠনের কাছ থেকে ২০ টি স্থানীয় ধানের জাত সংগ্রহ করে চাষ করে পরীক্ষা করছিলেন। ২০২১ সালে গবেষণা প্লট থেকে মালশিরা, খেকশিয়া, বিশালী বিন্নি ধান বাছাই করেন। ২০২২, ২০২৩ সালে ধানজাত গবেষণা প্লট থেকে মাঠদিসবের মাধ্যমে মালশিরা ধান পছন্দ করে নিয়ে যান ৭ জন কৃষক।
পরে এবছর চন্দ্রডিঙ্গা, বাঘবেড়, বেতগড়া, গোবিন্দপুর, নয়াপাড়া, খারনৈ, তারানগর, শিবপুর, মনতলা, উত্তরলেংগুরা, গৌরিপুর, বেতুয়াতলী, নলছাপ্রাসহ ১৪ গ্রামের পরিমল রেমা, গ্রেগরি ম্রং, কেরুপ কুবি, পুলক কুবি, সুনীল ম্রং, আব্দুর রাজ্জাক, যন্ত্র হাজং, এলিয় ম্রং, জসিন্তা রেমা, আব্দুল মান্নান, ভুট্টো মিয়া, সলিতা চিসিম, শহিদুল আলম, তারা নকরেক, প্রত্যয় জাম্বিল, আব্দুল হেলিম, নুরে আলমসহ ২৭ জন কৃষক বালি জমিতে মালশিরা ধান চাষ করে সফল হয়েছেন।
চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের কৃষক পরিমল রেমা বলেন, “আমি ৪০ শতাংশ জমিতে মালশিরা ধান চাষ করে ২৪ মণ ধান পেয়েছি। গতবছর আমার কাছ থেকে আরো ৫ জন কৃষক মালশিরা ধানের বীজ নিয়েছিল। এবছর মাঠদিবসে ১১ জন কৃষক মালশিরা ধানের বীজ পছন্দ করেছেন।
”মালশিরা” ধান এখন সীমান্ত অঞ্চলের বালি সমস্যা মোকাবেলায় কৃষকের ভরসা হয়ে উঠেছে। পছন্দের কারণ হিসেবে কৃষকেরা বলছেন, মালশিরা ধান বালি ও দোআশ মাটি উভয় জমিতেই ভালো হচ্ছে।
ফলন ১০ শতকে ৬ থেকে ৭ মণ। ধানের শীষে সব ধানই পুষ্ট। ধানগাছ হেলে পড়েনা। রোগবালাই কম। বীজ রাখা যায়। ১২৪ দিনে ফলন পাওয়া যায়। আগামী বছর কলমাকান্দার বালি দুর্যোগ মোকাবেলায় মালশিরা ধান গ্রামে ছড়িয়ে পরবে বলে স্থানীয় কৃষকদের ধারণা।