ফয়েজ আহম্মদ হৃদয়, মদন: নেত্রকোনার মদনে মামলা করে বিপাকে পড়েছে বাদী তানিয়া আক্তার শিপা।
আসামিগণ ও তাদের প্রভাবশালী আত্মীয় স্বজনদের হুমকিতে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় শিশু সন্তান নিয়ে জীবন যাপন করছে সে। তদন্ত কর্মকর্তা আসামীগণের অবৈধ প্রভাবে দায়েরকৃত মামলার মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদনের দেয়ায় ন্যয় বিচার পাবে কি না এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। মঙ্গলবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) নেত্রকোনার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ন্যয় বিচারের আশায় নারাজী দিয়েছেন বাদী।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের শহীদ মিয়ার মেয়ে মোছাঃ তানিয়া আক্তার শিপা। মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের মৃত নূর উদ্দিন ভূইয়ার ছেলে মোঃ কামরুল ভূইয়ার সাথে ২০১৮ সালের ২১ জুলাই মাসে মুসলিম শরীয়তের বিধান মতে বিয়ে হয় তার।
এক বছর বয়সী অহি ভূইয়া নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে তাদের। স্বামী কামরুল ভূইয়া ফলের ব্যবসা করার জন্য স্ত্রী শিপার বাবার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ধার নেয়। স্বামী কামরুল ও তার পরিবারের লোকজন পুনরায় ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে কয়েক দফা মারপিট করে করে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর হত্যার চেষ্টা করলে ১০ ডিসেম্বর মদন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় শিপা।
বিচার চেয়ে স্বামী কামরুল ভূইয়াসহ তার পরিবারের চারজনকে আসামি ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে নেত্রকোনার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি (নারী শিশু মামলা নং-৭৩২/২০২০) মামলা দায়ের করেন।
তানিয়ার শাশুরী রহিছা আক্তার মারপিট ও ১ লাখ টাকা চুরির অভিযোগ এনে তানিয়াকে আসামি করে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আমলী আদালত,মদন-নেত্রকোনায় একটি মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত তানিয়ার দায়েরকৃত মামলাটির অনুসন্ধান প্রতিবেদনের জন্য ওসি মদন থানাকে আদেশ দেয়।
অনুসন্ধান তদন্ত প্রতিবেদনকারী কর্মকর্তা এস আই মোশারফ হোসেন মামলা তদন্তের কথা বলে ৫ হাজার ৫০০ টাকা খরচ নেয় বাদী তানিয়ার নিকট হতে। পরে আসামীগণের অবৈধ প্রভাবে দায়েরকৃত মামলার মিথ্যা,বানোয়াট অনুসন্ধান তদন্ত প্রতিবেদন ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারী আদালতে দাখিল করে।
ন্যয় বিচারের আশায় নেত্রকোনার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মঙ্গলবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দিয়েছেন বাদী তানিয়া আক্তার।
শুক্রবার(২৬ ফেব্রুয়ারি) বাদী মোছাঃ তানিয়া আক্তার শিপা এ প্রতিনিধিকে বলেন, স্বামী কামরুল ভূইয়া ও তার পরিবারের লোকজন আমাকে দফায় দফায় অত্যাচার মারপিট করতো যৌতুকের টাকার জন্য। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর তারা আমাকে মারপিট করলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা আমার বাবাকে ডেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
কোথায় কোনো বিচার না পেয়ে আমি আদালতে মামলা দায়ের করি। এর পর আমার শাশুরী আমার নামে একটি মারপিট ও চুরির মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে আদালতে গেলে খুন করবে বলেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আসামিগণ ও তার প্রভাবশালী আত্মীয় স্বজনরা।
তিনি আরো বলেন,মদন থানার এস আই মোশারফ হোসেন দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত করার জন্য আমার নিকট হতে ৫হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর তারিখ দেখিয়ে বানোয়াট প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে। ঘটনা ঘটার ৪ দিন আগের তারিখ দিয়ে কিভাবে তিনি প্রতিবেদন দাখিল করেছে তা বুঝে উঠতে পারছি না।
আমি প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দেয়ায় আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। আমাকে তালাক না দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ তাসলিমা নামের আরেক মেয়েকে বিয়ে করেছে কামরুল। বর্তমানে আমি আমার সন্তান ও পরিবার নিয়ে তাদের হুমকিতে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
তানিয়া আক্তার শিপার স্বামী আসামি কামরুল ভূইয়া মোবাইল ফোনে জানান, আমি কোর্টের মাধ্যেমে তাকে তালাক দিয়ে নতুন বিয়ে করেছি। তাকে ও তার পরিবারকে কোনো রকম হুমকি দেয়নি।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মদন থানার এস আই মোশারফ হোসেন বলেন, তানিয়া আক্তার শিপার দায়েরকৃত মামলার অনুসন্ধান প্রতিবেদন সাক্ষীগনের জবানবন্ধীর ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল দেখানো হয়েছে ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর। ঘনটার ৪ দিন আগে কিভাবে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ভুল হয়ে গেছে তার জন্য নিঃশ^র্ত ক্ষমা চেয়ে নেব। টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন তানিয়া আমাকে টাকা দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি তা নিয়নি।
মদন থানার ওসি মাসুদুজ্জামান জানান, তানিয়া আক্তার শিপার দায়েরকৃত মামলার অনুসন্ধান তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। যাকে দায়িত্ব দিয়েছি সে প্রতিবেদন দিয়েছে এতে আমার কিছু করার নেই।