নেত্রকোনা শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে খোঁজ খবর নিয়ে মানুষ বাইরে যেতেই অল্প সময়ের মধ্যে চুরি সেরে নেন একদল চোর চক্র। তাদের মধ্যে অন্যতম কম বয়সী দুই পেশাদার নারী চোর। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে চুরি করে যাওয়া চক্রের দুই সদস্যরা অবশেষে পুলিশের জালে আটকা পড়লো।
শুক্রবার রাতে শহরের জয়নগরের এক বাসায় চুরিকালে তাদেরকে হাতেনাতে আটক করে নেত্রকোনা মডেল থানার পুলিশ। তবে পালিয়ে যায় তাদের সাথে থাকা পুরুষ দলের এক সদস্য।
আটকরা হলেন, নেত্রকোনা সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের আমলি কেশবপুর গ্রামের মামুন মিয়ার স্ত্রী নার্গিস আক্তার পাখি (২৩) ও এমদাদুল হকের স্ত্রী তানজিলা আক্তার (২২)। নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফুল হক জানান, গত কিছুদিনে শহরের বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু বাসায় চুরি হচ্ছে। ফলে পুলিশ প্রশাসন বিচলিত।
এসব ঘটনায় গোপন সংবাদের খবরে শুক্রবার নেত্রকোনা পৌরশহরের জয়নগর সিভিল সার্জন অফিস সংলগ্ন এলাকায় চুরি করার প্রস্তুতিকালে হাতে নাতে চোর চক্রের এই দুই সদস্যকে আটক করা হয়। তবে এসময় তাদের সাথে থাকা একটি ছেলে পালিয়ে যায়। তাকেও আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি।
তিনি আরও জানান, এরা দীর্ঘদিন ধরে দিনভর শহরের অলিগলি চষে বেড়ায়। কখনো বাড়ি ঘরে কাজ করার উদ্যেশ্যে কাজের মহিলা পরিচয় দেয়। আবার কখনো পুরনো টিন, কাঠ বা ভাঙ্গারি হিসেবে অসবাবপত্রের খোঁজ করে।
এভাবে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে দেখে কোন কোন বাসার মানুষ কখন বাইরে যাওয়া আসা করেন। সেইসাথে কোথায় কিভাবে পালানো যায়। কেউ বাচ্চাকে স্কুলে দিতে যান। কেউ বা বাজারে যান। এই ফাঁকে তারা চুরির কাজ সারে। এরপর চুরি সংঘঠিত হলে মানুষ থানায় জানায় দেরিতে।
পরে খোঁজ করে তাদের পাওয়া দুস্কর হলেও বেশ কদিন আগে নাগড়া সাহাপাড়া এলাকার এক বিধবা নারী মিতালি দে’র বাড়িতে চুরি হবার পর তিনি মামলা করেন। নগদ টাকা ও মোবাইল সহ স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় চোরেরা।
সেই মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশের বিশেষ অভিযান চালিয়ে গোপন সংবাদের খবরে তাদের ফলো করতে করতে অবশেষে জয়নগরের এক বাসায় চুরির প্রস্তুতির সময় তাদেরকে ধরা হয়। খোঁজ করে দেখো গেছে এদের বিরুদ্ধে মামলা ছাড়াও অগনিত মামলা রয়েছে থানায়।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) লুৎফর রহমানের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানা গেছে, এই চোর চক্রের সদস্যরা পুরনো মালামাল সংগ্রহের নামে বাসা-বাড়িতে মাত্র ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিটে চুরি করে ফেলে। খুবই অল্প সময়ে এরা দেয়াল টপকাতে পারে। তালা ভেঙ্গে ফেলতে পারে। অভিনব কায়দায় চুরি করতে তারা নানা ধরনের তালা খোলার যন্ত্র ব্যবহার করে।
তিনি জানান, এদের দারা চুরি হওয়া এক নারী নিঃস্ব হয়ে পুলিশের দারস্থ হলে মডেল থানার এসআই রফিকুল ইসলাম মামলাটির তদন্ত নেয়। পরে তাদের পিছনে খোঁজ করতে করতে এরা ধরা পড়ে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রাথমিকভাবে তারা বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ভাঙ্গারী সংগ্রহ করার নামে বাসা-বাড়ির খোঁজ খবর নেয় বলে স্বীকার করে।
সেইসাথে কোন বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় পেলেই তারা খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে তালা ভেঙ্গে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে যায়। তারা একটি বাসায় তালা ভেঙ্গে চুরি করতে সর্বোচ্চ ২০/৩০ মিনিট নেয় বলে প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ধরা পড়া চোরেরা জানায়। এছাড়াও তারা চুরি করার সময় আরও বিভিন্ন ধরনের অভিনব কায়দা ব্যবহার করে থাকে।
সিডিএমএস পর্যালোচনায় আটককৃত দুইজন চোরের বিরুদ্ধে মডেল থানায় ০৪ (চার) টি চুরির মামলাসহ বিভিন্ন থানায় আরও একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তারা পেশাদার চোর বলেও এলাকায় স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। এরা দিনভর বাইরে থাকে। তাদের স্বামীদের বিষয়েও খোঁজ নেয়া হবে কিনা এ ব্যাপারে তিনি জানান, যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এরা শিশুদেরকেও ব্যবহার করছে চুরি সহ নানা অপরাধে। সে ব্যাপারেও পুলিশ সোচ্চার রয়েছে।