গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার পর দুই বছর মৃত্যু যন্ত্রণায় ভুগে শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে চলে গেলেন শেফালী আক্তার। খালিয়াজুরী উপজেলার পাঁচহাট গ্রামের হতদরিদ্র শেফালী চার সন্তানের জননী। আজ বৃহস্পতিবার (২০) দুপুরে নিজ গ্রামে জানাযা শেষে কবর দেয়া হয়। পিতৃহীন শেফালী মানুষের দেয়া সাহায্য নিয়েই সংসার চালাতেন।
স্থানীয়রা জানান, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পাঁচহাট গ্রামে বিধবা নারী শেফালী আক্তার (৩৭)। দীর্ঘদিন তিনি স্তন ক্যান্সারে ভুগছিলেন। আর্থিক সংকটে কোন রকম সংসার চললেও এতো বড় রোগের চিকিৎসা সেবা পাওয়া ছিলো তার জন্য দূরহ ব্যাপার। একে তো হাওরের প্রত্যন্ত গ্রাম। অন্যদিকে মানুষের দান খয়রাত নিয়ে সংসার চালানো।যে কারনে চিকিৎসা নিতে গ্রামের মানিক মিয়া নামের এক ভুয়া গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে যান। স্তনে ব্যথা সাড়িয়ে তুলতে ২০ হাজার টাকায় মানিক মিয়ার সাথে অপারেশনের চুক্তি করেন শেফালী আক্তার ।
স্থানীয় পাঁচহাট বাজারের ওষুধ বিক্রেতা (ইকবাল হোমিও ফার্মেসি) তার ফার্মেসীর ভিতরে ২০১৯ সালের ৭ মে অপারেশনের নামে ব্লেড দিয়ে স্তনের অর্ধেক অংশ কেটে দেন। এরপর ধীরে ধীরে শেফালির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি শুরু হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্তনের কাটা অংশে পচন ধরে যায়। টাকা পয়সা না থাকায় বিনা চিকিৎসায় ধুঁকতে থাকেন শেফালি।বিষয়টি শুনে সাবেক জেলা প্রশাসক শেফালির পাশে দাঁড়ান। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে চিকিৎসার দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন শেফালি বেগম।
অপরদিকে জেলা পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসীর নির্দেশে ভুয়া ডাক্তার মানিককে আটকও করা হয়। পাঠানো হয় জেলা হাজতে। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন থেকে করা হয় আর্থিক সহযোগিতাও। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই স্তনের ক্ষত স্থানে আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। চলতে থাকে নতুন করে চিকিৎসা। করোনার কারনে চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটে। অবশেষে বুধবার (১৯ মে) দিবাগত রাতে নিজ গ্রামের বাড়ি খালিয়াজুরীর পাঁচহাট গ্রামে মারা যান তিনি। শেফালির মৃত্যুর খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম আরিফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।