৯ ডিসেম্বর ১৯৭১। রাত থেকেই শহরের বর্তমান কৃষিফার্ম এলাকায় এম্বুশ পেতে অপেক্ষায় ছিলেন বাংলা মায়ের দামাল ছেলোরা। ভোরের আলো ফোটতেই শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ।
মরণপণ লড়াই করে নেত্রকোনা শহরকে পাক হানাদার মুক্ত করেছিলো সেদিন। এদিন সন্মুখ সমড়ে লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন, আবু খাঁ, আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রশিদ।
মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর রাত থেকে শুরু করে রাজুরবাজার, চকপাড়া, সাতপাই, কাটলী, নাগড়া, কৃষিফার্ম এলাকা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৯ ডিসেম্বর সকাল ১০ টা পর্যন্ত অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে পাকিদের ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
এতে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারান। তাদের স্মরণে একটি স্মৃতিফলকও হয়েছিলো। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর্যন্ত অযন্ত আর অবহেলায় পড়ে থাকা যুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি ফলকটি মুক্তিযোদ্ধাদের দাবীর প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তরুণ কান্তি শিকদার কালেক্টরেট প্রাঙ্গনেই নির্মান করেন।
বীরত্বগাথা দিবসটি স্মরণে “প্রজন্ম শপথ” নামে ভাস্কর্য্য নির্মান করে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন সকল মুক্তিযোদ্ধারা।
টাইগার খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সিদ্দিক আহমদ যাঁর নেতৃত্বে এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল তিনি আর দেখে যেতে পারেননি। সে কারনে যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কিছুটা ক্ষোভ থেকেই গেলো। কিন্তু প্রতিবছর দিবসটি উদযাপনে জেলা প্রশাসন দিনব্যাপী নানা আয়োজন করে।
তবে এবার মুক্ত দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী, নতুন প্রজন্মের কাছে এই বীরত্বগাথা ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। একদিনের আয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। মুক্তিযোদ্ধারা কমে যাচ্ছে দিন দিন।
তাদের থেকে সঠিক ইতিহাস নিয়ে প্রজস্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তালিকা থেকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দেয়ারও দাবী জানান তারা।
নেত্রকোনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, স্বাধীনতা যুদ্ধে নেত্রকোনা জেলার ৩ হাজার ৪ শত ২৭ জন মুক্তিযেেদ্ধ অংশগ্রহন করেন। তার মধ্যে মুসলিম যোদ্ধা ২ হাজার ৯ শত ৮ জন এবং হিন্দু ছিলেন ৪ শত ২৮ জন, আদিবাসী ছিলেন ৯১ জন। এর মধ্যে কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন ৩৪ জন। শহীদ হয়েছেন মোট ৬৬ জন।