নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় চলছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। দেশজুরে নানা কিছুর পরিবর্তন হলেও পাহাড়ি এই জনপদে স্বাধীনতার স্বর্ণজয়ন্তী পেরোলেও তাদের জন্য মিলেনি সুপেয় পানি। একমাত্র ভরসা পাহাড়ি ঝর্ণা। ঝর্না বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানি সংগ্রহ করেন নেত্রকোনার পাহাড়ি সীমান্তবাসী। যে কারণে নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে দূষণ বেড়ে যায় একমাত্র ঝর্ণার পানিতেও।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা। পাহাড় ঘেরা এই জনপদে বাঙ্গালি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিসহ নানা জাতির বসবাস। কিন্তু সেসব এলাকায় এখনো সুপেয় পানির তীব্র সংকট। একেবারে সীমান্তের গ্রামগুলোর প্রায় অর্ধলক্ষ পরিবারর এই ঝর্নার পানি সংগ্রহ করেই দৈনন্দিন কাজসহ পান করতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা কাগজে কলমে নেয়া হলেও বাস্তবায়ন হয় না। দীর্ঘপথ হেটে পানি সংগ্রহ করতে হয় তাদের। অনেক সময় ঝর্না দিয়ে নেমে আসে দূষিত পানি। ভুগতে হয় রোগ-বালাইয়ে। শুকনো মৌসুমে আরো বেড়ে যায় সুপেয় পানির সংকট। যে ক’টি নলকূপ আছে সেগুলোতেও ঠিকমতো উঠে না পানি। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে দুষণ বেড়ে যায় ঝর্নার পানিতেও। সরকারিভাবে জেলাজুড়ে গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য বরাদ্দের কমতি না থাকলেও তা পৌঁছেনা পাহাড়ি জনপদে।
কলমাকান্দা উপজেলার চন্ড্রডিঙা এমনই এক অবহেলিত জায়গা যেখানের ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়স পার করে ফেলা মানুষের আক্ষেপ রয়েই গেল সুপেয় পানি পান করার। রবি চিশিম জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকেই জীবন বাঁচানোর জন্য দৈনন্দিন কাজের সাথে পান করছেন এসব পানি। কোথাও কোথাও স্থানীয়ভাবে রিং টিউবওয়েল স্থাপন করলেও শুকনো মৌসুমে আয়নের কারণে তাও হয়ে যায় পানের অযোগ্য।
পাহাড়ের সমস্যা স্বীকার করে জেলা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, সহসাই এই সমস্যা অনেক আগেই সমাধান করা যেতো, যদিও তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দ নেই। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন করেন নলকূপের স্থান। সেভাবেই বরাদ্দ আসে। এই জেলায় বরাদ্দ অপ্রতুল থাকলেও পাহাড়ি অঞ্চলে গভীর নলকূপ স্থাপনে কোন সমস্যা ছিলো না। আমরা শুধুমাত্র বাস্তবায়ন করি। স্থান তালিকা দেন জনপ্রতিনিধিরা। তবে কলমাকান্দা দুর্গাপুরের জন্য বেশকিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, নেত্রকোনার দশটি উপজেলা ৮৬ ইউনিয়নে টিউবওয়েল স্থাপনের চলমান প্রকল্পে মোট সাত শতাধিক টিউবের স্থাপন করা হচ্ছে।