অর্ধেক কাজের ভান্ডারই যেনো হাওরাঞ্চল। প্রতিবছর কাজের সময়সীমা পার করে নতুন করে কাজ শুরেু হয় যেখানে। কিন্তু শেষ হয়না কখনোই। বছরের পর বছর এমন লীলা খেলার পুতুল যেনো ওই অঞ্চলের জনগন ও কৃষকরাই। দেখার যেমন কেউ নেই। বলারও তেমন কেউ নেই। প্রতিবছর চলে শুধু বরাদ্দের মহোৎসব। এবার এমন অভিযোগই উঠেছে ওই এলাকায় অসহায় ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষসহ জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন থেকেও।
নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের শেষ সীমানা খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন। আর এই ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত মাত্র আড়াই কিলোমিটার সড়ক। জেলার সীমানা গ্রাম হওয়ায় এর খোঁজ রাখে না কেউ। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা ঠিকই খোঁজ নেয় তার ঢেউ দিয়ে। প্রতিবছর এখানকার বিভিন্ন গ্রাম ভেঙ্গে যায় ঢেউয়ের তোরে। বাড়ি ছাড়া হন এলাকার বহু মানুষ।
আর এর থেকে সাধারণ মানুষ এবং কৃষকের একমাত্র বুরো ফসলকে রেহাই দিতেই সরকারের প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯/২০ অর্থ বছরে খালিয়াজুরীর প্রত্যন্ত ইউনিয়ন কৃষ্ণপুরের কৃষ্ণপুর গ্রাম ও সড়ক রক্ষায় আড়াই কিলোমিটার অংশে ব্লক দেয়ার জন্য ১ কোটি ৭ লাখ টাকায় ব্লকের কাজ দেয় খালিয়াজুরী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অদিধপ্তর। কিন্তু ঠিকাদার আড়াই কিলোমিটারের কিছু অংশে নিম্মমানের ব্লক ফেলে কতৃপক্ষককে ম্যানেজ করে সংশ্লিষ্ট বারাদ্ধকৃত অর্থ উত্তোলন করে ফেলে। পরবর্তীতে পুনরায় তা বর্ষায় পুরোদমে বিনষ্ট হয়ে যায়।
এমন অবস্থায় চলতি বছর কোন রকম প্রটেকশন ব্যবস্থা না করেই আবারো প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে সড়ক নির্মান কাজ শুরু করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল। নানা অনিয়মের মাঝেই প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ করেছেন রাস্তার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্টান। তবে নিন্ম মানের কাজের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব জায়গায় সড়ক ও গ্রাম প্রতিক্ষা বেড়িবাধ নির্মানে অনিয়মের ফলেই আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মানাধীন সড়কও ভাঙ্গনের আশঙ্কায় রয়েছেন উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা।
কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান শামীম মোড়ল সহ স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গত বছর ব্লকের কাজ আংশিক করেই টাকা উত্তোলন করে ফেলে আশি ভাগ। কৃষ্ণপুর থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত ব্লকগুলো অর্ধেক বসায়। পরে বর্ষায় আবারো উঠে গেছে। প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় এসব জায়গায় সাংবাদিকসহ কোন মানুষ জন আসে না। ফলে যে যেভাবে পারে কাজ করে যাচ্ছে। এখন আবার ব্লক ছাড়াই সড়কের কাজ করছে। আজমেরিগঞ্জ, হবিগঞ্জ থেকে একটা ঢেউ আসলেই আবার সব উল্টিয়ে নিয়ে যাবে। বারবার সরকারের টাকা ফুরায়। কাজের কাজ হয়না কিছুই। আমাদের সাধারণ জনগনের তাহলে লাভ কি? ক্ষতিতে তো সাধারণ মানুষই।
এদিকে সড়কের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গোলাপ মিয়া বলেন, সড়কে যে কোয়ালিটি ধরা আছে আমরা সেটিই করছি। ব্লকের বিষয়ে বলেন, এটিতো আরোকজনের কাজ কেন করেনি আমরা বলতে পারবো না। তবে ব্লক ছাড়া এসব রাস্তা টিকে না বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে খালিয়াজুরী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, আর মাত্র মাস খানেক রয়েছে পানি আসার। এর মধ্যে সম্পূর্ন কাজ সম্পন্ন না হলেও সবই ভেস্তে যাবে। ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকায় যে মাটি কেটে ফেলা হয়েছে এটাতো পুরোটাই ভেস্তে যাবে। অসম্পূর্ন ব্লকের কাজের বাকীটা এখন পর্যন্ত শুরুই হয়নি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয় ছিলেন তদারকিতে তিনি সদ্য প্রয়াত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে খালিয়াজুরী উপজেলা এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী গত বছর ব্লকের কাজ বাকী থাকার কথা স্বীকার করলেও টাকা উত্তোলনের কথা অস্বীকার করেছেন। সেইসাথে গত বছর ভেঙ্গে যাওয়া কাজের কথাও তিনি স্বীকার করে বলেন এবার করবে পুরোটাই।
এদিকে ব্লক ছাড়াই সড়কের কাজ হচ্ছে এতে সড়কটি টিকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্লকের কাজ চলছে এলাকায় গিয়ে দেখেন। দেখে এসেছি বললে কখন কিভাবে গিয়েছি তা জানতে চান উল্টো।