Wednesday, April 24, 2024
মূলপাতানেত্রকোনার সংবাদমোহনগঞ্জ উপজেলানেত্রকোনার ব্রীজ ভেঙ্গে যাওয়ায় রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

নেত্রকোনার ব্রীজ ভেঙ্গে যাওয়ায় রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

সোহান আহমেদ:
গেল এক দশকের স্মরণকালে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দা-দুর্গাপুরসহ হাওরাঞ্চলের মানুষ। শনিবার সকালে পাহাড়ি ঢলে পানিতে বারহাট্টার অতীতপুর মোহনগঞ্জ সীমানায় ভেঙে গেছে রেলের কালভার্ট। এতে সকাল থেকেই বিচ্ছিন্ন রয়েছে ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেল যোগাযোগ। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় অতিরিক্ত পানির চাপে ব্রিজটির দুই সাইডে থাকা গাইড ওয়ালসহ মাটি সরে গেছে। এছাড়াও গেল এক সপ্তাহের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী ও কলমাকান্দার উদাখালী নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে বেশকটি উপজেলার প্রায় ৩৯টি ইউনিয়নের অন্তত কয়েক শতাধিক গ্রাম। পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু,গরু ছাগল, বস্ত্র, সঞ্চিত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ বানভাসি মানুষেরা। চোখের সামনেই তলিয়ে যাচ্ছে সব। বানভাসি মানুষেরা বলছেন, গেল ১০/১৫বছরের মধ্যে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি তারা।

দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদী পানি উপচে পৌর শহরের ছোট বাজার, তেরি বাজার, চড়মোক্তারপাড়া, থানা, উপজেলা পরিষদ পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও উপজেলার গাঁওকান্দিয়া, কাকৈরগড়া, কু্ল্লাগড়া ইউনিয়নের সবগুলো গ্রামেই ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানি বন্দি মানুষদের সামনে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। কলমাকান্দার উপদাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা সদরসহ প্রায় সবগুলো ইউনিয়ন পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্ধ রয়েছে জেলা শহরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। এছাড়াও নেত্রকোনা সদর উপজেলার মগড়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এরই মধ্যে প্লাবিত হচ্ছে নিন্মাঞ্চল।

এদিকে হাওরাঞ্চলে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে অসংখ্য গ্রাম। কোনরকমে গরু, ছাগল হাঁস, মুরগি নিয়ে উচু সড়ক ও বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। শুক্রবার সকাল থেকেই জেলার পানিবন্দি এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মোবাইল ফোন ও নেটওয়ার্ক অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দুর্বিষহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে পানিবন্দি এলাকা গুলোতে। এমতাবস্থায় সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে মানবেতর দিন পার করছেন বানভাসি মানুষেরা।

সিলেট শুনামগঞ্জের পাশাপাশি এই কঠিন মুহূর্তে নেত্রকোনাকেও বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে দ্রুত অসহায়দের সহযোগিতায় সেনা ও নৌ-বাহিনী মোতায়েনের দাবি করছেন স্থানীয়রা। হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীর প্রায় ৩৪টি বিদ্যালয়কে আশ্রয়ন কেন্দ্র ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে বানভাসিদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস জানান, নেত্রকোনা ৬ টি উপজেলার ৩৯ টি ইউনিয়নে পাহাড়িঢল ও অতিবৃষ্টিতে বন্যা কবলিত হয়েছে। সমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছ। কংশনদীর বাঁধের একটি অংশে ফাটল দেখা দেয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতে কাজ চলছে। প্রায় ৪৭৩ হেক্টর জমির আউশ ধান ও সব্জি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।

বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ পর্যন্ত বন্যাদূর্গত মানুষদের জন্য ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে গুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরবর্তীতে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হবে।

এছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণের জন্য ৬৮ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ, ২হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিতরণ অব্যাহত আছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য জেলা ও উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। বানভাসি সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সর্বশেষ সংবাদ

Recent Comments