Friday, April 19, 2024
মূলপাতাঅন্যান্যনেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীতে অপ্রতিরোধ্য যুবলীগ

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীতে অপ্রতিরোধ্য যুবলীগ

নেত্রকোনার হাওর উপজেলা খালিয়াজুরীতে যুবলীগের উশৃংখল অপ্রতিরোধ্য বিতর্কিত সদস্যদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় প্রশাসনসহ জনসাধারণ ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা। এক কথায় বলা চলে বর্তমানে অপ্রতিরোধ্য উপজেলা যুবলীগ।

কাউকেই তারা পরোয়া করে না এমনকি বিভিন্ন স্থান থেকে হাওরে ভ্রমণে আশা পর্যটকসহ হাওরে চলমান সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকরাও প্রান নাশের হুমকি-ধামকির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর উপজেলা যুবলীগের কমিটি ভেঙে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে নতুন করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

এতে আহ্বায়ক করা হয় খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইসহাকের ছোট ভাই আরিফুল ইসলাম ফালাক ও যুগ্ম আহ্বায়ক মীর তোফায়েলকে।

যদিও উপজেলা লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ এ কমিটি এখনো মেনে নেয়নি। নতুন করে এই কমিটি হওয়ার পর থেকে অনেকটাই রাম রাজত্ব কায়েম করেছে উপজেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় ব্যবসায়ী সুশীল সমাজ তাদের কাছে অনেকটাই জিম্মি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালিয়াজুরীতে অবস্থানরত বেশকজন নাগরিক।

হাওরাঞ্চলে বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ নিজেদের নামে বেনামে ভাগিয়ে নেয়া, জলমহাল দখলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এখন উপজেলা যুবলীগের বিরুদ্ধে।

গেল একমাস আগে খালিয়াজুরী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগে সভাপতি কিবরিয়া জব্বার মারা যাওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য রয়েছে। এতে করে বর্তমানে অনেকটাই অভিভাবকহীন উপজেলায় রূপ নিয়েছে স্থানীয় রাজনীতি। বিশেষ করে যুবলীগ সদস্যদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অনেকটাই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সেই সাথে অনিয়ম দুর্নীতিতে ব্যহত হচ্ছে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমও।

চলতি বছর হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন বেশকিছু প্রকল্পে চরম অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। গেল ১০ মার্চ বুধবার কীর্তনখোলা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাঁধের বিভিন্ন অংশে বালু ও কিনার থেকে মাটি উত্তোলন সহ চরম নিন্মমানের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে এই বাঁধটি ভেঙ্গেই জেলার হাওরের একমাত্র ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। তাই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধটির কাজে অনিয়ম ও হিলিপের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ শেষে ফেরার পথে কীর্তনখোলা বাঁধের পিআইসি উপজেলা যুবলীগের উশৃংখল ও বিতর্কিত সদস্য আহাদ নূরের সুপরিকল্পিত দূর্ঘটনার কবলে পড়েন নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশন ও দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাংবাদিক সোহান আহমেদ।

এতে বামহাতে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন তিনি। এসময় দূর্ঘটনায় তেমন ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারলেও পরবর্তীতে উপজেলা চত্বরে আগে থেকেই উৎপেতে থাকা যুবলীগের আহ্বায়ক ফালাকের নিজস্ব কর্মী তাজুল ইসলামসহ আরো বেশকজন সংবাদকর্মীর উপর চড়াও হয়ে বিভিন্ন ভাবে সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করতে থাকে। এসময় উশৃঙ্খল কর্মীরা সাংবাদিক মেরে ফেললে কিছুই হয় না, তোদের মেরে ফেললেও কিছু হবে না বলে চেঁচামেচি শুরু করে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সন নিরাপদে চলে আসতে বাধ্য হন। এছাড়াও আহ্বায়কের ছত্র ছায়ায় উশৃঙ্খল যুবকরা বেশ কয়েকবার উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের হয়রানি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হুমকি ধমকির ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষো ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রথম শ্রেণীর মিডিয়ায় কর্মরত একজন সাংবাদিকের সাথে এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান কারীদের অচিরেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন জেলার সাংবাদিকরা।

যদিও এ ঘটনায় খালিয়াজুরী থানায় প্রান নাশের হুমকির অভিযোগে একটি জিডি করা হয়েছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম। তবে এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারেনি। এ নিয়ে সাংবাদিক সমাজে অনেকটাই ক্ষোভ বিরাজ করছে। অচিরেই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের কথা ভাবছেন জেলার সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতারা। এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, উপজেলা যুবলীগের গুটি কয়েক নেতা কর্মীর কর্মকাণ্ডে পুরো দল বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সাংবাদিককে প্রাণ নাশের হুমকি ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দলের জন্য বিব্রতকর। এঘটনায় ব্যাক্তিগত ও দলীয় ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। এদিকে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাসুদ খান জনি জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক সাংবাদিক সোহান আহমেদকে ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেন। সেইসাথে বিতর্কিত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। এ ছাড়াও ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটানো ও সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি থেকে যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাসুদ খান জনি।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সর্বশেষ সংবাদ

Recent Comments