হাওরবাসীর সারা বছরের পরিশ্রমের ফসল শুধুমাত্র ঢলের পানিতে তলিয়ে যাবার শঙ্কায় এবার বাধ্য হয়ে কাঁচা কেটে ফেলছেন কৃষকরা। বিক্রিও করছেন পানির দরে। এদিকে আধা পাকা কেটে ফেলায় ধান পাচ্ছে অর্ধেক। নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের কৃষকদের সংসারসহ ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচের একমাত্র ভরসা এই বোরো ফসল। আর এটিই এবার ডুবে যাবার ভয়ে নিজ হাতে কাঁচা কেটে হত ১৭ সনের মতো এবারো সর্বশান্ত হাওরের কৃষক। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত ধনু নদের পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শঙ্কা কাটছেই না। যে কোন সময় ধ্বসে গেলে কাঁচাটইি আর তুলতে পারবে না। সব মিলিয়ে এবার কৃষকের মরার উপর খাড়ার ঘাঁ।
বৈশাখে যখন হাওরের ঘরে ঘরে আনন্দ থাকার কথা। ঠিক এমন সময় এবছর শঙ্কায় ঘুম নেই চোখে আতঙ্কে দিন কাটছে কৃষকের। ভারতের মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীর ধনু নদের পানি বেড়ে ফাটল ধরে ফসল রক্ষা বেরিবাঁধে। ধান পাকার প্রায় একমাস আগে এমন হুমকিতে সর্বস্থ হারানোর ভয়ে কৃষক আধা কাঁচা পাকা ধান কাটছেন। সেইসাথে হাওর রক্ষায় বাঁধ পাহাড়া দিয়ে মেরামত করছেন। বৈশাখে ধান কাটা আরম্ভ হলেও চৈত্রের মাঝামাঝিতেই ঢলের পানিতে খালিয়াজুরীর কির্তনখোলা বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়। সময়মতো বাঁধ শুরু এবং শেষ না করায় কৃষকের এমন ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ হাওরবাসীর। অথচ হাওরের ধান পাকার পর বৈশাখের মাঝে গিয়ে শুরু হয় কাটা।
এদিকে ধনু নদের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত অব্যাহত থাকায় যে কোন সময় তলিয়ে যাবার আশঙ্কায় যাই পায় তাই লাভ মনে করে ধান কাটা মাড়াই করছেন। কিন্তু কাঁচা ধানে ফলন অর্ধেক হয়ে গেছে। অনেকেই শ্রমিকের কাজ স্ত্রী সন্তান নিয়ে নিজেরাই করছেন। ধানও একশতে ৫০ অথবা ৬০ মণ করে মিলছে। বিক্রিও করছেন নাম মাত্র মূল্যে। অন্যদিকে ফরিয়া অর্থাৎ দালাল ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা ধান কিনে কৃষক বাঁচাচ্ছেন। জগন্নাথপুর গ্রামের ফরিয়া নুর হোসেন বলেন, ৭০০ টাকায় কিনে ২০ টাকা লাভে তারাও ছেড়ে দিচ্ছেন। ধানে দুধ রয়েছে এখনো যে কারণে তারাও কৃষকদের থেকে সস্তায় কিনছেন।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ এফ এম মোবারক আলী কৃষকের ক্ষতির কথা অস্বীকার করে বলছেন কাঁচা ধান দূর থেকে মনে হয়। বরং পুরো পাকলে ঝড়ে পড়ে। যে কারণে ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে ফেলা উচিৎ। তবে হাওরে তিন ধরনের সমস্যা থাকে ধান চাষে স্বীকার করে বলেন স্থায়ী বাঁধ হলেই একমাত্র সমাধান হবে এই সমস্যার। যেমন মোহনগঞ্জে হাইজদা বাঁধ স্থায়ী হওয়ায় এবছর তারা ভয়হীন।