আজ ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনা ট্রাজিডি দিবস। ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রিহার্সাল করাকালে শহরের অজহর রোডের শতদল শিল্পী গোষ্ঠী ও উদীচীর কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলার ১৬ বছর আজ। ২০০৫ সালের এই দিনে (৮ ডিসেম্বর) জমিয়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর বর্বর আত্মঘাতি বোমা হামলা চালিয়েছিলো।
এতে সংস্কৃতিকর্মী খাজা হায়দার হোসেন, সুদীপ্তা পাল শেলি, মোটর মেকানিক যাদব দাস, রিক্সাচালক রইছ উদ্দিনসহ ৮ জন নিহত হয়েছিলেন।
এদিন উদীচীর সাবেক সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব এডভোকেট সানাওয়ার হোসেন ভূইয়াসহ আহত হয়েছিলেন অর্ধশতাধিক। এরপর থেকে নেত্রকোনাবাসী দিবসটিকে ট্রাজিডি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতিবছর এ দিনের সকালে ১০.৪০ মিনিটে শহরের ছোট বাজার শহীদ মিনার মোড়ে ৫ মিনিট স্তব্ধ নেত্রকোনা পালন করা হয়।
এরপর ১১ টায় শহীদ মিনার থেকে একটি প্রতিবাদী সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাস বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। এর আগে নিহতদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভে সকাল সাড়ে নয়টায় পুস্প স্তবক অর্পন করা হয়। সন্ধ্যায় উদীচীর পরিবেশনায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক গান পরিবেশন করা হয়। ট্রাজিডি উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই, সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানি, জেএমবি কমান্ডার আসাদুজ্জামান, সালাউদ্দ্নি এবং ইউনূসসহ ৮ জনকে আসামী করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে।
ইতিমধ্যে ঢাকা দ্রুত বিচার ট্র্যাইব্যুনাল আদালত-২ নেত্রকোনায় বোমা হামলা মামলার ৭ আসামীকে ফাঁসি ও বাংলা ভাইয়ের স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ ও নতুন প্রজন্মের সামনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দুর্বার প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলবার লক্ষ্যে নেত্রকোনার সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে প্রতি বছরের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনা ট্র্যাজিডি দিবস পালন করে আসছে।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম জানান, ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নেত্রকোনা জেলা শহরকে মুক্ত করেছিলো। আর এই শহরকে হানাদার মুক্ত করতে গিয়ে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন। আমাদের এই দিনটি প্রতিবছর সরকারী ভাবে পালন করা হয়। আর সেই অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে করার জন্য শতদল ও উদীচীর শিল্পীরা রিহার্সাল করছিলো। এসময় ৭১ এর হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মারা নারকীয় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এরা আঘাত করেছে।
ওইদিন বোমা হামলাকারীরা বোমা যে চালালো তারা কারা এদেরকে মদদ দিয়েছিলো? এটা বের হয়নি। পরপর দুটো বোমা চালিয়েছিলো। একটি এক ঘন্টা আগে ফেলেছিল। সেটা দেখতে সবাই বের হলে এক সাথে শত মানুষ জড়ো হওয়ার পর আরেকটি আত্মঘাতী বোমা চালায়।
এতো পরিকল্পনা করে বোমা হামলাটি নিশ্চয় কেউ দূর থেকে এসে করে ফেলেনি। এই জেলা শহরের কারো না কারো পৃষ্ঠপোষকতায় বা মদদে থেকেই এটি করেছে। কিন্তু সেইদিকে কারো নজর নেই। কেন বের করা হলো না সেই মদদপুষ্টদের? আমরা চাই হায়েনার দলেদের যারা ঠায় দিয়েছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।