Friday, March 29, 2024
মূলপাতানেত্রকোনার সংবাদমোহনগঞ্জ উপজেলামোহনগঞ্জে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ

মোহনগঞ্জে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার বাকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে পুরো উপজেলায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষাথীদের পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী মিলে এ ঘটনায় জড়িত রাজন আহমেদ নামে এক যুবককে আটক করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ আহমেদের জিম্মায় রাখেন। পরে এলাকার লোকজনের সাথে পরামর্শ না করেই ওই যুবককে ছেড়ে দেন ইউপি সদস্য মাসুদ। ছাড়া পেয়েই গা ঢাকা দেন রাজন। সরেজমিন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।

মানশ্রী গ্রামের ভুক্তভোগী শিক্ষাথীদের অভিবাবক আইন উদ্দিন, সাইকুল মিয়া,সাদেক মিয়া, বাবুল মিয়া, মো. বকুল মিয়া, সাইফুল ইসলাম ও লাহুত মিয়া জানায়, ঘরে বসেই বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও স্কুলের উপবৃত্তির সিম বিক্রয় এবং তাদের টাকা ক্যাশ করে দেয়ার কাজ করেন স্থানীয় রাজন নামে এক যুবক। প্রধান শিক্ষকের পরামর্শে সম্প্রতি ওই স্কুলের ১০৬ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা তোলার মোবাইল সিম তার কাছ থেকেই কিনেন অভিবাবকরা। পাশপাশি নগদ একাউন্ট করে দিয়ে কৌশলে গোপন পিন নম্বরটি নিজের কাছে রেখে দেন রাজন।

তারা জানান, পরে উপবৃত্তির টাকা ওই একাউন্টে আসলে সেই তুলে নেন তিনি। এক পর্যায়ে ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসী রাজনকে আটক করে বিচারের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) মাসুদ আহমেদের কাছে রাখা হয়। কিন্তু সবাই বাড়ি চলে গেলে কাউকে কিছু না জানিয়ে রাজনকে ছেড়ে দেন মাসুদ। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশে রাজনের বিচার হওয়ার কথা থাকলেও মেম্বার তাকে ছেড়ে দিয়ে বলছে- তোমাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। তাই বিচারের আর কিছু নাই। তারপর থেকে মেম্বার তার লোকজন নিয়ে গিয়ে কোন কোন অভিবাবকদের বাড়িতে গিয়ে ৩০০-৪০০ টাকা দিয়ে আসছেন। কাউকে এক টাকাও দিচ্ছেন না।

মানশ্রী গ্রামের নবাব মিয়ার দুই মেয়ে হিমা আক্তার ও সিমু আক্তার পড়ে ওই স্কুলে। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের কথায় রাজনের কাছ থেকে এয়ারটেলের সিম কিনেছিলাম। নগদ একাউন্ট খুলে কৌশলে গোপন পিন নম্বরটি সে রেখে দেয়। আমার স্ত্রী তার কাছ থেকে টাকা তুলতে গেলে ২০০ টাকা দিয়ে বলে এই টাকাই আপনি পেয়েছেন।

মানশ্রী গ্রামের মো. আতাউর রহমানের দুই মেয় ও এক ছেলে পড়ে বাকরপুর স্কুলে। সবার মতো তারও একই অবস্থা। এক টাকাও পাননি তিনি।

তিনি বলেন, মেম্বার দুই-তিনশো নিয়ে আসছিল। আমি ওই টাকা রাখিনি বলে নিয়ে চলে গেছে। মেম্বার নিজ দায়িত্বে রাজনকে ছেড়ে দিয়ে কেন এখন অভিববাকদের নামমাত্র কয়েক টাকা দিতে চাইছেন। পুরো দায়িত্ব না নিতে পারলে কেন তাকে ছাড়লেন তিনি? এখন টাকাও পেলাম না, বিচারও পেলাম না। এ কাজে মেম্বার-প্রধান শিক্ষক ও রাজনের মধ্যে যোগসূত্র আছে বলে তিনি মনে করেন।

এ বিষয়ে উপজেলার মাঘান-সিয়াধার ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য মাসুম আহমেদ বলেন, এলাকাবাসী রাজনকে আমার জিম্মায় রেখেছিল। সে এলাকার ছেলে একটা ভুল করেছে। সবার টাকা দিয়ে দিবে তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।

বাকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা বলেন, অভিবাবকরা অনেকেই নিজেদের ব্যবহৃত সিমটি কার নামে রেজিস্ট্রেশন করা জানেন না। ফলে উপবৃত্তির টাকা নেয়ার জন্য নতুন সিম কিনতে বলেছি। তবে রাজনের কাছ থেকে মোবাইলের সিম কিনতে বলেছি এ অভিযোগ সত্যি নয়। প্রায় দেড়শোর মতো শিক্ষার্থী থেকে এবার ১০৬ জনের মতো উপবৃত্তি পেয়েছে। আর রিপিটার ও যাদের জন্মনিবন্ধন নাই তারা পায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির আহ্বায়ক মির্জা মোহাম্মদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে অভিবাবকদের অনেকই মৌখিক অভিযোগ করেছেন। তবে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করা হয়েছে। পাশপাশি স্থানীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমেও সমাধানের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরো বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি রাজন কোন সিম কোম্পানির এজেন্ট নয়। কোন শিক্ষার্থী কত টাকা উপবৃত্তি পেয়েছে স্থানীয় নগদ এজন্টের সহায়তায় এটা বের করার চেষ্টা করছি। এতে করে টাকার পরিমােিনিয়ে বিভ্রান্তি দূর হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফুজ্জামান বলেন, এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে বলছি।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সর্বশেষ সংবাদ

Recent Comments