Saturday, April 20, 2024
মূলপাতানেত্রকোনার সংবাদদূর্গাপুর উপজেলাসবকিছু ম্যানেজ করেই নেত্রকোনার সীমান্তে চলে চোরাচালান

সবকিছু ম্যানেজ করেই নেত্রকোনার সীমান্তে চলে চোরাচালান

নেত্রকোনার সীমান্ত এলাকাগুলোতে কিছুতেই থামছে না নিষিদ্ধ চোরাচালান। প্রতিদিন জেলার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার এলাকাগুলোর অন্তত ২৫টি পয়েন্ট দিয়ে ডুকছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাদক, ভারতীয় গরুসহ পণ্য সামগ্রী। এতে বড় রকমের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর চোরাচালানীর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন বিজিবি ও রাজস্ব সংশ্লিষ্ট এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সরেজমিন ঘুরে দেখাগেছে, জেলার কলমাকান্দা সীমান্তের পাঁচগাঁও, মোহনপুর, বিজিবির আওতাধীন সংশ্লিষ্ট এলাকা গুলো দিয়ে প্রতিদিনই পাচার হচ্ছে অসংখ্য ভারতীয় গরু। যেগুলো স্থানীয় প্রশাসনে চোখের সামনেই চলে যাচ্ছে জেলার সবচেয়ে বড় গরুর বাজার বারহাট্টার নৈহাটিতে।

পরে সেখান থেকেই নামে মাত্র বৈধতা নিয়ে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এই কার্যক্রম স্থানীয়দের কাছে নতুন কিছু নয় দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এমন চোরাচালানি। এদিকে স্থানীয়ভাবে তেমন কোন কর্মসংস্থান না থাকায় অনেকেই জড়িয়ে রয়েছেন এই চোরাচালান ব্যবসায়।

এরমাঝে সবচেয়ে বেশি গরু আমনদানী হয় ৩১ বিজিবির আওতায়ধীন সুনামগঞ্জের মহেষখোলা, টেকের ঘাট পয়েন্ট দিয়ে। পতি সপ্তাহে কমপক্ষে সহ¯্রাধিক গরু কিনে আনেন এখানকার চোরাকারবারিরা। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় বিজিবি, জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলে চোরাচালানি। বিশেষ করে স্থানীয় আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভারতের সাথে আনাগোনা অনেক আগে থেকেই। মাতৃতান্ত্রিক জাতির নারীরা রোজ সকালেই বিভিন্ন রকম দেশীয় পণ্য নিয়ে চলে যান পাহাড়ের চূড়ায়। দিনভর পাহাড়ের পাদদেশ মেঘালয়ের বিভিন্ন স্থানে কেনাবেচা হয় ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী।

বিকেলে ও রাতে বস্তায় ভর্তি জিরা, চিনি, বডি স্প্রে, মধু, শাড়ি লুঙ্গি, বাচ্চাদের নামি দামি পোশাক, ফেনসিডিল, বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ নিয়ে আসে এ দেশে। পরবর্তীতে সেগুলো স্থানীয় সিন্ডিকেট কিনে নিয়ে বিক্রি করছেন দেশের বিভিন্ন অভিজাত হোটেল ও মার্কেটে। চোরাচালানি কাজে সরাসরি সহায়তা করছে বিজিবি ও বিএসএফ কর্তৃক লাইনম্যানরা এমন তথ্য স্থানীয়দের কাছে অনেকটাই পুরনো। তবে লাইনম্যান ব্যতীত অন্য কোন মাধ্যমে অবৈধ মালামাল নিয়ে প্রবেশ করলে বিজিবি কাছে ধরিয়ে দেয়া হয় বলেছেন চোরাচালানিতে জড়িত অনেকেই।

সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সিংহভাগ অবৈধ মালামাল পাচার হলেও ধরা পড়া কিছু চালান নিলাম করে জেলার রাজস্ব কর্মকর্তারা। সেখানে ও রয়েছে ব্যাপক ও অনিয়ম। মূলত মালামাল গুলো বৈধতা নিতেই ধরিয়ে দেয়া পণ্য নিলামে কিনে নেন সংশ্লিষ্ট চোরাচালানীরা। পরে অল্প কিছু মালামালের বৈধতা দেখিয়ে পাচার হচ্ছে প্রায় কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী। এদিকে চলতি মাসের (২ আগস্ট ) পাঁচগাঁও রামনাথপুর সীমান্তে একটি বাড়িতে থাকা মালিকহীন ভারতীয় আটটি গরু উদ্ধার করে বিজিবি। কিন্তু উদ্ধারকৃত আট গরুর মাঝে সাথে সাথেই দুটি নিয়ে যায় লাইনম্যানরা এমন কথাই প্রচলন রযেছে জানান নিলামে অংশ নেয়া সংশ্লিষ্টরা।

পরবর্তীতে জেলা কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কার্যালয় সংশ্লিষ্ট সাহাজুর রহমানের স্বাক্ষরিত ও উপস্থিতিতে টাকার পরিমান উল্লেখহীন একটি রশিদ দেয়া হয় ক্রেতাদের হাতে। পাঁচগাঁও বিওপিতে প্রকাশ্যে ৪টি গরু নিলাম হয়েছে বলেও নিশ্চত হওয়া গেছে। আর দুটি গরু নিলাম হয় গোপনে। পরে ক্রেতা রশিদে লিখে দেয়া হয় ছোট গরু দুটি। কিছুদিন পর পর এমন ভাবেই সীমান্ত এলাকায় ভিওপি গুলোতে অনেকটাই গোপনে নিলাম হয়ে আসছে উদ্ধারকৃত অসংখ্য গরু।

স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচগাও বিওপি কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম জানান, তারা নিয়মিত সীমান্তে টহল দেন, অবৈধ মালামাল পেলে আটক করেন। গত ২ মাসে তেমন কোন আটক নেই। এ সকল বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভালো জানেন। তাদের অনুমতি ছাড়া অন্য কিছু বলা সম্ভব নয়। এদিকে এ ব্যাপারে ৩১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মালামাল উদ্ধার হওয়ার পর সবকিছুই বুঝিয়ে দেয়া হয় রাজস্ব সংশ্লিষ্টদের। পরে তারাই সেগুলো নিলাম করেন। এদিকে সংশ্লিষ্ট জেলা কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পর নতুন করে নিয়োগ হলেও গত ৮ তারিখ পর্যন্ত নেত্রকোনায় কেউ যোগদান করেননি।

সকল কার্যক্রম চালাচ্ছেন পরিদর্শক সাজাউর রহমান। তিনি জানান, গরু নিলাম রশিদে টাকার পরিমান উল্লেখ করা হয় না। অফিসিয়ার রাখালি খরচ রেখে পরে তা ব্যাংকে জমা করা হয়। এছাড়া শাড়ি লুঙ্গি জব্দ করে পাঠনো হয় সরকারি ত্রাণ তহবিলে। অন্যাণ্য কসমেটিক্স মালামাল জেলা কার্যালয়ে নিলাম করা হয়। এতে অংশ নেন চোরাচালানিতে জরিতসহ স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক সিন্ডিকেট। আর মাদক ধংস করা হয় বিজিবি ক্যাম্পে।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সর্বশেষ সংবাদ

Recent Comments