পাঙ্গস, শিং, কই, পাবদা সহ বিভিন্ন জাতের হাইব্রীড মৎস্য চাষে ব্যবহৃত খাদ্য নষ্ট হয়ে পানিতে অক্সিজেন কমে গিয়ে স্টোক করে মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা অহরহ শোনা যায়। আর এই মাছ মরে যাওয়ার ঘটনায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে উদ্দেশ্য মূলক মিথ্যা মামলায় জড়ানোর বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলায়। সমপ্রতি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার নারান্দীয়া ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর গ্রামে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। জানাগেছে, মহেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের পরিবারের সাথে তার বড় ভাই রুমালীর পররিবারে জমি সংক্রান্ত ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে বেশকটি গ্রাম্য দরবার হলেও তা সমাধান হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় রুমালীর স্বজন একই গ্রাামের মৃত মোকশেদ আলী আকন্দের বড় ছেলে হক মিয়া। যিনি দীর্ঘ দিন ধরেই মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু অতিরিক্ত খাবার পরিবেশনে পানিতে অক্সিজেন কমে গিয়ে বিভিন্ন সময় মাছের মৃত্যু হলেও সমপ্রতি ২৭ জুলাই ভোরে বেশ কিছু মাছ মরে ভেসে ওঠে। যা প্রত্যক্ষ ভাবে দেখতে পেয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু মাছ মরে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর নেত্রকোনা পূর্বধলা থানায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৪৪৭ ও ৪২৭ ধারায় গত ৩ আগস্ট ২০২৩ তারিখে একটি মামলা দায়ের করেছেন হক মিয়া। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ঐদিন পুকুরের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ মারা গিয়েছে এবং একটি পাম্প মেশিন চুরি হয়েছে। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রতিবেশী মৃত আব্দুল কাদেরের দুই ছেলে বদরুল কাদের, মোঃ রানা ও তাদের আরো এক চাচাতো ভাই বাদল মিয়াকে।
এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ যে পুকুরে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে ১০ লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন সেই পুকুরেই ৬ আগস্ট ৬০ জন মৎস্য শিকারি ৪ হাজার টাকা করে ভাড়ায় মৎস্য শিকার করেছেন। স্থানীয়দের ধারনা বিষক্রিয়া হলে পুকুরের সব মাছ মারা যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। রবিবার সরেজমিনে দেখাযায়, পুকুরটির চতুর পার্শ্বে বিভিন্ন স্থানে বসেই মৎস্য শিকার করছেন শিকারীরা। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলেন লাক মিয়া। তিনি বলেন দীর্ঘদিন ধরেই বদরুল কাদের (২৩) গংরা চাচাতো ভাই মোঃ রুমালীর ছেলে আনোয়ার সাদাতদের সাথে জমি জমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। গত সপ্তাহে তাদের বাড়িতে দরবার সালিশ হয়েছে। সেই দরবারে আনোয়ার সাদাতের পক্ষে কথা বলায় বদরুল কাদেরের সাথে বাক বিতন্ডা হয়েছে। যে কারণেই শত্রুতা করে পুকুরে গ্যাস জাতীয় বিষ ঢালে। যা প্রত্যক্ষ্য করেন তার আপন ছোট ভাই লাক মিয়া। বিষক্রিয়া হয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ মরে গেছে বলে দাবি করছেন। যদিও মরে যাওয়া মাছের তেমন কোনো ছবি কিংবা ভিডিও দেখাতে পারেনি কেউ। ছবি তোলার মতো সময় সুযোগ পাননি হক মিয়া। এ সময় মাছ মরে যাওয়া পুকুরে মৎস্য শিকারি ভাড়া দিলেন কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্য একটি পুকুর থেকে কিছু মাছ সংগ্রহ করে এনে ছেড়েছেন। এমন রহস্যময় মৎস্য মরে যাওয়ার পর মামলার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান কবির বলেন, বিষক্রিয়া হলে পুকুরের সব মাছ মারা যাওয়ার কথা। বিভিন্ন সময় পানিতে অতিরিক্ত খাবার প্রয়োগের ফলে আবহাওয়া জনিত কারণে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে অক্সিজেন কমে গিয়ে ভোরের দিকে মাছ মারা যায়। মহেন্দ্রপুরে মাছ মারা যাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানালে আমারা পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দেখবো।
এদিকে ভুক্তভোগী আব্দুল কাদেরের স্ত্রী নূরুন্নাহার গণমাধ্যমকে জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তাানদের নিয়ে নিরীহ জীবন যাপন করছেন। পড়াাশোনা ও চাকরির জনিত কারণে ছেলেরা অন্যত্র অবস্থান করায় স্বামীর বড় ভাই রুমালি ও তার ছেলে আনোয়ার সাদাত জমি জমা নিয়ে বিরোধ চালিয়ে আসছে। সমপ্রতি প্রতিবেশী হক মিয়া দীর্ঘদিনের বিরোধ মিটমাট করে দিবেন বলে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এখন আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি সহ হয়রানি করে আসছে। এরই ফলশ্রুতিতে পুকুরে গ্যাস হয়ে মাছ মরে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি শ্যামগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। এমন ঘটনায় ফেরারি হয়ে ঘুরছেন নেত্রকোনা আবু আব্বাস কলেজের ব্যবসায়ী শাখার চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বদরুল কাদের ও তার পেশাজীবী ভাই রানা মিয়া। এদিকে মাছ মরে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মামলা দেওয়ার বিষয়টি বাড়ছে জানিয়ে পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, মহেন্দ্রপুর গ্রামের বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে মামলা নিয়েছি। পানি পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তদন্ত করে যা সঠিক তাই প্রতিবেদন দেয়া হবে। সেইসাথে তিনি আরো জানান, পাঙ্গাস জাতীয় মাছগুলো কিছুটা বড় হলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। অতিরিক্ত খাবার পরিবেশনেও পুকুরে গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে মাছ মারা যায়। পূর্বধলায় এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে। পানিতে বিষক্রিয়া হয়ে মাছের মৃত্যু হলে পুকুরের সব মাছই মারা যেতো। ঘটনার তিনদিন পর সেই পুকুরেই মৎস্য শিকারের আয়োজন হওয়ার কথা না। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।