রিফাত আহমেদ রাসেল, দুর্গাপুর:
কঠোর পরিশ্রম ও মেধা খাটিয়ে পড়াশোনা করেও এখন পড়াশোনা নিয়েই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন নেত্রকোণার দুর্গাপুরের মেধাবী শিক্ষার্থী মাহাবুব রহমান। উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গোদারিয়া গ্রামের কৃষক আবু সিদ্দিকের ছোট সন্তান।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও নিয়মিত কলেজ ফ্রি, রেজিস্ট্রেশন ফি সহ কলেজের সকল পাওনা পরিশোধ করেছেন তিনি। তারপরেও কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে দুই বছর ধরে বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর শিক্ষার্থীর। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন তাদের গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই। বোর্ডের ভুলের কারণেই এই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না।
জানা যায়, ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট নিয়ে ভর্তি হন ঝানজাইল কারিগরি কলেজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কম্পিউটার ট্রেডে ভর্তির পরপরই কিনেছেন সকল বই। ভালো রেজাল্টের আশায় নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি রাতে দিনে পড়াশোনায় কমতে রাখেননি। তবে বছর ঘুরতেই তার এই পড়াশোনা আসছে না কোন কাজে। সহপাঠীরা নিয়মমাফিক বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিলেও গেল দুই বছরেও পরীক্ষায় বসতে পারেননি মাহাবুব।
২০২০ সালে এইচএসসি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রথম বর্ষের পরীক্ষার প্রস্তুতি কালীন ফরম ফিলাপ লিস্টে নাম না আসার বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন এই শিক্ষার্থী। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কেটে যায় এক বছর তার উপর আবার মহামারী করোনার থাবা। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের মতে দ্বৈত ভর্তির কারণে হয়তো এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে প্রাথমিক কিভাবে নিশ্চিত করেন । সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছ থেকে এক বছরের সময়ও চেনেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মাহবুর সহ আরো দুই শিক্ষার্থীর একই সমস্যার কথা জানিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন শাখায় একটি আবেদন করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ লিস্টের তালিকা প্রকাশের পর জানা যায় এবারও তালিকায় নাম আসেনি মাহবুবের। পরপর দুই বছর একই সমস্যা বারবার সৃষ্টি হতে দেখে হতবাক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সহ এলাকাবাসী। বারবার একই সমস্যার কেন পুনরাবৃত্তি হচ্ছে তা নিয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে বোর্ডের সমস্যার কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে এবারও পাশ কাটিয়ে গেছে কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবুল বাশার।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহাবুব রহমান বলেন, গত দুই বছর যাবত আমি কলেজে ভর্তি হয়েছি এখন উনারা দুই বছর যাবত আমাকে ঘুরাছে। আমি সকল টাকা-পয়সার দিয়েও কলেজের কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছিনা। শুধুমাত্র কলেজের গাফিলতির ও দুর্নীতির কারণে আমার এই অবস্থা। তাদের কলেজে থেকেও এখন পর্যন্ত আমার নাম রেজিস্ট্রেশনে আওতাভুক্ত উঠতে পারে নাই। কিছুদিন পরে পরীক্ষা শুরু হবে। এবারের পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ফরম ফিলাপের তালিকা প্রকাশের পর জানতে পারি এবারও আমার নাম আসে নাই। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন বোর্ডে সমস্যার কারণে রেজিস্ট্রেশনে আমার নাম আসছে না এখানে তাদের কোন কিছু করার নাই। আমি তাদের কলেজের ছাত্র তারপরও তারা বলে তাদের কোন কিছু করার নাই। এই সমস্যা কিভাবে সমাধান হবে তাও কোন পথ আমাদের দেখায় না। আমি দুই বছর ধরে কোন পরীক্ষায় দিতে পারিনি। আমার সহপাঠীরা সবাই প্রথম বর্ষে পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষা দিয়ে ফেলবে অথচ আমি এখনো এক জায়গায় পড়ে আছি। আমার জীবন থেকে পরপর দুই বছর নষ্ট হয়ে গেল এর দায়ভার কে নিবে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, গত দুই বছর যাবত আমরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়েও মাহবুবের নাম রেজিস্ট্রেশনে আনতে পারি নাই। কারণে এখন পর্যন্ত একটা পরীক্ষাও দিতে পারে নাই। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে যথাযথ টাকা পয়সা দিচ্ছি। তাদের কাছে অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করছি, নিয়মিত ক্লাস করেও পরপর দুই বছর একই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তাও কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো সমাধানের রাস্তা দেখাতে পারেনি। আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করছি। কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই কিন্তু বারবার এই সমস্যাটা সৃষ্টি হচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে আমাদের নাকি দ্বৈত ভর্তি রয়েছে। যদি দ্বৈত ভর্তি থাকতো তাহলে তো আমরা অন্য কলেজে ভর্তি হয়ে পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত। তাদের দ্বারে দ্বারে আমাদের বারবার যেতে হতো না। আমাদের দাবি এই ঘটনার জন্য সুষ্ঠু একটা তদন্ত হোক এবং মাহাবুর যেন এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে তার ব্যবস্থা হয়।
আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো গাফিলতি সুযোগ নাই, আমার জানামতে আমরা কোন অবহেলা করি নাই বলে ঝানজাইল কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবুল বাশার। তিনি বলেন, আমরা এই সমস্যার সমাধানে যথাযথ চেষ্টা করেছি আরও যদি কোন কিছু করার থাকে অবশ্যই আমরা তা করবো। কিন্তু তারপরও কেনো এবারের ফরম ফিলাপে তার নামটি আসে নাই তা আমাদের সঠিক ভাবে জানা নাই। মাহাবুর ভর্তি হওয়ার পর একদম শেষ সময়ে আমাদের কাছে এসএসসির মার্কশিট জমা দিয়েছেন যথাসময়ে বোর্ডে প্রেরণ করেছি। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে দ্বৈত ভর্তির কারণে তার নাম আসেনি। পরবর্তীতে আমরা বিষয়টি জানিয়ে বোর্ডের একটি আবেদন প্রেরণ করেছি। এ বছর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে আশা ছিলো রেজিস্ট্রেশনে তার নাম আসবে কিন্তু কেন আসে নাই আমার তা জানা নাই। এটা কেন হয় নাই বোর্ড বলতে পারবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব উল আহসান জানান, আমরা বিষয়টি ইতিমধ্যে শুনেছি। এই ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা হবে।