রিফাত আহমেদ রাসেল, দুর্গাপুর:
নেত্রকোনার দুর্গাপুরের বিলুপ্ত প্রজাতির বিপন্ন প্রজাতির সন্ধি কাছিম উদ্ধার করা হয়েছে । সোমবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের মেছুয়া বাজার স্থানীয় এক চা বিক্রেতার কাছ থেকে প্রাণীটিকে উদ্ধার করেন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং সংগঠনের সদস্যরা। পরে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পৌর শহরের বড় একটি জলাশয় প্রাণীটিকে অবমুক্ত করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের পাহাড়ি খরস্রোতা সোমেশ্বরী নদীর পানিতে একদল জেলের জালে ধরা পড়ে কাছিমটি। জেলেদের মাছের খাঁচায় অন্যান্য মাছের সাথে বিক্রি করার উদ্দেশ্যেই পৌর শহরের মাছুয়া বাজারে নিয়ে আসেন তারা। বাজারে আসার পর এখানকার স্থানীয় চা বিক্রেতা শহীদ মিয়ার নজরে আসলে প্রাণীটিকে কিনে নেন তিনি। পরবর্তীতে তাদের হাতবদল হয় আরেক ব্যক্তির হাতে পরে প্রাণীটি। তবে প্রাণীটির বেশ কিছু ছবি তুলে রাখায় রাতে শহিদ মিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাণীর ছবি প্রকাশ করে। এর পরই স্থানীয় বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর সদস্যদের নজরে পড়ে।
ঐদিন রাতেই স্বেচ্ছাসেবকরা শহীদ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে প্রাণীটি উদ্ধারের পরিকল্পনা করেন। আজ দুপুরের পর শহীদ মিয়া ও স্বেচ্ছাসেবকদের চেষ্টায় আবারো উদ্ধার হয় প্রাণীটি। পরে সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং সংগঠনের সদস্যরা শহীদ নিয়ার কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যের সন্ধি কাছিম টিকে কিনে নেন।
পরে সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পৌর শহরের একটি জলাশয়ে বিপন্ন প্রজাতির এই প্রাণীটিকে অবমুক্ত করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এসময় স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়েল সংমা।
প্রাণী ও পরিবেশ কর্মীদের ধারণা করছেন পাহাড়ি কোন ঝর্ণাধারা থেকে তীব্র বৃষ্টি ও স্রোতের কারণে হয় তোভেসে এসে সোমেশ্বরী নদীতে জেলেদের মাছ ধরার জালে ধরা পড়ে কাছিমটি ।
তবে এক সময় এই নদীতেই কাছিম, কচ্ছপ সহ শুশুকের অভয়াশ্রম ছিলো। তবে কালের বিবর্তনে ও নদীর নাব্যতা কমায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাশাপাশি বিলুপ্তি হয়ে গেছে কাছিম, কচ্ছপ সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। যদি নদীতে নিষিদ্ধ বাংলায় ড্রেজার দিয়ে যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ সহ নদীতে বালু খেকোদের দূরত্ব বন্ধ করা যায় তাহলেই নদীতে আবারো জলজ প্রাণী সহ মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করছেন প্রাণী ও পরিবেশ কর্মী।
চা বিক্রেতার শহিদ মিয়া জানান, আমি শখের বশেই মাছ বিক্রেতার কাছ থেকে প্রাণীটিকে কিনে বাড়িতে লালন-পালন করার চিন্তা করি। দোকানে বালতির ভিতর রাখার সময় আমার কাছে এক ব্যক্তি প্রাণীটিকে দেখে খুব জোরাজুরি করেই আমার থেকে নিয়ে যায়। এর আগে আমি প্রাণীটির বেশ কিছু ছবি আমার মোবাইল ফোনে তুলে রেখেছিলাম। রাতে এই ছবিগুলোই আমার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করি। কিছুক্ষণ পরেই স্বেচ্ছাসেবকরা আমার সাথে যোগাযোগ করতে থাকে এবং প্রাণীটি আবারো উদ্ধার করার জন্য অনুরোধ জানান। পরে আজকে সকালে ওই ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবারো প্রাণীটি নিয়ে এসে দুপুরে স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে তুলে দিই। যে দাম দিয়ে কাছিম কিনেছিলাম স্বেচ্ছাসেবকরা যে দামও পরিশোধ করেই প্রাণীটিকে নিয়ে যায়।
সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং সংগঠনের সভাপতি রিফাত আহমেদ রাসেল জানান, আমরা গত রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপন্ন প্রজাতির সন্ধি কাছিমের বিষয়টি জানতে পারি। রাতেই আমরা স্থানীয় চা বিক্রেতা শহীদ মিয়া সাথে যোগাযোগ করে প্রাণীটির উদ্ধারে কাজ শুরু করি আজ বিকেলের পর প্রাণীটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। কাছিম টি এখন অনেক ছোট। এটির ওজন প্রায় আধা কেজির উপরে হবে। প্রাণীটিকে উদ্ধারের পরপরই স্থানীয় চা-বিক্রেতা শহিদ মিয়া কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে পরিশোধ করে সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং সংগঠন প্রাণীটিকে কিনে নেন। যেহেতু তিনি একজন গরিব মানুষ। তিনিও কাছিমকে লালন পালনের জন্য কিনে রেখেছিলেন। তাই এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা এই উদ্যোগটি গ্রহণ করি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব উল আহসান জানান, আজ দুপুরের দিকে সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং সংগঠনের সদস্যরা বিপন্ন একটা সন্ধি কাছিম উদ্ধারের ব্যাপারে আমাদের অবগত করেন। এর পরপরই আমরা স্থানীয় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী কর্মীদের সাথে কথা বলে বড় একটি জলাশয় প্রাণীটিকে অবমুক্তির জন্য নির্দেশনা প্রদান করি। যদিও প্রাণীটিকে নদী থেকে আটক করেছে। বর্তমানে নদীতে তীব্র স্রোত ও অগভীর পানি থাকার কারণেই কাছিমটিকে ও বড় জলাশয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বিকেলের দিকে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রাণীটিকে অবমুক্ত করেন।