এক সময়ের মানুষের পদচারনায় মুখরিত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত উচিৎপুর ট্রলার ঘাট এখন জন সমাগম শূন্য নিস্তব্ধ। চিরচেনা চেহারা পুরোটাই যেনো বদলে গেছে করোনায়। একদিকে হাফ ছেড়ে বেঁচেছে ঘাটের কিনারায় দুর্বা ঘাসগুলো। অন্যদিকে পানিও করছে টলমল। দীর্ঘদিন পর জেলার মদন উপজেলার হাওরাঞ্চলের নৌ ষ্টেশন উচিৎপুর ঘাটে দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। তবে একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ট্রলার চালকরা। ট্রলারে যাত্রী না উঠলেও ঘাট ইজারাদারদের দিতে হয় টাকা।
জানা গেছে, জেলার হাওরাঞ্চলের মদন উপজেলাটির বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বর্ষা মওসুমে পানির ভেতরে থাকে। মাঘান, গোবিন্দ্রশ্রী, গাজিপুর একেবারে পানির মধ্যে। এছাড়াও ফতেপুর তিয়শ্রি সহ বেশ কটির বেশিরভাগ গ্রামই পানিতে। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যেতেও একমাত্র চলাচল নৌকা। গঞ্জে আসলেও নৌকা। যে কারনে উচিৎপুর খেয়া ঘাটটি পরিণত হয় ট্রলার ঘাটে। এটি থেকে জেলার অন্য উপজেলা খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ ও পাশ্ববর্তী জেলা সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন নৌযোগে চলাচল করা যায়। যে কারনে প্রশাসনের রাজস্ব শাখা থেকে ইজারা দেয়া হতো কিন্তু নূন্যতম লাখ টাকায়। পরবর্তীতে জন সমাগম বাড়তে থাকায় পর্যায়ক্রমে রাজস্ব বাড়তে থাকে।
গত ২০১৭ সনে মদন থেকে খালিয়াজুরী পর্যন্ত শুকনো মওসুমের জন্য একটি ডুবন্ত সড়ক হওয়ায় বালই নদীতে নান্দনিক একটি সেতু তৈরী করে সওজ। এরপর থেকে মানুষের ঘুরাঘুরি এবং ফটোসেশনে এলাকাটি দিনে দিনে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের আমেজে রূপান্তর হতে থাকে। তখন থেকে শুরু হয় জেলা সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের ভ্রমণ। আর এই ভ্রমণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নানা ব্যাবসা। গাড়ি পার্কিং থেকে শুরু করে খাবারের হোটেলসহ নানা ধরনের বাণিজ্য। ট্রলার চালকরা শুরু করে দেন পর্যটক বোঝাই। স্থানীয়রা গড়ে তোলেন ব্যবসার নানা ক্ষেত্র। আর এ থেকে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে লাভবান হওয়ায় তখন থেকে স্থানীয় প্রশাসন রাজস্ব বাড়াতে থাকেন। পর্যায়ক্রমে বাড়াতে বাড়াতে এক লাফে গত বছর ২১ লাখ টাকা এবং এবছর ৩২ লাখ টাকায় ঘাট ইজারা হয়। টলার বোঝাই করতে করতে গত বছর করোনা কালেও ট্রলার ডুবিতে একসাথে ১৮ জন পর্যটকের করুণ মৃত্যুও হয়।
ইজারাদার লাহুত মিয়ার পক্ষে ঘাটে টাকা উত্তোলনকারী ইজারাদার মিজানুর রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত বছর থেকে কোন কামাই নেই কিন্তু ঘাটের ইজারা বেড়েই যাচ্ছে। এর আগে ১০, ১২, ১৪ এবং ১৭ থেকে ১৮ লাখ পর্যন্ত। তখন করোনা ছিলো না। এখন একদিকে করোনার লক ডাউন অন্যদিকে রাজস্ব বাড়তি। আমাদের চালকরা রয়েছে খুব কষ্টে।
চালকরা জানায়, ঘাটে এক সময় তিন থেকে সাড়ে তিনশ নৌকা চলতো। প্রতিদিন নৌকায় চালকরা তেল খরচ করে হাজার দেড় হাজার টাকা কামাতে পারতেন। এখন লকডাউনে অধর্শত ট্রলারও নেই। একেবারের পারা যাচ্ছেনা যারা তারাই আসছেন কেবল নৌকা নিয়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা একজন যাত্রীর জন্য বসে থাকতে হয়। এভাবে কোনদিন ঘাটের জমার টাকা ওঠে আবার কোনদিন ওঠেই না। তখন ধার দেনা করে দিতে হচ্ছে। তারা পায়নি লক ডাউনে কোন খ্যাদ্য সহায়তাও।
উচিৎপুর স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমানও বলেন ঘাটে যারা নৌকা নিয়ে আসছে তাদের কেউ পায়নি কোন খাদ্য। প্রশাসন লোক দেকানোর জন্য ফটোসেশনের জন্য কোথাও কোথাও দিচ্ছে আমরা দেখছি। কিন্তু এই যে নৌকা চালকরা বাড়ি বসে থাকবে তাদেরকে তো কিছু দেয়নি।
মদন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ খাদ্য সহায়তার বিষয়ে বলেন, এ পর্যন্ত কাউকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। প্রতিটি মানুষকে খাদ্য বা নগদ অর্থ দিয়ে যাচ্ছি। নৌকার চালক রয়েছে আমার এখানে ৩৬ জন। তারা চায়নি কেউ। কেউ চেয়েছে আমি দিইনি এমনটা পাওয়া যাবে না। সবাই নৌকা চালাচ্ছে। যাদের না চলে তারা চাইলে আমি খাবার পাঠিয়ে দিবো।