নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে এবার আগাম বন্যার আগেই সম্পূর্ন ধান কর্তন হয়েছে। ফলে কৃষকরা ফেলছেন স্বস্থির নিঃশ্বাস। হাওর জুরে বিরাজ করছে বৈশাখের আমেজ। কিশান কৃষাণী আনন্দে পায়ে দুলাচ্ছে ধান। গোলা এবার ভরে ওঠায় হাওরে ফিরেছে প্রাণ। এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে জেলার সমতলের ধান কর্তন।
ধানে উদ্বৃত্ত হাওর অধ্যুষিত জেলা নেত্রকোনা। জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী নিয়ে বিশাল হাওরাঞ্চল। যার একটি মাত্র ফসল এই বুরো ধান। আর এই এক ফসলের উপরই নির্ভরশীল এ এলাকার জনগোষ্ঠী। প্রতি বছর এই ফসল আবাদের শুরু এবং শেষ পর্যন্ত কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকায় থাকেন। আগাম পাহাড়ী বন্যা, বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়া ও শিলাবৃষ্টি সহ নানা প্রতিকূল পরিবেশ অতিক্রম করেই এখানকার কৃষকরা বেঁচে থাকেন। এবছর বন্যার আগেই তাদের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছন।
শিলাবৃষ্টি সহ গরম হাওয়ায় এবছর হাওরের কিছু ধান নষ্ট হয়ে গেলেও বন্যা এবং কালবৈশাখীর আগেই পুরো হাওরের ধান কর্তন সম্পূর্ন শেষ হওয়ায় হাওর জুরে ঘরে ঘরে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কিষাণ কৃষানীদের মনে আনন্দ নিয়ে মাঠে মাঠে শুকাচ্ছেন ধান।
গত ৪ এপ্রিল গরম হাওয়ায় হাওরের প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর ধান ক্ষতিগ্রস্থ হলেও পরবর্তীতে কৃষি বিভাগ লিপিবদ্ধ করে ৭ হাজার ৪শ হেক্টর। এছাড়াও লকডাউন পরিস্থিতিতে শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিলেও শেষ মেষ সরকারের কৃষি প্রণোদনায় হারভেস্টার মেশিনে কৃষকরা কাটিয়ে ওঠেন সেই সঙ্কট।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমি। তারমধ্যে হাওর এলাকায় ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর। চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৪৯৩ মেট্রিকটন।
অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান জানান, শিলাবৃষ্টি ও গরম হাওয়ায় ১৪ হাজার হেক্টর জমি আক্রান্ত হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৭ হাজার ৪শ হেক্টর। ২৪ হাজার ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
জেলায় ১০৪ টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। হাওরের ফসল কাটতে সবগুলো মেশিন কাজে লাগিয়েছিলাম। বন্যার পূর্বাভাস পাওয়ায় যাতে আগে ভাগেই ধানগুলো কর্তন করা যায় সে জন্য সবগুলো মেশিন হাওরের কাজে লাগিয়েছিলাম। এছাড়াও কৃষকরাও নিজ উদ্যোগে অনেকেই সুনামগঞ্জ কিশোরগঞ্জ থেকে মেশিন এনেছেন। মেশিনের পাশাপাশি ২৪ হাজার শ্রমিকও ধান কেটেছে।
যে কারণে আমরা দুর্যোগের আগে হাওরের ফসল তুলতে সফল হয়েছি। কোন ধরনের দুর্যোগে পড়তে হয় নি। এখন আনন্দে ধান শুকানোর কাজ করছেন। ফলে হাওর জুরে এখন ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি, বৈশাখে এখন হেমন্তের বাঁশি বাজছে বলে আমি মনে করি। এছাড়াও জেলার সমতলে পুরোদমে চলছে ধান কর্তন। এটিও আশা করছি ভালোভাবে শেষ হবে।