দেশে যখন ভয়াবহ করোনা থাবা দেয় তখন নেত্রকোনাও এর বাইরে ছিলো না। গত ২০২০ এ করোনা আগমনে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো নেত্রকোনাতেও অনেক আক্রান্ত ও প্রাণহানি ঘটেছে। এমনকি এর আক্রমণ চলছে এখনো পর্যন্ত।
সেই তখন থেকেই করোনার ছোঁবল দেখে জেলার সকল বেসরকারি হাসপাতাল চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এমনকি সরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা দিতে অনেকে তখন তালবাহানা করেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ কঠোর অবস্থান নেয়ায় বাধ্য হয়ে সরকারি হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পরে ডাক্তাররা সেবা দিয়েছেন।
কিন্তু এরপরেও বিভিন্ন সময়ে চেম্বারে চেম্বারে যেখানে মানুষের ভীর লেগে থাকতো সেগুলোতেও ছিলো না কোন ডাক্তার। টাকা নিয়ে ঘুরেও সেবা পায়নিসাধারণ মানুষ।
সমাজের এমন ক্রান্তিলগ্নে তখন এগিয়ে আসেন নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং শাহ সুলতান ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার নজরুল ইসলাম ফকির। তিনি তার চেম্বারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা জায়গায় শুরু করে দিয়েছিলেন চিকিৎসা সেবা। একাধারে চালিয়ে গেছেন একজন যোদ্ধা হয়ে। এমনকি তা চালু রেখেছেন বর্তমান পর্যন্ত। এছাড়াও তিনি নিজ এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদেরকেও করেননি বঞ্চিত।
কদিন পরপর ছোট পরিসরে সদর উপজেলার মদনপুর এলাকায় নিজ ইউনিয়নসহ অন্যান্য এলাকার মানুষদেরকে ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প করে সেবা দিচ্ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বড় পরিসরে এই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করেন মাতা হোসনে আরা সাত্তার ফাউন্ডেশনের নামে।
গতকাল দিনব্যাপী তিনি কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও নেত্রকোনার শাহ সুলতান (রঃ) ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতালের সহযোগিতায় সাড়ে ৯শ জন রোগীকে রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে সেবা দিয়েছেন।
শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মেডিসিন, চক্ষু, গাইনীসহ নানা ধরনের সেবাসহ ঔষধ বিতরণ এমনকি নাস্তা ও করোনা সচেতনতায় মাস্ক বিতরণ করেন সম্পুর্ণ বিনামূল্যে। এগুলো করেই বাদ দেননি। যাদের নানা জটিলতায় অপারেশন প্রয়োজন তাদেরকে অপারেশনের জন্য নিজের ব্যাবস্থায় কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায় নিয়েছেন।
অর্থাৎ সাধারণ মানুষের দৌড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দিয়ে ইতিমধ্যেই তিনি অর্জন করেছেন মানুষের ভালোবাসা।
গরীবের ডাক্তার বলে তাকে অনেকেই চেনেন অত্র এলাকায়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই ক্যাম্পে আরো ছজন ডাক্তার সেবা দিয়েছেন।
তারা হলেন, প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. সুফিয়া খাতুন, ডা. সুলতানা রাজিয়া, সার্জারী জাসিয়া ইসলাম হাফসা, তাহসিন ফিরোজ খান, জায়েদ যুবায়ের খান ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল কাদির।
এদিকে বিনামূল্যে সেবা, ঔষধ, যাওয়ার পথে নাস্তা এবং মাস্কসহ অপারেশনের এমন বিরল সুযোগ পেয়ে সাধারণ দরিদ্র মানুষেরাও অত্যন্ত খুশি হয়ে তাদের আনন্দ ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে জেলা শহরের মাঝে করোনাকাল থেকে শুরু করে চিকিৎসা পেশায় এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় চিকিৎসক নজরুল ইসলামের মতো এমন মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সকল স্তরের মানুষ। তারা মনে করেন সেবা পেশার যথাযথ প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। সেবার ধরন এমনটাই হওয়া উচিৎ বলে মনে করে আরো বলেন, বিভিন্ন এলাকায় এমনটা হলেই সমাজ এবং দেশের মানুষ এই পেশাকে আরও সন্মান জানাবে। চিকিৎসকদের প্রতি ভরসা বাড়বে।