সারাদেশব্যাপী করোনার ছোবল থেকে বাঁচতে যখন লক ডাউন শুরু হয়, তখন থেকেই তরুণদের স্বাস্থ্য সচেতন করতে গড়ে তোলা রানার্স এসোসিয়েশন দৌড়ে যাচ্ছে অদ্যবধি। বিভিন্ন বয়সের অর্ধশতাধিক কিশোর তরুণ যুবা শরীরের সক্ষমতা বাড়াতে দৌড়ে যাচ্ছে নিববধি।
নেত্রকোনা রানার্স এসোসিয়েশন নামে এই সংগঠনের সদস্যরা এখন জেলা ছেড়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা সুসংগঠিত হয়ে বিভিন্ন মানবিক কাজেও অংশ নিচ্ছে। পাশে দাঁড়াচ্ছে অসহায় মানুষের।
নেত্রকোনা শহরের কয়েকজন মিলে প্রথমে এই রাসনাস এসাসিয়েশন গড়ে তোলে। তখন চলছে পুরো লকডাউন। মানুষের চলাচল বন্ধ। এসময় ঘরে বসে বসে অনেকে অনেক কিছুতে আসক্ত হতে থাকে।
তখনই জহিরুল কবীর শাহীন নামের একজন মাল্টিমিডিয়া ব্যবসায়ী ফেইসবুক গ্রুপ তৈরী করে নিজের সাথে প্রতিদিন প্রত্যুষে দৌড়ে শামিল হতে আহ্বান জানান।
এরপর থেকে শুরু হতে থাকে বিভিণœ বয়সের পুরুষদের প্রতিদিন একত্রে হাঁটা। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন এলাকায় ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা হলেই তারা অংশ নেন।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) সিলেটে একটি ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেয়া নেত্রকোনা রানার্স এসোসিয়েশনের সংগঠক জহিরুল কবীর শাহিন জানান, তিনি ২১ কিমি দৌড়ে অংশগ্রহণ করে ৭ম হয়েছেন। ৪০ প্লাস ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন। যদিও আজকের ইভেন্টে ৪০ প্লাস কান ক্যাটাগরি ছিল না। মোট অংশগ্রহণকারী ছিল ৫ শাতাধিক। মোট সময় লেগেছে ১ঘন্টা ৩৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ডস। আজকের পেস প্রতি কি.মি. ৪ মিনিট ৪১ সেকেন্ডস। আর ১০ কি.মি. অংশগ্রহণ করেছিল ৭ শতাধিক। এতে এক ডজন নৌ, বিমান, সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
তিনি বলেন, দৌড় একটি সুস্থ থাকার ঔষধ। যারা এটা গ্রহণ করে তাদের ঔষধ খেতে হয় না। এছাড়া দৌড়ানো একটি সুন্দর বিনোদন ও বটে। দৌড়ে যারা একবার আসক্ত হতে পারে তাদের সারাজীবন ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয় না। দৌড় মানুষকে মাদকাসক্ত থেকে রক্ষা করে। দৌড় মানুষকে সুইসাইড থেকে রক্ষা করে। সবমিলিয়ে দৌড় মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিয়ে থাকে। দৌড় মানুষকে ফিটনেস কি তা শিখিয়ে দেয়। সুতরাং এ ব্যাপারে সরকারের সুদূর প্রসারী চিন্তা করা দরকার। দেশের মানুষকে কিভাবে দৌড়ের দিকে ধাবিত করা যায়।
কিন্তু এই উদ্যোগ নিয়ে আমাদের দেশে কোন রকম ভাবনা নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখের। দেশে ফুটবল, ক্রিকেটসহ নাম না জানা অনেক খেলাধুলা রয়েছে যেগুলিতে সরকারের কোটি কোটি টাকা বাজেট থাকে। অথচ এসব খেলা অল্প সংখ্যক মানুষকে সুস্থ রাখে এবং নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত খেলতে পারে। বিশেষ করে এগুলো বিনোদন দিয়ে থাকে মানুষকে।
কিন্তু দৌড়ে সারাজীবনেই লেগে থাকা যায় এবং নিজেকে সুস্থ রাখা যায়। দৌড় প্রতিযোগিতায় সরকারের নির্দিষ্ট বাজেট দিয়ে দেশের মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারে।
তিনি ফেইসবুকে এক খোলা চিঠিতে এসব লিখে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিষয়টি ভাববার জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দৌড়বিদ প্রতিযোগীতায় কোটি কোটি টাকা বাজেট বাজেট থাকে। সেই হিসাবে বাংলাদেশে এর ১০% দৃশ্যমান দেখা যায় না।
যদিও বর্তমান সময়ে ব্যাক্তি বা সমষ্টিগত উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এমতাবস্থায় যে জেলা বা এরিয়াতে দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে সেগুলোতে সকল দৌড়বিদদের ২ দিন ফ্রীতে থাকা ও স্বল্প খরচে সরকারি বেসরকারী সকল রেস্টহাউজে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলে দেশে নতুন দৌড়বিদ সৃষ্টি হবে।
দেশের মানুষ সুস্থ সুন্দর জীবন পাবে। দেশের চিকিৎসা খাতে ব্যায় কমে আসবে। সুস্থ সুন্দর দেশ গড়ে উঠবে। বিনোদনের দীর্ঘ মেয়াদি মাধ্যম তৈরি হবে।