Saturday, October 12, 2024
মূলপাতানেত্রকোনার সংবাদনেত্রকোনা সদর উপজেলাগত ৬ মাসে ৯৪ টি আত্মহত্যায় ৬১ জন পুরুষ ৩৩ নারী নেত্রকোনায়...

গত ৬ মাসে ৯৪ টি আত্মহত্যায় ৬১ জন পুরুষ ৩৩ নারী নেত্রকোনায় আশংকাজনক হারে ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনা নারীর দ্বিগুণ পুরুষ

নেত্রকোনায় আশংকাজনক হারে বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। নানা বয়সের নারী পুরুষ গলায় ফাঁস টানিয়ে বিষ খেয়ে বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ। শিশু কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত বাদ যাচ্ছে না কেউ। তবে শিশু কিশোরের সংখ্যাই বেশি। এদের মধ্যে রয়েছে স্কুল পড়–য়া থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধ। রশি, ওড়না, অথবা গামছা দিয়েই গলায় ফাঁস নিয়েছেন তারা। জেলায় গত ৬ মাসে (জানুয়ারী-জুন) ৯৪ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এ সকল আত্মহত্যায় নারীর দ্বিগুন পুরুষ। তাদের ৬১ জনই পুরুষ এবং ৩৩ জন নারী। তবে কি কারণে এমন ঘটনা ঘটছে এ নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় পুলিশ প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষ। এছাড়াও গত সাত দিনের ব্যবধানে ৩ থেকে চারজেনের খবর পাওয়া গেছে জেলায়। মঙ্গলবার সকালে দুর্গাপুর উপজেলায় ঘরের আড়ায় এক বালু শ্রমিক আইনাল (২২) গলায় গামছা লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

সোমবার (২৩ আগস্ট) বিকালে নেত্রকোনা শহরের কুড়পাড় ভুইয়া বাড়ি নিবাসী তোফায়েল নামের দত্ত স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়–য়া এক শিক্ষার্থী গামছা দিয়ে নিজ ঘরের আড়ায় গলায় ফাঁস টানিয়ে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে জেলার পুর্বধলা উপজেলার আবুল হাসেম খান (৭০) নামে এক বৃদ্ধ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ওই বৃদ্ধ উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের ধোবারুহী গ্রামে নিজ বাড়িতে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে মৃত্যুবরণ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কিশোর তোফায়েল মাদকের সাথে জড়িত ছিলো। অন্যদিকে পুর্বধরার বৃদ্ধ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে দুঃসহ যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। শুক্রবার (২০ আগস্ট) মোহনগঞ্জ উপজেলার পাবই গ্রামে বাড়ির কাছে আম গাছে ঝুলন্ত আলতু সিদ্দিক (৭৬) নামের একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে নেত্রকোনা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ‘খ’ শাখার এক রোল নম্বরধারী মেহেনাজ তাবাসসুম উষার নামের এক শিক্ষার্থী ওড়ানা দিয়ে ঘরের কুড়োর সাথে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে স্কুল শিক্ষক বাবা মা দেখে নামিয়ে ফেললেও আটদিন হাসপাতালে চিকিৎসায় থেকে অবশেষে মারা যায়।

নেত্রকোনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছরের জানুয়ারি জুন পর্যন্ত ৯৪ জনের মধ্যে ৬১ জন পুরুষ ও ৩৩ জন নারী রয়েছে। এদের মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলে ৭৩ জন এবং বিষপানে ২০ জন ও গায়ে আগুন ধরিয়ে ১ জন মারা যায়। বয়স অনুসারে ১৮ বছরের নীচেই রয়েছে ৩৩ জনের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও ১২ জন নারী। ১৯ থেকে ৩০ বছরের বয়সী ৩৭ জনের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী। ৩১ থেকে ৪৫ বছরের বয়সী ১৫ জনের মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। ৪৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জনের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। ৬০ বছরের উপরে দুজনই পুরুষ।

জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং তারুণ্য সংগঠক হিমু পাঠক আড্ডার প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক আলপনা বেগম বলেন, ৯৪ জনের মধ্যে ৩৩ জনই ১৮ বছরের নীচে। অর্থাৎ শিশু এবং কিশোর। এই বয়সটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় শিশু কিশোরদের জন্য। একে তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তার মধ্যে সুস্থ কোন বিনোদন নেই। হয় শিশুরা মোবাইলে আসক্ত হচ্ছে। নয়তো মাদকে। বয়ঃস্বন্ধিকালীন সময়ে এমনিতেই শিশুদের শারিরীক পরিবর্তনের সাথে মানসিক পরিবর্তন ঘটে। তখন নানা কারনে হতাশাগ্রস্থ হয়। অনেক পরিবার আছে শিশুদের কথা শুনতে চায়না। তারমধ্যে গ্রামেই এই সমস্যা বেশি। শিশুদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করে না বেশির ভাগ বাবা মা ই। তখন তারা মনের কথা বলতে বন্ধু বান্ধব খুঁজে। অথবা মোবাইলের দিকে আসক্ত হয়। এছাড়াও মাদকের ছুবলে চলে যায় অনেক শিশু। সেজন্য বাবা মা বা পরিবারের সকলের প্রয়োজন শিশুদেরকে সময় দেয়া। পাশাপশি তাদের সমস্যাগুলো শুনে সে অনুযায়ী পরামর্শ দেয়া। আমাদের রক্ষণশীল সমাজে এখনো এই বিষয়টিকে এতোটা গুরুত্ব দেয়া হয় না। আবার কিছু কিছু পরিবার অতি আধুনিক হওয়াতেই কিছু বিপত্তি ঘটছে।

সার্বিকভাবে বলা যায় বই থেকে দূরের শিশুরাই বেশিরভাগ এই পথ বেছে নিচ্ছে। পরে বাবা মা দের মধ্যে অনেকেই একমাত্র সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় হচ্ছেন। এই জন্য পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্প উপন্যাস পড়ায় যেমন শিশুদের আগ্রহী করে তুলতে হবে তেমনী সুস্থ বিনোদন এবং সা্কংৃতি চর্চা অতি গুরুত্বপূর্ন। মুলকথা সংস্কৃতি চর্চার কোন বিকল্প নেই। শিশুদের মনোজগতে সুস্থ ধারার বিনোদন অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এর আরেকটি উপাদান খেলাধুলা। শিশুরা আজকাল খেলাধুলা করতেই সুযোগ পায় না। সেটির ব্যাবস্থাও করে দিতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় গড়ে তুলতে হবে খেলাঙ্গণ এবং সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। তবেই যদি ভালোভাবে বেঁচে থাকে এবং মানসিক বিকাশে বেড়ে ওঠে সন্তানরা।

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী জানান, সংখ্যাগুলো খবুই উদ্বেগের। আমরা প্রতিটি মৃত্যুর তদন্তে দেখলাম যে বৃদ্ধের সংখ্যাও কম নয়। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একা থাকেন। এছাড়াও শিশু কিশোরদের বিষয়গুলো অভিভাকরা পরিস্কার করেন না। যে কারণে সঠিক কারণ বের করা যাচ্ছে না। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রেম সংক্রান্ত, আবার মাদক সংক্রান্তও থাকে। কখনো কখনো পরিবারের সাথে রাগ করে এই পথ বেছে নেয়। তবে অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে বলেও জানান তিনি। সময় দিতে হবে তাদের সন্তানদের। সেইসাথে তিনি বলেন বৃদ্ধদেরকেও সময় দেয়াটা শিশুদের মতোই জরুরী।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সর্বশেষ সংবাদ

Recent Comments