Thursday, April 25, 2024
মূলপাতানেত্রকোনার সংবাদবারহাট্টা উপজেলাগৃহকর্মী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামী হলো নৌকার মাঝি

গৃহকর্মী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামী হলো নৌকার মাঝি

নেতকোনায় আলোচিত গৃহকর্মী মারুফা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি জেলার বারহাট্টার উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মুর্শেদ কাঞ্চন ফের পেলেন নৌকার মনোনয়ন। এ নিয়ে জেলা উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন আওয়ামী দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।

সোমবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক সিংধা ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তাকেই করা হয়েছে নৌকার মাঝি। এই তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরপরই নিজ উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলার নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানাচ্ছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। অনেকে গৃহকর্মী মারুফা হত্যার সংবাদের কপি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। পাশাপাশি তার মনোনয়ন বাতিল করে ক্লিন ইমেজের যে কাউকে এ পদে দেওয়ার দাবি তোলেন তারা।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা গণ স্বাক্ষর নিয়ে বিতর্কিত কাঞ্চন চেয়ারম্যানের নৌকার মনোনয়ন বাতিল চেয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বোর্ডের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এর সাথে চেয়ারম্যানের বিগত সময়ের নানা অপকর্মের প্রমাণাদি জমা দেন তারা।

এ ব্যাপারে বারহাট্টা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, উপজেলা থেকে আমরা কাঞ্চন চেয়ারম্যান সহ সাত জনের নাম পাঠিয়েছি। তবে কাঞ্চন চেয়ারম্যান যে, ‘খুনের মামলার আসামি’ এ কথাটি তার নামের পাশে লিখে দেওয়া হয়েছিল। মনোনয়ন বোর্ড কিভাবে তাকে নৌকার মাঝি বানালেন, এটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

উল্লেখ্য গত ২০২০ সালের ৯ মে বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চনের মোহনগঞ্জে বাসার গৃহকর্মী কিশোরী মারুফা আক্তার (১৪) আত্মহত্যা করেছে বলে চেয়ারম্যান নিজেই লাশ নিয়ে হাসপাতালে যান।

এদিকে থানায় খবর না দিয়ে লাশ নিয়ে হাসপাতালে গেলে পুলিশ খবর পেয়ে লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। অন্যদিকে চেয়ারম্যানের ছেলের ঢাকার বাসায় থাকা গৃহকর্মী মারুফার মাকে খবর দেয় পুলিশ। এসময় লাশের গায়ে স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখে এলাকাবাসী ও মারুফার মায়ের সন্দেহ হলে মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠে। পরদিন লাশের ময়নাতদন্ত শেষে চেয়ারম্যানের ভয়ে মারুফার লাশ নিজ বাড়ি বারহাট্টায় না নিয়ে নানার বাড়ি কলমাকান্দায় দাফন করা হয়।

পরবর্তীতে মামলা করতে গেলে মোহনগঞ্জ থানার ওসিকে সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যার কাগজে সই করতে মারুফার মাকে চাপ দেন কাঞ্চন চেয়ারম্যান। পরে ৯৯৯ এ কল করলে ১১ মে জেলার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসীর হস্তক্ষেপে হত্যা মামলা নেন মোহনগঞ্জ থানার সাবেক ওসি আব্দুল আহাদ খান।

রাতেই চেয়ারম্যান কাঞ্চনকে আটক করে পুলিশ। পরদিন ১২ মে কোর্টে সোপর্দ করলে একদিন বাদেই ১৪ মে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যান অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কাঞ্চন।

এর আগেও সরকারি গাছ কাটা, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সিল ও সই নকল করাসহ নানা অনিয়মের কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে গত ১৯/১১/২০১৯ তারিখে লিখিত চিঠির মাধ্যমে সাময়িক বরখাস্থ হন এই চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে অদৃশ্য শক্তির বলয়ে ১৫ দিনের মধ্যে পুনরায় বহাল তবিয়তে দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করে ফেলেন।

এদিকে বারবার বিভিন্ন ঘটনায় ছাড় পাওয়া চেয়ারম্যানের গৃহকর্মী হত্যার ঘটনাটি এলাকাবাসীর বিবেককে নারা দিলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন করেছে। প্রতিবাদ করেছে সাধারণ মানুষও। এসময় এক প্রতিবাদকারীকে ডিজিটাল আইনে ৯ মাস জেলও খাটতে হয়েছে চেয়ারম্যানের অদৃশ্য ছায়ার বলে।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সর্বশেষ সংবাদ

Recent Comments